বিশ্বাস করি বা না করি অলৌকিক ঘটনা আজও ঘটে
অনেক দিন আগে ১৯৭০ বা তার আশেপাশে। শুকতারা সন্দেশ থেকে হেমেন্দ্র মিত্র ইংরেজি ফরাসি ল্যাটিন আমেরিকার অনুবাদ গল্প সহ যেকোন বই হাতের কাছে পেলেই মুহুর্তে পড়ে ফেলতাম; কারন সে সময় ইচ্ছে হলেও বই কিনে পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিলো না। সেই সময়ে পড়া একটা অলৌকিক কাহিনীর কথা হঠাৎ মনে পরে গেল। কাহিনীকারের দাবি অনুযায়ী গল্পটি সত্য ঘটনার উপর আধারিত। লেখকের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না তবে ইংরেজি সাহিত্যের অনুবাদ বলে মনে হয়।
*’সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ; ঘটনাটি এক ব্রিটিশ নাবিকের ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা থেকে নেওয়া।
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে আটলান্টিক মহাসাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকা ফরাসি জার্মানি প্রভৃতি দেশের নৌবাহিনীর ছোট বড় যুদ্ধ জাহাজ আর সাবমেরিনগুলি । শত্রুবাহিনীর আক্রমণ এক ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে সমুদ্র তখন নিরাপদ নয় কোন পক্ষের কাছেই। জাহাজের নাবিক ও ক্যাপ্টেনকে সদা সতর্ক থাকতে হতো । এখনকার মতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন ছিলো না। বাইরে থেকে সংযোগ স্থাপন সংবাদ আদান প্রদান করা ছিল রীতিমতো কষ্টকর সেরকমই জাহাজের অভ্যন্তরে ক্যাপ্টেন রাতে নাবিকদের জরুরিকালিন নির্দেশনা দিতে পারেন তার জন্য ক্যাপ্টেনের কেবিনের সামনে একটি নোটিশ বোর্ড থাকতো। ওই বোর্ডে লেখা ক্যাপ্টেনের নির্দেশ অনুযায়ী জাহাজ পরিচালনা করতেন নাবিকরা।
সে রকমই একদিন ব্রিটিশ জাহাজ বেশকিছু দিন যুদ্ধ করে রসদ সংগ্রহ করার জন্য বন্দরে ফিরছিল। রাতের খাওয়া হয়ে গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত চারজন নাবিক তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। জাহাজ চলছে নিদৃষ্ট লক্ষ্যে নিদৃষ্ট অভিমুখে। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে নৈশভোজের পর ক্যাপ্টেন একটু ঘুমিয়ে পড়েছেন তার কেবিনে। কর্মরত একজন নাবিক কেবিনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন নোটিশ বোর্ডে কিছু লেখা আছে। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন নোটিশ বোর্ডে সাদা চক দিয়ে লেখা SOS ” Sail towards North”
অদ্ভুত ব্যাপার পূর্বমুখী জাহাজকে হঠাৎ দিশা বদলের নির্দেশ? একমাত্র আপৎকালীন সময়েই এধরনের নির্দেশ সরাসরি দেন ক্যাপ্টেন। আজ নোটিশ বোর্ডে কেন লিখে দিলেন? ক্যাপ্টেনের কেবিনও ভেতর থেকে বন্ধ। নাবিকটি ছুটে গেলেন ইঞ্জিন রুমে বাকি তিনজনের কাছে। এধরনের নির্দেশের কথা শুনে বাকিরা অবাক হয়ে গেল কোন বিশেষ কারণ ছাড়া পূর্বমুখী জাহাজকে হঠাৎ করে উত্তর দিশায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া নিয়ম বহির্ভূত অথচ ক্যাপ্টেনের কেবিনও ভেতর থেকে বন্ধ।
অবশেষে চারজন নাবিক মিলিত সিদ্ধান্ত নিলেন জাহাজ উত্তর মুখেই চালাবেন। ঘন্টা চারেক পর ক্যাপ্টেন ঘুম থেকে উঠে দেখলেন জাহাজ পূর্ব নির্ধারিত পথ ছেড়ে উত্তর দিশায় চলছে। তড়িঘড়ি তিনি চলে এলেন ইঞ্জিন রুমে এবং অত্যন্ত ক্রদ্ধ হয়ে কেন তার নির্দেশ ছাড়া জাহাজের গতিমুখ বদল করা হয়েছে জানতে চাইলেন চালকের কাছে। নাবিকেরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ক্যাপ্টেনের কথা তাদের বোধগম্য হচ্ছে না ; তার নির্দেশেই তো জাহাজ উত্তর মুখে চালানো হচ্ছে।
নাবিক চারজন একসাথে সে কথা বলতেই ক্যাপটেন ছুটলেন তার কেবিনের সামনে সেই নোটিশ বোর্ডের কাছে। মা দেখলেন তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ। গোটা গোটা অক্ষরে বোর্ডে লেখা SOS Sail towards North । সেই রাতেই ক্যাপ্টেনের ডাকে জাহাজের সকল নাবিক ও কর্মচারীরা হাজির হলে তিনি প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করলেন এই লেখাটা কে লিখেছে? সবাই জানিয়ে দিল নির্দেশনা বোর্ডে একমাত্র ক্যাপ্টেন ছাড়া আর কারো লেখার সাহস নেই। এ লেখা তাদের কারও না। ক্যাপ্টেন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন তারপর নির্দেশ দিলেন জাহাজ উত্তর মুখেই চলুক। আরও কয়েক ঘণ্টা চলার পর দেখা গেল একটু দূরে এক ফরাসি যাত্রীবাহী জাহাজ দাউ দাউ করে জ্বলছে। ব্রিটিশ ষুদ্ধ জাহাজটি দ্রুত যাত্রীবাহী জাহাজের কাছে পৌছে উদ্ধার কাজ শুরু করে দিল। তাদের তৎপরতায় জাহাজের যাত্রীদের বাঁচানো সম্ভব হলো।
এখন প্রশ্ন ১৯৪২/৪৩ সালে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো উন্নত ছিল না যে সমুদ্র পথে সাত আট ঘণ্টার দূরত্বে কি ঘটছে তা জানতে পারা যাবে। ব্রিটিশ জাহাজের নির্দেশনা বোর্ডে নাবিক কর্মচারী কেউই যখন লেখেনি তখন ওই লেখা কে লিখেছিলো?
প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর দিতে গিয়ে অনেক সাম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করলেও শেষ পর্যন্ত আবার সেই অলৌকিক তত্ত্বে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।