Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঢাকঢাক-গুড়গুড় || Tarapada Roy

ঢাকঢাক-গুড়গুড় || Tarapada Roy

ঢাকঢাক-গুড়গুড়

সব ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

আর ঢাকঢাক-গুড়গুড় করে লাভ নেই। কিছুই আর গোপন নেই, সবাই সব-কিছু জেনে ফেলেছে।

সবাই জেনে গেছে যে, আমার এই সব তাৎক্ষণিক রচনা সবই টুকে লেখা। লিখেছি, যা পড়েছি।

সবাই জেনে গেছে যে, আমার সব রসিকতাই শোনা কথা। লিখেছি, যা শুনেছি।

এসবই মেনে নিচ্ছি।

তবে একটা কথা আমি জানাই, এই ঢাকঢাক-গুড়গুড় শব্দটির মানে আমি মোটেই জানি না। তদুপরি এই শব্দটির অর্থ জানার প্রয়াসে আমাকে কেউ সাহায্য করেনি, সাহায্য করতে পারেনি।

ঢাকঢাক-গুড়গুড় শব্দটি সবাই জানে, এর মানেটা পরিষ্কার না জানলেও। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার অভিধানে শব্দটি নেই; ব্যাকরণ-বইয়ের বাগ্বিধি, বিশিষ্টার্থক বাক্য, প্রবাদবাক্য ইত্যাদি পরিচ্ছেদেও ঢাকঢাক সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।

অতঃপর আমার মতো মূর্খের এ ব্যাপারে আর বাড়াবাড়ি করা উচিত হবে না, বরং আমার যা কাজ তাই করি। ঢাকঢাক-গুড়গুড়—ঢাক আর গুড়ের প্রসঙ্গে দুটো কথা বলি। দুটো কথা, অর্থাৎ ঢাকের বিষয়ে দুটো এবং গুড়ের বিষয়ে দুটো। যথারীতি, ঢাক এবং গুড়-বিষয়ক যে দু’-চার পঙ্‌ক্তিই আমি লিখি না কেন পুরোটাই ধার করা।

প্রথম ঋণ, গৌড়রত্ন স্বর্গবাসী শিবরাম চক্রবর্তীর কাছে।

শিবরাম চক্রবর্তী ছিলেন আক্ষরিক অর্থে মালদার লোক। অনেক ভাল ভাল গল্প তিনি লিখে গেছেন শুধু তাই নয়, অনেক ভাল ভাল উপদেশও দিয়ে গেছেন।

ঢাক-বিষয়ক শিব্রামীয় উপদেশটি স্মরণ করা যাক।

মনে করুন, আপনি কোথাও বেড়াতে গেছেন। উঠেছেন কোনও বন্ধু বা নিকট-আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু যে-কোনও কারণেই হোক, তাঁদের আতিথেয়তা আপনার ভাল লাগেনি; কেমন কাটাকাটা ছেঁড়াছেঁড়া কোথায় যেন আন্তরিকতার অভাব।

এবার আপনি কী করবেন? আপনি একজন ভদ্রলোক, এসব কথা তো মুখ ফুটে বলতে পারবেন না। কিন্তু এদের একটু শিক্ষা দেওয়াও তো উচিত।

সুতরাং, শিবরাম চক্রবর্তীর পরামর্শ, ফিরে আসার আগের দিন কাছাকাছি একটা বাজারে যান, সেখানে একটা খেলনা বাদ্যযন্ত্রের দোকান থেকে একটা ঢাক কিনে ফেলুন; অবশ্য সে-বাড়িতে যদি একাধিক বাচ্চা থাকে, প্রতিটি বাচ্চার জন্যে একটা করে ঢাক কিনবেন। ভয়ের কিছু নেই, খেলনা ঢাকের দাম বেশি নয়। এরপর আসার দিন রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে বাচ্চাদের একটা করে ঢাক উপহার দিন। খুব বেশি আগে দেবেন না; কারণ ঢাক বাজিয়ে ওরা আপনার কান ঝালাপালা, জীবন অতিষ্ঠ করে দেবে।

সে ঝামেলা আপনি চলে আসার পরে ওদের মা-বাবা বুঝবে, হাড়ে হাড়ে, কানের পর্দায়-পর্দায় টের পাবে।

আর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যদি ওদের গুরুজনেরা ঢাকগুলো কেড়ে নেয়, তা হলেও অব্যাহতি নেই। যে বাঘ একবার মানুষের রক্তের স্বাদ পেয়েছে, যে শিশু একবার ঢাক বাজানোর আনন্দ উপভোগ করেছে, তাদের কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত করা অসম্ভব। ঢাক কেড়ে নিলে শিশুটি থালা-বাসন বাজাবে, ক্যানেস্তারা পেটাবে।

ঢাকের দ্বিতীয় গল্পটি এত বিপজ্জনক নয়, বরং বিপদমোচনের কাহিনী।

এন্টালির জগন্নাথবাবু নাগাল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে একটা সুদৃশ্য ঢাক কিনে এনেছেন। ঢাকটি শুধুই যে সুদৃশ্য তাই নয়, মন্ত্রপূত ঢাক এটা। এই ঢাকের বাদ্যি কানে গেলে হিংস্র জন্তুরা ভয়ে পালিয়ে যায়। কাছে ঘেঁষতে সাহস পায় না।

ঢাক নিয়ে কলকাতায় এন্টালির বাড়িতে ফিরে এসে জগন্নাথবাবু সারারাত ঢাক বাজাতে লাগলেন, পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সকলের ঘুম শিকেয় উঠল। দিনের পর দিন এই রকম চলতে লাগল। কিন্তু কেউ জগন্নাথবাবুকে ঢাক বাজানো থেকে নিবৃত্ত করতে পারল না। অগত্যা পাগলের ডাক্তার ডেকে আনা হল। ডাক্তারবাবুকে জগন্নাথ স্পষ্টই বললেন, হিংস্র জন্তুরা যাতে কাছে না আসে সেই জন্যে তিনি এই ঢাক বাজান। ডাক্তারবাবু অবাক হয়ে বললেন, ‘কিন্তু খাস কলকাতায় বুনো জানোয়ার কোথায়? খুব কাছে হলেও সেই পঞ্চাশ মাইল দূরে সুন্দরবনে বাঘ।’ একগাল হেসে জগন্নাথ বললেন, ‘তা হলে ঢাকের তেজ ভেবে দেখুন। কোনও বাঘ পঞ্চাশ মাইলের এপাশে আসতে সাহস পাচ্ছে না।’

ঢাক বিষয়ে এই বস্তাপচা গল্পটি বলার পরে, এবার গুড়ের ব্যাপারটা একট মহৎ পর্যায়ে নিয়ে যাই।

পুরনো গল্প। কখনও হজরত মহম্মদের নামে, কখনও খ্রিস্টের নামে, কখনও গান্ধীর নামে এ গল্প চলেছে।

এক গরিব মানুষ তার ছেলেকে নিয়ে মহাত্মার কাছে এসেছে। অভিযোগ, তার ছেলেটি খুব গুড় খেতে চায়। কিন্তু সে গরিব, ছেলের গুড় কেনার পয়সা পাবে কোথায়? একথা শুনে মহাত্মা বললেন, ‘সামনের সপ্তাহে এসো। ছেলেকে সঙ্গে এনো।’ পরের সপ্তাহে যেতে মহাত্মা ছেলেটিকে খুব বোঝালেন, গুড় খাওয়া ভাল নয়, গুড় খেয়ে না ইত্যাদি। সেদিন চলে আসার সময় শিশুটির বাবা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আচ্ছা, আপনি গত সপ্তাহেই তো এই সব কথা বলতে পারতেন?’ মহাত্মা বললেন, ‘পারতাম না। তখন আমি নিজেই খুব গুড় খেতাম। এই এক হপ্তায় গুড় খাওয়া ছেড়ে দিয়ে তারপর এত উপদেশ দিতে পারলাম।’

গুড়ের দ্বিতীয় এবং এ-যাত্রার শেষ গল্পটি একটু ছমছমে। পুলিশের গল্প। সেই যে একবার পাঁচকড়ি নামে এক আসামিকে ধরতে না পেরে পুলিশ তিনকড়ি আর দুকড়ি নামে দু’জন নিরীহ লোককে বেঁধে এনেছিল—এ গল্প তারই আধুনিক সংস্করণ। এক লাইনের গল্প। মধুপদ-গুরুপদ দুই ভাই, মধু খুন করে পালিয়েছে, গুরুকে চালান দিল পুলিশ। ‘কেন এমন হল’, প্রশ্ন করায় দারোগাবাবু হেসে বললেন, ‘জানেন না, মধ্যাভাবে গুড়ং দদেৎ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *