Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বলাই বাহুল্য || Tarapada Roy

বলাই বাহুল্য || Tarapada Roy

কানাই এবং বলাই দু’জন সমবয়সি যুবক, পরস্পর বন্ধু এবং প্রতিযোগী। যেমন সাধারণত হয়ে থাকে আর কী।

সমবয়সি বন্ধু হলেও দু’জনের মধ্যে প্রায় কোনও বিষয়েই মিল নেই। কানাই ধনী, বলাই গরিব। কানাই উচ্চশিক্ষিত, বলাইয়ের লেখাপড়া তেমন নয়। কানাই দেখতে ভাল, লম্বা, ফর্সা। বলাই মোটেই দেখতে ভাল নয়, মোটা, বেঁটে, গায়ের রঙ কালো।

তবে বলাইয়ের সঙ্গে একটা ব্যাপারে কানাই পিছিয়ে আছে। ব্যাপারটা প্রেমঘটিত, বলাই একজন সফল প্রেমিক, তার একজন সুন্দরী তরুণী প্রেমিকা আছে, কিন্তু কানাই এ লাইনে বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি।

অবশেষে যা ঘটার তাই ঘটল। বলাই একদিন বন্ধু কানাইয়ের সঙ্গে তার প্রেমিকার আলাপ করিয়ে দিল। সেই আলাপই কাল হল।

অতঃপর বলাই বাহুল্য।

সবাই জানেন এ গল্পটা। এটি একজন অসামান্য লেখকের বিখ্যাত গল্প। বনফুল লিখেছিলেন গল্পটা, সেও প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে। আমি শুধু একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য রকম করে লিখলাম। গল্পটা হাতের কাছে নেই, সুতরাং এত কাল পরে স্মৃতি থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে হয়তো কিছুটা উলটোপালটা হয়ে গেল।

সে যা হোক, এই গল্পটির কিন্তু অন্য একটা দিক আছে। মনে রাখতে হবে গল্পটার নাম, ‘বলাই বাহুল্য,’ গল্পের লেখক বনফুল অর্থাৎ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, শুধু বলাইচাঁদই পারেন নিজের বাহুল্য ঘোষণা করতে।

ইতিহাসে গল্প আছে, আরব খলিফাদের যুগে খলিফার সৈন্যদল আলেকজান্দ্রিয়া দখল করে আলেকজান্দ্রিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীন গ্রন্থাগারটি ধ্বংস করতে যায়, সেখান থেকে দূত গিয়েছিল খলিফার কাছে গ্রন্থাগারটি যাতে পুড়িয়ে না ফেলা হয় এই অনুরোধ নিয়ে। কিন্তু খলিফা সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এই বলে যে গ্রন্থাগারের বইগুলো যদি কোরান বিরোধী হয় সেগুলো পোড়াতেই হবে; আর যদি কোরানসম্মত হয় তা হলে সেগুলো রাখার প্রয়োজন নেই, সেগুলো বাহুল্য মাত্র, পুড়িয়ে ফেললে কিছুই এসে যায় না।

সম্ভবত এটা নিতান্ত একটা গল্প, একটা গোলমেলে গল্প। তবে সেই প্রাচীন গ্রন্থাগার সৈন্যেরা ধ্বংস করেছিল, এটা ঐতিহাসিক সত্য। এ রকম অন্ধতা, ধর্মীয় অন্ধতা, সাংস্কৃতিক অন্ধতা, এই এতকাল পরে এই আজকের যুগেও যে টিকে আছে, সে তো আমরা মর্মে মর্মে জানি।

হালকা ভাবে আরম্ভ করেছিলাম কিন্তু কেমন যেন থমথমে হয়ে গেল রচনাটা। আমি আবার আমার নিজের এলাকায় প্রত্যাবর্তন করছি। আবার বাহুল্যের গল্প বলি। বাড়িতেও বাগান ছিল। ভদ্রলোক নিজের বাগানের পরিচর্যা নিজেই করতেন। কিন্তু তাঁর প্রতিবেশীরা তাঁকে বড় অত্যাচার করত, কেউ কোদাল ধার নিয়ে ফেরত দিতে ভুলে যেত, কেউ খুরপি ধার নিয়ে দিনের পর দিন রেখে দিত, ভদ্রলোকের বাগানের কাজে খুব অসুবিধে হত।

সেবার বর্ষার পরে এই ভদ্রলোকের বাগানে খুব লম্বা লম্বা ঘাস হয়েছে সেগুলো কেটে সমান করতে হবে। তিনি বাজারে গেলেন ঘাস-কাটা কল কিনতে। দোকানে গিয়ে তিনটে ঘাসকাটা কল অর্ডার দিলেন।

দোকানদার অবাক। বহুদিন হল কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবসা তাঁর, জীবনে কোনও দিন কাউকে এক সঙ্গে তিনটে ঘাসকাটা কল কিনতে দেখেননি। কৌতূহল নিবৃত্ত করতে না পেরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার, আপনার কি তিনটে আলাদা আলাদা জায়গায় তিনটে বাড়ি আছে?’

স্যার শুষ্ক কণ্ঠে বললেন, ‘আমার বাড়ি একটাই। একটা কলেই আমার হয়ে যাবে। বাকি দুটো বাহুল্য মাত্র, আমার দু’পাশের দুই প্রতিবেশীর জন্যে। তারা ধার নিলে আমার যাতে অসুবিধে না হয় সেই জন্যে।

বাহুল্যের অন্য রকম একটা গল্প জানি। ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে দল বেঁধে এসেছে। পাত্র-পাত্রী এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবী সব।

কপালে চন্দনের ফোঁটা নেই, টোপর নেই, ফুলের মালা নেই, কনের পরনে বেনারসি দূরের কথা শাড়িই নেই। প্যান্ট-শার্ট, শালোয়ার-কামিজ। এদের মধ্যে কে যে বর আর কে যে কনে বোঝাই দায়।

সামনে একটি ধোপদুরস্ত, সুদর্শন যুবককে দেখে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বললেন ‘আপনিই কি বর?’ ছেলেটি ম্লান হেসে বলল, ‘না আমি বর নই। আমি সেমিফাইনালে বিদায় নিয়েছি। আমি এখন বাহুল্যমাত্র।’

সর্বশেষে অন্য এক বলাইয়ের গল্প।

এই বলাইয়ের প্রেম ছিল মালতীর সঙ্গে। বহুদিন প্রেম চলার পর একটা বিপত্তি ঘটল। বলাইয়ের মুখের ভাষাতেই বলা যাক, ‘মালতীকে একদিন আমার কাকার কথা বলেছিলাম।’

খাঁটি ব্যাচেলার, মধ্য চল্লিশ, সুপুরুষ, অত্যন্ত বিত্তবান আমার কাকা। বালিগঞ্জে বাড়ি, দুটো গাড়ি, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। কাকা মারা গেলে সেসব টাকা আমিই পাব।’

এ পর্যন্ত শুনে, সবাই বলল, ‘তাতে কী হল?’

বলাই দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘কী আর হবে? বলাই বাহুল্য। মালতী এখন আমার কাকিমা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *