Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হতবাক || Sankar Brahma

হতবাক || Sankar Brahma

হতবাক

ফরমাইশি একটা ভূতের গল্প লিখতে হবে বলে লেখার টেবিলে বসেছি সবে। এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠল। এই সময় কেউ এলে খুব রাগ হয় আমার। ভীষণ বিরক্ত লাগে। বিরক্তি সহকারে উঠলাম। বাড়িতে কেউ নেই। আমাকে বাড়ির পাহারায় রেখে সকলেই গেছে একটা বিয়ে বাড়ির অনুষ্টানে। আমার জন্য ফ্রিজে বিরিয়ানী ও চিলিচিকেন করে রেখে গেছে,রাতে গরম করে নিতে হবে। ওরা সকলে ফিরবে কাল সকালে। দরজা খুলেই বিমূঢ় বিস্ময়ে হতবাক আমি।

দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর আমার পুরনো প্রেমিকা তনয়া দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। যার জন্য আমি একসময় পাগল হয়ে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম তাকে না পেলে জীবন ব্যর্থ আমার। তা’কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না, এমনও প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সে’সময়। জোর করে ওর মা বাবা হঠাৎ একদিন ওর বিয়ে দিয়ে দেয় এক স্কুল মাষ্টারের সঙ্গে। আমি তখন কাঠ বেকার। কোন কিছু করার উপায় ছিল না আমার। টিউশনি করে নিজের হাত খরচ চালাতাম। তখন আমার পক্ষে তনয়াকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। বিয়ের পরও কিছুদিন চিঠিপত্রে যোগাযোগ ছিল ওর সঙ্গে। তখনও পপুলার ভাবে মোবাইল বের হয়নি বাজারে এতো ।
একদিন একটা চিঠিতে ইনিয়ে বিনিয়ে কি সব লিখেছিলাম মনে নেই আজ আর। তবে তা’তে দু’টো লাইন লিখেছিলাম মনে আছে আজও।
লাইন দু’টো ছিল –
“খুব বেশী দুঃখ পেলে চলে এসো আমার কাছে
তোমার জন্য বুকের মধ্যে এখনও আমার জায়গা আছে।”
সেই চিঠি লেখা খামখানা পড়েছিল ওর বরের হাতে। তারপর থেকেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সম্পর্কের ইতি টানে তনয়া। প্রায় ত্রিশ বছর আগেকার কথা এ’সব।
তারপর এতবছর পর পুনরায় তার দেখা পেয়ে মনটা বিগলিত হয়ে উঠল বইকী! কিন্তু এ কী চেহারা হয়েছে তনয়ার।
চুলগুলো সাদা শনের নুড়ি যেন , অনেকগুলো দাঁত পড়ে গিয়ে ,গাল দু’টো চুপসে ভিতরে ঢুকে বসে গেছে। কুৎসিৎ কদাকার দেখতে লাগছিল তাকে। এর জন্যই আমি একসময় পাগল হয়েছিলাম, ভেবে অবাক হলাম। তবুও পুরণো প্রেমিকা বলে কথা।
অনেক যত্নে আপ্যায়ণ করে ঘরে এনে বসালাম তাকে।
আমার জন্য রাখা ফ্রিজের বিরিয়ানী চিলিচিকেন বের করে এনে, মাইক্রো ওভেনে গরম করে তাকে খেতে দিলাম। তারপর ফ্রিজ থেকে আমার জন্য রাখা দই মিষ্টি বের করে দিলাম। তৃপ্তি করে সে খাওয়ার পর, তাকে এনে বিছানায় বসালাম।
তারপর প্রতিশোধ নেওয়ার মতোন করে আমার অতৃপ্ত বাসানার পরিতৃপ্তির জন্য, তাকে বিছানায় ফেলে অপর্যাপ্ত আদর করলাম। তাতে সে মোটেই কোন আপত্তি করল না। বরং সে তারিয়ে তারিয়ে তা উপভোগ করল সবটা।
যেন সে খুব খুশি হয়ে আরও ঘন্টাখানেক থাকার পর চলে গেল। যাওযার সময় আমি তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বললাম, আবার এসো একদিন। সে মুচকি হেসে কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেল।

পরদিন সকালে অবনী (তনয়ার পিসতুতো দাদা) ফোন করে জানাল, তনয়া কাল মারা গেছে, হার্ট অ্যাটাকে। অবনী আমার বন্ধু, সেই সূত্রেই তনয়ার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল।
তনয়া ওর মামাতো বোন। আলাপের কিছুদিন পরেই আমরা পরস্পরের প্রেমে পড়ে যাই। বছরখানেক প্রেম চলার পর তনয়ার বাড়ি থেকে সর জানতে পেরে আচমকা তার বিয়ে দিয়ে দেয়।
আমি অবনীর কাছে জানতে চাই, কবে, কখন ঘটনাটা ঘটল? অবনী বলল,কাল সন্ধ্যা সাতটায়। আমি তার কথা শুনে হতবাক হয়ে যাই ! তা কি করে সম্ভব? সেই সময়টাতেই তো তনয়া আমার কাছে এসেছিল কাল। আমি অবনীকে আর কিছু বলতে পারলাম না। আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *