Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দাড়িংবাড়ির রহস্যময়ী || Sankar Brahma

দাড়িংবাড়ির রহস্যময়ী || Sankar Brahma

হাওড়া স্টেশনের মেঝেতে কাপড়, চাদর কিংবা কাগজ বিছিয়ে নীরবে ঘুমের দেশে অনেক যাত্রীরা , ট্রেন চার ঘন্টা লেট, আমরা ক’জন যাত্রী জেগে আছি, ঘুম নেই চোখে।
ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল ১১-৫৫ মিনিটে
সে ভাবেই প্রস্তুত হয়ে রাত দশটায় এসেছিলাম স্টেশনে, এসে শুনি দু’ঘন্টা ট্রেন লেট, সেই দুঃসংবাদ মেনে নিয়ে, মনে মনে অপেক্ষার শুরু হয়। একঘন্টা যেতে না যেতেই আবার ঘোষণা হলো, ট্রেন ছাড়বে ৩-৫৫ মিনিটে, আমদের যে ট্রেনটায় (হাওড়া চেন্নাই মেল) যাওয়ার কথা ছিল, সেই ট্রেনটাই নাকি চেন্নাই থেকে ছেড়ে হাওড়া আসার পথে বিশাখাপত্তনে এক্সিডেন্ট করছে,লোকে বলাবলি করছিল, শুনলাম। সেটা এখনও হাওড়ায় ফিরে আসেনি। সেই ট্রেনটা হাওড়ায় ফিরে এলে তারপর আমাদের নিয়ে সেই ট্রেনটাই আবার ছাড়ার কথা হাওড়া থেকে। জানি না কী হবে শেষপর্যন্ত। কী আর করা যাবে? কখন আসবে ট্রেন, বিনিদ্র রাত অপেক্ষায় থাকি তার?
শেষপর্যন্ত ট্রেন বাতিল হবে কিনা তাও জানা নেই।
ট্রেন হাওড়ায় এলো রাত তিনটায়। ২৩ নং প্লাটফর্মে দিয়েছে ট্রেনটা। সেখান থেকেই ছাড়বে সেটা ৩-৫৫ মিনিটে। তিনটায় ট্রেন হাওড়ায় পৌঁছেছে, ৩ – ৩০ মিনিটে ২৩ নম্বর প্লাট ফর্মে ট্রেন দিয়েছে। আমরা আছি ৭ নং- ওল্ড প্লাট ফর্মে, ২৩ নম্বরে এখন যেতে হবে আমাদের নিউ প্লাটফর্মে। এখন এখান থেকে হেঁটে যেতেই ১৫-২০ মিনিট লাগবে। ট্রেন ছাড়বে ৩-৫৫ তে।
ঘুম ঘুম চোখে এলোমেলো পা ফেলে সেদিকেই হাঁটছি। কপালে দুর্ভোগ থাকলে, কী আর করা?
ট্রেন ঠিক ৩-৫৫ মিনিটেই ছাড়ল। ট্রেনে উঠে, মালপত্র রেখে গুছিয়ে রেখে, বিস্কুট আর সন্দেশ খেয়ে, জল পান করে শুয়ে পড়লাম। আধো ঘুম আধো জাগরণে কাটল, দেখতে সুন্দরী অচেনা এক তরুণীর সঙ্গে স্বপ্নে কাটল, তার হাত ধরে দাড়িংবাড়ির টিলায় টিলায় ঘুরে দেখলাম, নিবিড় শালের বন, খাঁড়া নেমে গেছে, টিলার গা বেয়ে নীচের দিকে। আঁকা বাঁকা বাঁক ঘুরে অনেক দূর চলে গেলাম তার হাত ধরে মোহগ্রস্তের মতো এক ঘোরে। তরুণীর মুখটা কেমন ছিল দেখতে? মনে করতে পারলাম না। স্বপ্নটা দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেল। সকালের উজ্জ্বল রোদে ভরে গেল বাইরে সবুজের প্রান্তর। সবুজ মাঠে রোদের আলো ঝলমল করছিল। দেখতে দেখতে দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে ট্রেন ভদ্রকে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালো। তার আগেই ঘুম থেকে উঠে গিয়ে, বাথরুমে প্রাত্যহিক কর্ম সেরে এসেছিলাম। ভদ্রকে আমার সকালের টিফিন (কেক,কলা, ডিম সিদ্ধ, ম্যাঙ্গো জুস দিয়ে) সারলাম।
১১-৪৫ মিনিটে মহানদী পেরোলাম। যেখানে হীরাকুঁদ বাধ আছে। কী বিশাল নদী, এপার থেকে ওপার দেখা যায় না,প্রায় সমুদ্রের মতো দেখতে, শুধু সমুদ্রের মতো ঢেউ নেই তাতে।
দেখত দেখতে কটক স্টেশন চলে এলো। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালো ট্রেন। স্টেশনে নেমে বড় মাটির ভাড়ে চমৎকার স্বাদের কফি খেলাম, মাত্র ১৫ টাকা করে ভাড়।
তারপর ট্রেন আবার চলতে শুরু করলো উড়িষ্যার রাজধানী ভূবনেশ্বরের উদ্দেশ্যে।
ভূবনেশ্বর পৌঁছে সেখানে ট্রেন দশ-পনেরো মিনিট থামলো। তারপরে আবার ট্রেন চলতে শুরু করলো। ১-৪০ মিনিটে এসে থামলো খুরদা রোড স্টেশনে। সেখানেও থেমে দাঁড়িয়ে থাকলো দশ-পনেরো মিনিট। দু-চার জন যাত্রী উঠলো-নামলো। আবার ট্রেন টলতে শুরু করলো।
তারপর এমন ধীরগতিতে চলতে শুরু করলো সামনে সিগন্যাল না পেয়ে যে মোট
এগারো ঘন্টা লেটে এসে ট্রেন পৌঁছালো ব্রহ্মপুর।
এটা দাড়িংবাড়িতে অবস্থিত। হাওড়া চেন্নাই মেলে দাড়িংবাড়ি বেড়াতে এসেছি। ট্রেন এগারো ঘন্টা লেট থাকর কারণ, যেখানে সকাল আটটায় পৌছাবার কথাছিল, পৌঁছেছি রাত নটায়। এসে সামনে সুন্দর একটা হোটেল দেখতে পেয়ে সেখানে এসে উঠলাম। রুম নাম্বার তেরো।এখানে খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। ভাবলাম লাগেজটা রুমে রেখে, বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসব। দরজায় লক করে বেরোলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ব্যর্থ মনে আবার ঘরে ফিরে এসে দেখলাম, দরজা খোলা। দেখে আমি তো অবাক।
ভাবলাল, তাহলে কি দরজায়, লক করব ভেবে, ভুল করে, লক না করেই বেরিয়ে গেছি?
ঘরে ঢুকে আমি বিস্ময়ে আরও হতবাক। এক তরুণী টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে বলল, আসুন খেয়ে নিন। ট্রেনে তো কিছুই পেটে পড়েনি।
আমি হেসে বললাম, সত্যিই তাই।
খুব ক্ষিদে পেয়েছিল। বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে খেতে বসলাম। ভাবলাম, হোটেলের কোন কাজের মেয়ে হবে তরুণী। তাই আর কথা না বড়িয়ে উদরপূর্তির কাজে মগ্ন হয়ে গেলাম।
ভাত, ঘনকরে মুসুর ডাল, আর আলুপোস্ত।
সামান্য এই খাবার তখন আমার কাছে অমৃত স্বাদের মনে হচ্ছিল। তরুণী তখন ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া সেরে, থালা বাতি নীচে নামিয়ে রেখে, বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। হাত মুখ টাওয়েল দিয়ে মুছে। একটা সিগ্রেট ধরিয়ে বসে, তৃপ্তি করে ভরা পেটে কয়েকটা সুখ টান দিয়ে, সিগ্রেট এস্ট্রেতে গুঁজে দিয়ে, জামা কাপড় চেঞ্জ করে, রুম ভেতর থেকে লক করে, বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, টের পাইনি।
ঘুম ভাঙল সকাল আটটায়। দেখলাম রুম খোলা। দরজা দিয়ে সকালের আলো এসে ঘরে ঢুকছে। নীচে নামিয়ে রাখা গতকাল রাতের খাবার থালা বাটি নেই। রুম খোলা দেখে ভাবলাম, ডুব্লিকেট চাবী নিশ্চয়ই, হোটেল-অলার কাছে আছে, না হলে রুম আমি লক করে দেওয়ার পরও কী ভাবে খুলে থালা-বাটি নিয়ে গেল ওরা?
যাই হোক। এখানে থেকে আজ আমি ‘লাভারট পয়েন্ট’ দেখতে যাব। সেখানে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণার জল এসে, নেচে নেচে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে য়ায় অবিরত। অপূর্ব দৃশ্য। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
তাই দেখতে যাব বলে আর দেরী না করে, বাথরুমের প্রাত্যহিক কাজ-কর্ম সম্পন্ন করে, আমার লাগেজ গুছিয়ে, নিজেকে দ্রুত প্রস্তুত করে নিলাম। বেরিয়ে একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যেতে হবে।
নীচে কাউন্টারে এসে আমার পেমেন্ট করতে গিয়ে জানলাম, রাতে ওরা আমাকে কোন খাবার পাঠায়নি। তাহলে খাবার পাঠাল কে আমায়? আর ওই তরুণীই বা কে?
একপলক দেখলেও, তরুণীর মুখটা আমার চোখের লেন্সে ধরা ছিল নিখুঁত ভাবে।
হোটেলে আর কথা না বাড়িয়ে, আমি বিমূঢ় একটা চিন্তা নিয়ে, হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে, একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে ‘লাভারট পয়েন্ট’ এসে পোঁছালাম। সেখানে এসে দেখলাম, একটা পাথরের উপর বসে সেই তরুণী, অন্য মনস্কভাবে জলের ভিতর পা দু’টি ডুবিয়ে দোলাচ্ছে। পা দু’টি দেখে আমার হাড় হিম হয়ে গেল। পা দু’টির গোড়ালি সামনের দিকে, আর আঙুলগুলি গোড়ালির দিকে। ঠিক সেই মুহূর্তে তরুণী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসল। চোখের ইশারায় তার পাশে গিয়ে বসার ইঙ্গিত করল। আমিও মন্ত্র মুগ্ধের মতো মোহগ্রস্ত্র হয়ে পড়ে, তার পাশে গিয়ে বিমূঢ়ভাবে বসলাম।
একটু পরে সেই তরুণী জলে পড়ে গিয়ে স্রোতের তোড়ে, পাথরে আঘাত খেতে সামনের দিকে ভেসে যেতে লাগল। আমিও তাকে বাঁচাতে গিয়ে জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে পাথরে আঘাত খেতে খেতে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। কতক্ষণ এভাবে আমি ভাসতে ভাসতে এগোচ্ছিলাম, জানি না। স্থানীয় একজন কাঠুরিয়া আমাকে পাহাড়ের একটা খাঁচে আঁটকে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেছিল যখন, তখন আমার কোন জ্ঞান ছিল না। আমার জ্ঞান ফিরলে, আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, তরুণীটির কি হল? সে কথা শুনে, সে অবাক হয়ে আমার কাছে জানতে চাইল, কোন তরুণী?
আমাকে ছাড়া সে আর কোন তরুণীকে স্রোতে ভেসে যেতে কিংবা পাহাড়ের খাঁচে আটকে থাকতে দেখেনি। তার কথা শুনে আমিও কম অবাক হয়নি।
তরুণীটি কে? কয়েক মূহূর্ত আমায় দেখা দিয়ে, কেন সে আমার জীবন থেকে কোথায় হারিয়ে গেল চিরতরে। আজও আমি এই রহস্যের কোন সমাধান করতে পারিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *