অবশেষে আলো
উৎকন্ঠায় বাড়ীর সব্বাই খুব খুব চিন্তাগ্ৰস্ত! আসলে বাড়ীর ছেলে দুটো অনীশ আর প্রীতিশ কর্মসূত্রে উত্তর কাশীর এক বেসরকারী কোম্পানির কোয়ার্টারে থাকে। এমনিতে দিনগুলো স্রোতসিনীর মতন কুলুকুলু ধারায় বয়ে চলে। কিন্তু আকষ্মিক দুর্ঘটনায় তারা দুভাই একটি নালার ভেতরে আটকে পড়েছে।ফলে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ওদের বাবা নোটন চৌধুরী খুউব ভাবনাগ্ৰস্ত। স্ত্রী সরণীকে বললেন, কিরকম দুর্দশা বলো তো? এখন ওরা কিভাবে উদ্ধার পাবে?
-আমারও সেই ভাবনা উথালপাথাল ব্যস্ততায়।
এখন প্রতিটা দিন আমাদের কাছে অভিশাপ। ব্যাকুলতায় বসে থাকতে হবে।
মনের আকুলি বিকুলি দশা।ছটপটানি ক্রমবর্ধমান।এমন নাচার প্রতিকূলতায় আগে কোনদিন পড়ে নি। নোটনবাবু ওই কোম্পানির বড়কর্তাকে ফোনে বললেন, আমার দুই ছেলে আপনার অফিসের বিশ্বস্ত শ্রমিক অনীশ আর প্রীতিশ চৌধুরী নালার মধ্যে অবরুদ্ধ। ওদের উদ্ধারের জন্য কি কি ব্যবস্থা নিলেন?
ম্যানেজার কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকলেন। তারপর নিম্ন স্বরে জানালেন, আমরা স্যার সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি। ওদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে আমাদের তীক্ষ্ম নজর আছে।
তাতেও সন্তুষ্ট নন নোটন চৌধুরী। তিনি খানিকটা প্রতিবাদের স্বরে বলে উঠলেন, ওই নালার ভেতরে দীর্ঘদিন থাকার ফলে জীবনের বিষম ক্ষতি ঘটে যেতে পারে। এ ব্যাপারটা কি ভেবে দেখেছেন?
-হ্যাঁ স্যার। আমাদের অগার মেশিন ব্যর্থ হয়েছে নালায় ছিদ্র করার ব্যাপারে। আমরা তাও হাল ছেড়ে দিই নি।
-এবার তালে কি ব্যবস্থা নেবেন?
-আমরা Rat Mining Hole সিস্টেমে এবার চেষ্টা করবো স্যার। দেখা যাক, সাফল্য এবার ঝলমলিয়ে হেসে উঠবে কিনা!
কয়েকদিন বাদে শুভ সংবাদটি নোটন চৌধুরীর পরিবারে এসে পৌঁছুলো। স্বাভাবিকভাবে দম্পতির ঠোঁটে হাসি ঝিলিক মেরে ওঠে।
Rat Hole Mining পদ্ধতিতে জয়-জয়কার বরমাল্য টেকনিসিয়ানদের গলায় এসে পড়ে। অর্থাৎ অনেকের সাথে অনীশ আর প্রীতিশ অন্ধকারের গুহা ছেড়ে আবার আলোর পৃথিবীতে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
নোটন চৌধুরী ফোনে ম্যানেজারকে অকুণ্ঠ প্রশংসা জানিয়ে বলেন, আপনাদের অকৃত্রিম সহযোগিতার ফলে শেষ পর্যন্ত আনন্দের লহরী আমাদের সংসারে কুলুকুলু ধারায় বয়ে চলেছে।
আবারো অভিনন্দনের বন্যায় তাদেরকে ভাসিয়ে দিয়ে এক অসীম তৃপ্তির আস্বাদনে নোটনবাবু দুই ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে উত্তর কাশী রওনা হলেন।