প্রথম পর্ব
কুরুক্ষেত্র ষুদ্ধ শেষ, যুধিষ্ঠির এখন হস্তিনাপুরের রাজা! উভয় দলের অনেক আত্মীয় স্বজন নামী অনামী সৈন্য এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, পাণ্ডবদের সুশাসনে প্রজারা খুশি হলেও, যুধিষ্ঠিরের মনে শান্তি নেই। পাণ্ডবরা মুখে যতই ধর্মযুদ্ধ করেছি বলে দাবী করুক তবু এই যুদ্ধে পাণ্ডবরাও অনেক ছল চাতুরী গ্রহন করেছে, তাই সবাই ভুলে গেলেও যুধিষ্ঠির কি করে ভুলে যান?
কৌরবরা সরাসরি অধর্মের দিকে হলেও পিতামহ ভীষ্ম গুরু দ্রোণাচার্য জেষ্ঠ ভ্রাতা কর্ণ ( এই সত্যতা কর্ণের মৃত্যুর পর জেনেছেন পাণ্ডবরা) জয়দ্রত দূঃশাষণ দৃর্যোধন এদের মৃত্যুতে পাণ্ডবরাও ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। যুধিষ্ঠির মনে মনে অস্থির হয়ে উঠছেন এই পাপ থেকে কিভাবে তারা মুক্ত হবেন? ঠিক সেই সময় হস্তিনাপুর এলেন শ্রীকৃষ্ণ, যুধিষ্ঠিরের মুখে তার চিত্তচাঞ্চল্যের কথা শুনলেন। তারপর যুধিষ্ঠিরকে পরামর্শ দিলেন অশ্বমেধ যজ্ঞ করার জন্য।
শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ এক বাক্যে মেনে নিল পাণ্ডবরা, শুরু হলো অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রস্তুতি। বিশ্বজয়ের পর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো অশ্বমেধ যজ্ঞ। যুধিষ্ঠির তার ভান্ডার খুলে দিলেন সকলের জন্য, দু হাতে তিনি দান করলেন শেষ কপর্দক পর্যন্ত। সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগলো। এমন যজ্ঞ বহুকাল কেউ দেখেনি আর দান? সেতো ইতিহাস! কিন্তু যুধিষ্ঠিরের মনে পর্যাপ্ত শান্তি কোথায়? কোথায় যেন এখনও কাঁটা বিঁধে আছে মনের গভীরে! তিনি যজ্ঞ প্রাঙ্গণে বসে ভাবছিলেন সবাই খুশি হলেও তিনি শান্তি পাচ্ছেন না কেন? তবে কি তিনি এখনও সম্পূর্ণ রূপে পাপ মুক্ত হতে পারেন নি? তাহলে কি সেই পাপ? যুধিষ্ঠির চিন্তা করতে লাগলেন •••
পবিত্র যজ্ঞ মঞ্চে বসে আছেন চিন্তাকুল যুধিষ্ঠির। ঠিক তখনই সেখানে প্রবেশ করলো এক অদ্ভুত দর্শন নকুল , তার শরীরের কিছু অংশ সুবর্ণ নির্মিত হলেও অবশিষ্ট অংশ স্বাভাবিক। যজ্ঞভূমিতে কিছুক্ষণ গড়াগড়ি দিয়ে সে উঠে বসলো তারপর নিজের দেহের দিকে তাকিয়ে বললো। মহারাজ যুধিষ্ঠির আমার অপরাধ নেবেন না। অপ্রিয় হলেও সত্য সর্বদাই সত্য। আপনার এই বহু চর্চিত অশ্বমেধ যজ্ঞ এবং দান ধ্যানের কথা শুনে আমি এখানে এসেছিলাম এই আশায় যে মহারাজ জনকের যজ্ঞভূমির ধূলিতে আমার অর্ধেক সুবর্ণ নির্মিত শরীরের বাকি অংশ যাতে এই যজ্ঞভূমির ধূলিতে সুবর্ণ নির্মিত হয়। কিন্তু সেটা না হওয়ায় বুঝলাম আপনার যজ্ঞ সম্পূর্ণ সফল হয় নি।
যুধিষ্ঠির বললেন, হে বিজ্ঞ নকুল আপনার কথার সাথে আমিও একমত। যজ্ঞ শেষে যে মানসিক শান্তি পাওয়ার কথা তা আমি পাচ্ছি না, কিন্তু কেন সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আপনার জানা থাকলে আমাকে বলুন আমার অপরাধ কোথায়?
নকুল হেসে বললেন, মহারাজ আপনি সত্যিই একজন নির্বোধ মানুষ যার প্রধান পরামর্শদাতা এবং অকৃত্রিম বন্ধু স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করছেন তার ভুল কোথায়? আপনি আপনার ভুলের গোপন রহস্য জানতে হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকেই জিজ্ঞেস করুন।
এই কথা বলে নকুল অত্যন্ত হতাশ হয়ে যজ্ঞভূমি পরিত্যাগ করলেন।