অবুঝপনা থৈ থৈ অভিমান আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে থাকে রোজ নামচার স্বরলিপি,
তবুও অলিখিত বিধানে যাপনের
সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা,
মনের আকাশ মেঘলা বড়ো,
বাইরের আকাশটা ঝকঝকে , পেঁজা তুলোর মত শুভ্রর মেঘের ভেলা,
দূর দৃষ্টি সীমায় ঝাঁক বেঁধে সাদা বকেরা ডানা মেলে স্বচ্ছন্দ বিহারে,সুদূর আকাশের বুকে শঙ্খচিল মুক্ত সুখে উত্তর থেকে দক্ষিণে টহলদারিতে,বেশ লাগছে দেখে,
সতেরোর দুরন্ত যৌবন বড্ড অভিমানী,
কোথায় আছে আমার উদাসী বাউলিয়া সুজন?
কতদিন শোনা হয়নি তার মরমীয়া বাউলিয়া গান!
কতদিন! কতদিন সেই চেনা সুরের মধুর ধ্বনি কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি।
যার গানে ঝরে পড়তো অমিয় সুধা,
পাখিরা কান পেতে শুনতো,শিউলিরা সুবাস ছড়িয়ে ঝরে পড়তো শিশির ভেজা ঘাসগালিচায়।
শরতের সোনালী রোদ মিষ্টি হেসে উঠোনে হামাগুড়ি দেয় ,
কুসুম বাগে কদম কেয়ার রাশি, শিউলি তলায় আলপনা এঁকেছে অজস্র শিউলি ফুলে |
বুকের ভাঁজে লেপ্টে আছে
সতেরোর উচ্ছলতা,
কার যেন সোহাগী স্পর্শ মাখা চিরকুটে লেখা-‘ ভালোবাসি,ভালোবাসি’-
মেঘলা মনের চাতালে একচিলতে সোনা রোদ্দুর ঝলকে ওঠে থৈ থৈ অভিমানের দেয়ালটা টপকে একমুঠো স্মৃতির আঁচে।
নৈমিত্তিক যাপনের সিঁড়ি ভেঙ্গে চলার একঘেয়েমির ল্যাবেলটা খুলে কখন কখন মনটা অভিমানের মেঘগুলোকে দুহাতে ঠেলে উঁকি দেয়,
বাতাসের ডানায় ভাসে আগমনীর সুর!
দূর- বহুদূরে– ঢাকের মধুর ঝঙ্কার!
মায়ের আসার লগন এলো ধরার বুকে,
তাইতো,চারদিকে সাজ সাজ রব,
নদীপারে সাদা কাশের চামর দুলছে,
দীঘির বুকে পদ্মের মেলা,
শাপলা শালুকের মনভোলানো রূপ,সবকিছু যেন মাকে বরণ করে নিতেই উন্মুখ।
এতকিছু আয়োজনের ফাঁকে সপ্তদশীর অভিমানী চোখদুটো চঞ্চল কারো খোঁজে,
ইথারে বেয়ে আসে পদধ্বনি ,কে জানে কার!
ভাবনাগুলোকে একপাশে ঠেলে প্রতিদিনের মতোই জীবনবৃত্তের চেনাগন্ডীতে যাপনের সিঁড়িতে পা রেখে চলতে থাকি ,ভাবতে থাকি,ডুবতে থাকি–
হৃদয়ের গহিন থেকে গহিনে হৃদকন্দরের গোপন ছায়াময় গুহাপথে,মন্ত্রমুগ্ধের মতোই কান পেতে শুনি সেই চির চেনা উদাসী বাউলিয়া সুর!
কানের ভেতর দিয়ে মর্মে পৌঁছে অনুরণিত হয় ,
অভিমানী সতেরো মুখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় ,কানের কাছে কে যেন ফিসফিস করে,কেমন আছো মালবিকা?
বুকের মাঝে বসন্তের ছোঁয়া!
ফাগুন আবীর রাঙা মুখে শরমের লালিমা ,
একসময়ে,চেতন জাগে,চমক ভাঙ্গতেই চোখের সাথে মনের ঘোরটাও ভাঙে।
শিশিরে সিক্ত শিউলি দুহাতের মুঠোয় তুলে অঞ্জলি দেই মাকেই মনে করে- ‘যা দেবী সর্বভূতেষু ‘-
তাক ধিনা ধিন ঢাকের শব্দে বাতাসে ভাসে আগমনীর সুর,
আমি আঁচল ভরে শিউলি তুলতে থাকি ,
আমার থৈ থৈ করা অভিমানী মনের মেঘ সরে গিয়ে রোদ্দুর হাসে–