Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

নিউ ইয়র্কে থাকার একটা মস্ত অসুবিধা হল চেনা-অচেনা অনেককেই এয়ারপোর্টে গিয়ে রাইড দিতে হয়। আর শুধু রিসিভ করা নয়, মাঝে মধ্যে এইসব ভিসিটারদের দু-দশ দিনের জন্যে নিজেদের অ্যাপার্টমেণ্টে থাকতে দিতে হয়। আমি প্রায় ছ’বছর ম্যানহ্যাটানে আছি। এরমধ্যে এমন একট মাসও যায় নি, যে-মাসে আমাকে এয়ারপোর্টে ছুটতে হয় নি। সত্যিকথা বলতে কি, না চাইলেও এসব ঝুটঝামেলা এড়ানো খুব মুশকিল। তবে ছ’বছর এই আনপেড পাবলিক সার্ভিস দিয়ে একটা জিনিস কিন্তু হয়েছে। আমি এখন চোখ বুজে ইউ এন বিল্ডিং-এর গাইডেড ট্যুরটা দিতে পারি। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর কত নম্বর এলিভেটর ক’তলা অবধি যায়, সার্কেল লাইন ট্যুর ঠিক কটার সময় শুরু হয়, গুগেনহাইম মিউজিয়ামে ঢুকতে কত ডলার লাগে – সব আমার ঠোঁটস্থ।
“বিগ ডিল,” প্রমথ আমাকে প্রায়ই খোঁচা দেয় এই নিয়ে। “তোর এই বিদ্যেগুলো হচ্ছে ইউজলেস। ফালতু পাবলিক সার্ভিস না দিয়ে যদি পিৎসা ডেলিভারির কাজও নিতিস, তাহলে মাসান্তে অন্তত একস্ট্রা টু-পাইস ব্যাঙ্কে জমা পড়ত।”
প্রমথ সমাদ্দার আমার বহুদিনের বন্ধু, বালিগঞ্জে এক পাড়ায় দুজনে বড় হয়েছি। কেমিস্ট্রিতে এন ওয়াউ ইউ-তে পিএইচ ডি করছে। থাকে দোতলায়, আমার নীচের অ্যাপার্টমেন্টে। প্রমথ হল আমার ফ্রেন্ড ফিলসফার এন্ড গাইড। তবে গাইড না বলে গার্জেন বলাই ভালো। সেটা হবার নাকি ওর হক আছে। লতায় পাতায় আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ও আবিষ্কার করেছে। আসলে ও নাকি আমার মামা।

অনাহূত অতিথি নিয়ে আমি কমপ্লেন করছি বলে এই নয় যে ইন্টারেস্টিং লোক কখনো আসেন নি। বছর দেড়েক আগে শৈলেন সাঁপুই বলে এক ভদ্রলোক কিছুদিনের জন্যে আমার কাছে এসে ছিলেন। রাইস রিসার্চ ইনস্টিট্যুট-এ কি জানি কি করতেন। ওঁর একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল কপাল দেখে পাস্ট ফিউচার সবকিছু বলে দেওয়া। আমার দিকে তাকিয়ে ধাঁ করে বলে দিলেন যে, সাত বছর বয়েসে আমার জলে ডুবে মরার কথা, নেহাৎ বৃহস্পতির জোরে বেঁচে গেছি। সাত কিনা মনে নেই, কিন্তু ছেলেবেলায় চৌবাচ্চায় পড়ে গিয়ে সত্যিই প্রায় মরমর হয়েছিলাম। প্রমথও সাঁপুইয়ের ভবিষ্যৎবাণীতে খুব ইমপ্রেসড হয়েছিল। ওর বাবার মৃত্যুর খবর উনি এক্কেবারে ঠিকঠাক বলে দিয়েছিলেন।
তবে শৈলেন সাঁপুইয়ের মত ইন্টারেস্টিং লোক কদাচিৎ আসেন। ভদ্রলোক দিন পনেরো ছিলেন আমার কাছে। তার মধ্যেই ওঁর এত চেলা-চামুন্ডা জুটে গেল যে, রাইস ইনস্টিট্যুটের কাজ ছেড়ে উনি একেবারে ফুল-টাইম অ্যাস্ট্রলজার হয়ে বসলেন। শুনেছি এখন কুইন্সে একটা বাড়ি ভাড়া করে আছেন। ভাগ্য গণনা করেন আর গ্রহদশা ঘোচাবার জন্যে তাবিজ, গ্রহরত্ন, ইত্যাদি নানান জিনিস বিক্রি করেন।
আর একবার বম্বে থেকে এক পেশাদার ন্যাজিশিয়ান এসেছিলেন ‘ওয়ার্ল্ড ম্যাজিক কনফারেন্স’-এ যোগ দিতে। আমার ছোটমামার পরিচিত। প্রমথ তাঁকে আড়ালে ‘মিস্টার ইন্দ্রজাল’ ডাকতো। মিস্টার ইন্দ্রজাল দুর্দান্ত ম্যাজিক দেখাতেন, কিন্তু ফাঁকে ফাঁকে নানান রকমের ডেঞ্জারাস কমেন্ট করতেন। একদিন আমার অ্যাপার্টমেন্টে ম্যাজিকের আসর বসেছিল। আকাশে হাত বাড়িয়ে মিস্টার ইন্দ্রজাল নিজের নাম সই করা পাসপোর্ট সাইজের ছবি কোত্থেকে যে বের করছিলেন – ভগবান জানেন! আর সেগুলো এক-একটা করে দর্শকের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ বললেন, “জানেন, হোলিম্যান আর ম্যাজিশিয়ানের তফাৎ কি?”
সবাই চুপ।
মিস্টার ইন্দ্রজাল তখন নিজেই উত্তরটা দিলন। “একজন হল অনেস্ট, আর একজন ঠকবাজ। আমি যেটা দেখাচ্ছি – সেটা হল পিওর ম্যাজিক, শ্রেফ হাত সাফাইয়ের খেলা। আর আমি সেটা স্বীকার করি। কিন্তু আমাদের গুরু-অবতাররা এটাকে বলেন বিভূতি। তাহলে অনেস্ট কে?”
প্রফেসর আনন্দ প্রভাকর সেখানে ছিলেন – এক বিভূতি-দেখানো সাধুভাবার অন্ধ-ভক্ত। তিনি মিস্টার ইন্দ্রজালকে এই মারেন কি সেই মারেন! যাচ্ছেতাই কাণ্ড! অনেক কষ্টে সবাইকে শেষে ঠাণ্ডা করা গিয়েছিল।

প্রমথ সেবার আমায় ধরে প্রচণ্ড জ্ঞান দিয়েছিল। “এরপর তুই পার্সোনালি কাউকে না চিনলে বাড়িতে থাকতে দিবি না। তোর গেস্টদের বিহেভিয়ারের জন্যে পাবলিক তোর ওপর কি রকম ক্ষেপেছে – সেটা জানিস!”
আমিও নাকে খত দিয়েছিলাম। আর না, অচেনা আর কাউকে বাড়িতে রাখব না। কিন্তু ম্যান প্রোপোজেস এন্ড গড ডিসপোজেস। দেশ থেকে পাড়ার বন্ধু রনুর চিঠি যে, ওর এক বিশেষ পরিচিত মিস্টার সেন আমেরিকাতে এক মাসের জন্যে আসছেন, আমি যেন তাঁকে আমার কাছে রাখি। তারপর ছেলেবেলায় আমরা কত বন্ধু ছিলাম, আশাকরি আমেরিকাতে গিয়ে পুরনো বন্ধুকে ভুলে যাই নি – সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে নানান কথা। কতবড় বদমাশ!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
Pages ( 1 of 17 ): 1 23 ... 17পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *