পরপুরুষ
মৃন্ময়ী :–(সাধুবাবার সামনে গৃহদেবতার ভোগের প্রসাদের থালাটা নামিয়ে রেখে প্রণাম করে মুখ তুলে তাকাতেই বিস্ময়ে চমকে ওঠে কাঁপতে থাকে,ফেলে আসা অতীতের অতিচেনা একটি মুখের আদল!) কে! একি আপনি–তুমি? এতোদিন পরে মনে পড়লো তাহলে নিজের গ্রামের কথা?
সাধুবাবা :–(হতচকিত ,সন্ত্রস্ত চোখে আশপাশে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলেন)চুপ করো মৃন্ময়ী, কিন্তু,তোমার এমন বৈধব্য বেশ কেন?
মৃন্ময়ী :–( সীমাহীন দুঃখের ধারা আঁচলে মুছতে মুছতে রুদ্ধ কন্ঠে বলে) তুমি যে কতো নিষ্ঠুর !ভুলে গেলে,ফুলশয্যার রাতেই আমাকে ফেলে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হবার কথা? বারোটি বছর অপেক্ষা করে কেটেছে,কি অপরাধ ছিলো আমার বলতে পারো? আমার জীবনটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে তোমার বিবেকে বাঁধলো না? গাঁয়ের বৌ-ঝিদের স্বামী ছেড়ে চলে গেলে কতো গঞ্জনা সইতে হয় তা জানতেনা?
পঞ্চায়েতের বিধানে বারো বছর অপেক্ষার পরেও যখন ফিরে আসেনা ,তখন ,বৈধব্যকেই স্বীকার করে নিতে হলো ।এখন ,আমার একটাই পরিচয়,তোমার বিধবা স্ত্রী আমি।কেন এসেছো আজ? এখানে আজ তূমি সকলের চোখে মৃত,চলে যাও তুমি—-
সাধুবাবা:— একটিবারের জন্য শুধু তোমাকে দেখতেই ফিরে আসা,আমার অপরাধের শেষ নেই মৃন্ময়ী,জানি,আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধী,তবু,পারলে আমাকে ক্ষমা করো—আমি চলে যাচ্ছি–
মৃন্ময়ী :–(হাজার হলেও গাঁয়ের বধূ,ভরদুপুরে সাধুবাবার জন্য নিয়ে আসা ঠাকুরের ভোগ ফেলে ক্ষুধার্ত মানুষটি চিরতরে চলে যাচ্ছে দেখে দুঃসহ বেদনার মাঝেও আকুল হয় তার চিরন্তন নারীহৃদয়)ওকি! প্রসাদ টুকু ফেলে যেতে নেই,ওটুকু খেয়ে তারপরে–নাহলে যে ঘোর অকল্যাণ
হবে–
সাধুবাবা :–(অবাক বিস্ময়ে তার ফেলে যাওয়া অতীতকে দেখেন,অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়ে থালাটা টেনে খেয়ে নেন সবটুকু প্রসাদ ।অমৃতের স্বাদ অনুভব করেন)ভোগের রান্না কি তুমি করেছো মৃন্ময়ী?বহুবছর এমন অমৃতের আস্বাদ পাইনি–
মৃন্ময়ী :-(ঝরঝর করে অশ্রু গড়ায়,নীরবে থালাটা তুলে মৃদু সুরে বলে)আর কখনো এখানে এসোনা,কেউ দেখার আগেই চলে যাও—
সাধুবাবা:–(সূচীবিদ্ধ বেদনায় আর্তকন্ঠে বলতে যান)আমাকে তুমি চলে যেতে বলছো ?আমি যে তোমার স্বামী,তোমার কাছেই ফিরে এসেছিলাম মৃন্ময়ী!
মৃন্ময়ী :–(দু’হাতে কানে চাপা দিয়ে পাগলের মতো বলে উঠে))না,না,এ হয়না,আমার কেউ নেই ,একজন পর- পুরুষের কাছ থেকে এসব কথা শোনাও পাপ!আমি যে বিধবা—-