বধূবরণ
দীপন চক্রবর্তী ওরফে লাল্টু হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে বিয়ে করে সোজা বাড়িতে উপস্থিত। ছেলে বিয়ে করে বৌ এনেছে, দীপনের মা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
তবে অবাক হবার কথা,যে ছেলে বিয়ে করবে না।এই বিয়ে নিয়ে মা কত অনুনয় করেছেন।
বিয়ে কর দীপন,তোর বাবাতো নেই এবার আমি চোখ বুঝলে কি হবে !দীপন বলত কেন’গো আমার দিদি আছে’তো!
বিয়ে হয়ে গেলে ভাইকে দেখে না! তাছাড়া আমি গর্ভমেন্ট অফিসে চাকরি করি। অসুস্থ হলে সোজা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাব।
মা তখন জোরে ছেলেকে চিমটি কেটে দিতেন।
এই নিয়ে দিনের পর দিন মা ও ছেলের বচসা চলত।
মা বৌমা বরণ করবে কি,অঝরে কেঁদে যাচ্ছেন! আনন্দাশ্রু ঝরছে।
সব নিয়ম করে আলতা দুধে পা ডুবিয়ে ,দুধ উতলানো,ফ্রিজে রাখা ফলুই মাছ ধরে ঘরে বৌ গৃহপ্রবেশ হলো।ঠাণ্ডা মাছ ধরতে দেওয়াতে সবাই হাসাহাসি শুরু করে।
খবর পেয়ে বড় ননদ ও হাজির হন।
ননদ বলল কি’রে ভাই বিয়ে করবি , দিদিকে তো বলতে পারতিস!
সন্ধ্যার পর আর আজকে বৌয়ের মুখ দেখিস না।যা দরকার ফোনে কথা বলে নিস।
বৌ বলল কেন গো ,কোনো কারণ আছে!
কটকটি ননদ কটকট করে বলে তুমিতো ছোট নও,বেশতো ডাগর ডোগর চেহারা, কালরাত্রি জানো না! একটা রাত অপেক্ষা করো,কাল থেকে সব সময় বরকে পাবে। নতুন বৌ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
শাশুড়ি মা জিজ্ঞেস করেন
“তোমার নাম কি”?
আর কি নাম ধরে ডাকব! বৌমা বলে ফতেমা মন্ডল। দীপন তখন ঈশারা করে বৌকে।বৌ মাথা তুলে বলে কি বলছ! দীপন মাকে বলে মা আমাকে তুমি লাল্টু বলে ডাকোতো,আর আমার বৌকে তুমি তমা বলে ডেকো। মা বৌয়ের পদবী শুনে চমকে যায়।দীপন আমরা’তো ব্যানার্জী, তুই মন্ডল বিয়ে করলি। বাবা আমাদের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত নিচু জাতের মেয়ে আনলি! বৌমা তুমি আমার ঠাকুর ঘরে ঢুকো’না। দীপন বলে ,এই এতদিন বিয়ে নিয়ে পীড়াপীড়ি করছিলে,এখন কি সব বলছ মা! বৌমা তুমি সিঁদুর লাগাও’নি কেন? দীপন বলে মা ,ওর সিঁদুরর অ্যালার্জি আছে ,তাই লিপস্টিক দিয়ে পরেছে। ননদ বলে কেন গো তুমি কি অনেক আগে থেকেই সিঁদুর পরছ! সবার কথা শুনে ফতেমা হতভম্ব। দীপন বলে মা ,কাল থেকে আমি নতুন ফ্ল্যাটে থাকব। তোমাকে বৌ দেখানোর ছিল,ব্যাস তোমার অপছন্দ যখন, আমরা আর থাকব না।ও গর্ভমেন্ট অফিসে চাকরি করে। তারপর মা ও ছেলের অনেক কান্নাকাটি হলো।মা তুমি আমার বৌকে যা বললে তা *যায় না ফেরানো। এতদিন’তো বলেছিলে লাল্টু একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে কর।কখনো তো বলোনি ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য জাতের মেয়ে ঘরে তুলব না। একবার তীর বেড়িয়ে গেলে মা ,ফেরানো যায় না। মা ও ছেলের মান অভিমানের পর মিলমিশ হয়ে যায়। কালরাত্রি বলে শাশুড়ি বৌমা একসাথে শুয়েছিল।ভোর রাতে শাশুড়ি দেখে বৌ মাটিতে আসন পেতে মাথা ঢেকে বিরবির করে কিছু বলছে।তখন পাশের মসজিদ থেকে আল্লাহ আকবর শোনা যাচ্ছিল। বৌকে বলে কি করছ,এসে শুয়ে পড়ো। ওদিকে একটু ঘুমাবো,ওই আল্লাহ আকবর শুরু হলো। এদের জ্বালায় আর পারি না।দিনে কত বার যে….! বৌ বলে মা এই ভাবে বলবেন না। আপনাদের’তো “বারো মাসে তেরো পার্বণ” লেগে আছে। ওই শুনুন খঞ্জনি বাজিয়ে “হরে কৃষ্ণ” করতে করতে কে যাচ্ছেন! শাশুড়ি বলে হরিবাবা যাচ্ছেন।জোরে জোরেই “হরে কৃষ্ণ “বলে ওঠেন। শাশুড়ি মনে কেমন খটকা লাগে, আচ্ছা মা তোমার বাবা কি করেন?
মা কি করেন?
বাড়িতে কে আছেন?
নানারকম প্রশ্ন শুরু করেন।
বাবা ও মায়ের নাম কি?
মা রীনা মন্ডল,
বাবা-শাহাবুদ্দিন মন্ডল
আচ্ছা তোমার বাবার নাম’টা মুসলমানদের মতো কেন! বৌমা বলে আমরা মুসলিম বলে। মা আচমকা শুনে অজ্ঞান। বৌমার চিৎকারে ঘরে ছেলে ,ননদ ছুটে আসে। মায়ের জ্ঞান ফিরতেই ছেলে ও বৌমাকে তাড়িয়ে দেন।
দীপন ও ফতেমা অন্যত্র বেশ সুখে ঘর করছে। হঠাৎ একদিন খবর পায় দিদির কিডনি দুটো প্রায় নষ্ট।ছোট বাচ্চা। শাশুড়ি প্রলাপ বকে ঘরে অনাচার ঢুকেছিল,তাই আমার মেয়ের এই দশা।লাল্টু জামাইবাবুর সাথে কিডনী খোঁজার চেষ্টা করছে।বাচ্চাটা ফতেমার কাছে রাখা আছে। অফিস ও কামাই করতে হচ্ছে।ওই দিদি ভায়ের বৌ’কে জাত তুলে অনেক কথা শুনিয়েছিল।আজ তার বাচ্চাকে ভাইয়ের বৌ দেখছে। ফতেমা দীপনকে বলে আমার কিডনী দিদিকে ডোনেট করব ভাবছি । দুজনে একটা নিয়ে বাঁচব। বৌ প্রায় জোড় করেই কিডনী দান করে ননদকে। শাশুড়ি এখন দেখাশোনা করে নাতনীর।জামাই শাশুড়িকে বলে মা একটা কিডনী পাওয়া গেছে। অপারেশনের পর দিদি ও ফতেমা দুজনে সুস্থ। মেয়ের বাড়িতে ফতেমাকে দেখে শাশুড়ি প্রায় তেড়ে মারতে গেছেন। তারপর শোনেন বৌমা কিডনী ডোনেট করেছে বলে তার মেয়ে সুস্থ আছে। শাশুড়ি অনুতাপে কেঁদে ফেলেন। নিজের ভুল বুঝতে পারেন। শাশুড়ি আজ মহাখুশি’তে পুনর্বার বৌমা বরণে ব্যস্ত।আর শাশুড়ি বিড়বিড় করে বলে সবার রক্ত এক।
“মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান”