Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঈশ্বর ও বিজ্ঞান || Sanjit Mandal

ঈশ্বর ও বিজ্ঞান || Sanjit Mandal

ঈশ্বর ও বিজ্ঞান

প্রথমেই বলি, অসাধারণ বিষয়। তাই প্রথমেই স্মরণ করি, স্বামীজীকে, তার মহামন্ত্র হচ্ছে, বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর, জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। ঈশ্বর খোঁজার আগে যে প্রশ্নটা মনকে সজোরে ধাক্কা দেয়, তা হল, যাকে খুঁজছি সে আছে তো? এতো হারাণো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ সংবাদ নয়, এ যে এক গভীর জীবন বোধের প্রশ্ন, অস্তিত্বের প্রশ্ন, অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন, বীজ ও মহাবিশ্বের প্রশ্ন, বিশ্বরূপের প্রশ্ন, নাকি আত্মোদর্শনের প্রশ্ন!! কে দেখেছে ঈশ্বরকে? ছোট বেলায় একটা ইংরাজি কবিতা পড়েছিলাম, হু হ্যাজ সিন দ্য উইন্ড! নাইদার ইউ, নর আই। বাট হোয়েন দ্য ট্রিজ আর ট্রেম্বিং দ্য উইন্ড ইজ পাসিং বাই। আমাদের এই মহাবিশ্বে এমন কিছু বস্তু আছে, যা আমরা কেবল মাত্র অনুভব করি। যেমন, বায়ু আর আলো। ওরা আমাদের স্পর্শ করে, আর আমরা ওদের কেবল অনুভব করতে পারি। সিদ্ধ যোগী বলেন, ঈশ্বরকে কেবল অনুভব করা যায়, তাকে দেখা যায়না, বা স্পর্শও করা যায় না। আর কোনো গল্প বা কাহিনী বলে তার সম্বন্ধে সম্যক ধারণা উপলব্ধ করানো যায় না। আর চার্বাক পন্থীরা তো ঈশ্বরের অস্তিত্বই স্বীকার করেনা।
আর এখানেই প্রশ্ন জাগে, তাহলে ঈশ্বর ছেড়ে ঈশ্বর কণা নিয়ে মেতে উঠলো কেন একদল সত্য সন্ধানী, সত্যদ্রষ্টা বিজ্ঞানী, যার নেতৃত্বে বর্তমান যুগের আইনষ্টাইন স্টিফেন ডাব্লিউ হকিং। ( সদ্য প্রয়াত) সুইজারল্যান্ড এ মাটির গভীরে বিগ ব্যাং হচ্ছে। মহাবিশ্বে যে সংঘর্ষে প্রথম প্রাণের উন্মেষ ঘটেছিল তারই মহড়া চলছে লার্জ হেড্রন কোলাইডারে। কান পেতে শুনছে বিজ্ঞানীরা। তারা, আমাদের দুনিয়ায় সব থেকে বৃহত্তম মেশিন এ প্রচন্ড সংঘর্ষে কোন ঈশ্বরকণা প্রস্তুত হয় তা পরখ করছে। কি সেটা? ওটা হল মৌলিক কণা!! যে মৌলিককণা ভাঙেনা, মচকায় না, আগুণে পোড়েনা, জলে ভেজে না, যার ক্ষয় নেই, যে অজর, অক্ষয়, অব্যয়।
আমাদের ভারতীয় শাস্ত্র কী বলছে আত্মা সম্বন্ধে? ” অজো নিত্য: শাশ্বতোহয়ং পুরাণোন হন্যতে হন্যমানে শরীরে”।
এই আত্মা জন্মরহিত শাশ্বত ও পুরাতন। শরীরকে, অর্থাৎ আত্মার আধারকে হনন করলেও ইনি নিহত হন না। আর কবি লেখেন, হন্যমান এ শরীরের মাঝে যার, অজর অমর সত্তার সম্ভার, শস্ত্র ছেঁড়েনা, অগ্নি দহেনা যারে, দেখবো তারেই অশ্রুর পারাবারে, পাগলের মতো দু-হাত বাড়ায়ে ধরে– অধরা প্রাণের আবার স্বয়ংবরে।।
আর হকিং কি লিখলেন? বিশ্বপ্রকৃতি সম্বন্ধে প্রায় কিছুই না জেনে আমরা দৈনন্দিন জীবন যাপন করি। জীবনদায়ী সূর্য, অনন্ত প্রবাহিত বায়ু,অভিকর্ষ যা আমাদের ভূপৃষ্ঠে আঠার মতো আগলে রাখে, নাহলে আমরা মহাশূন্যে কোথায় ছিটকে চলে যেতাম, যে সব পরমাণুতে আমরা গড়া, যাদের সুশৃঙ্খল সুস্থিতির উপরে আমরা নির্ভরশীল, তারা কারা? কোথায় থাকে? কেনো আর কিভাবে থাকে? কতদিন থাকবে? এই অনন্ত জিজ্ঞাসার সাথে মেশে কৃষ্ণগহ্বর কি? পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ কি?
এই প্রবহমান জগতে যে শৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়, তাকে সুরে বেঁধে দিল কে? এই জগতব্রহ্মান্ডের পিছনে কী সেই বিশাল শক্তি যা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুভূত হয় অথচ, তাকে দেখতে পাওয়া যায়না। এই যে মহাবিশ্বের বিশাল অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জের আলোকবর্ষ কেমনভাবে নির্বাহ হয়, মহাবিশ্বে আর কটা পৃথিবী আছে, সেখানেও কি প্রাণ আছে, সূর্যই বা আরো কত আছে, মিল্কিওয়েতে কত কোটি নক্ষত্রপুঞ্জ আছে, সত্যদ্রষ্টা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ চায়, হাতে কলমে পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে স্রষ্টাকে প্রমাণ করতে চায়। স্রষ্টার প্রমাণ, স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ!!!
ঋষি যাজ্ঞবল্ক গার্গী কে বলেছিল, সাবধান গার্গী, তোমার জিভ খসে পড়বে, তোমার স্পর্ধাতো কম নয়, ব্রহ্মেরও পরে কি তাই তুমি জিজ্ঞাসা করছ!!!
বিজ্ঞানীরা ঈশ্বর তথা ঈশ্বরকণা বা সেই মৌলিক কণার আবিষ্কারের জন্য স্মরণ নিয়েছে লার্জ হেড্রন কোলাইডারের। চমক বৈকি। শেষে বলি, ঈশ্বর এক নিদারুণ খোঁজ, এক অনন্য খোঁজ। এক অনন্ত জিজ্ঞাসা। প্রমাণ কে করবে!! কবি লিখলেন, ” আপনি প্রভু সৃষ্টি বাঁধন পরে বাঁধা সবার কাছে। রাখরে ধ্যান, থাকরে ফুলের ডালি, ছিঁড়ুক বস্ত্র লাগুক ধূলা বালি। কর্মযোগে তার সাথে এক হয়ে ঘর্ম পড়ুক ঝরে।”
সত্য মিথ্যা অস্তিত্ব অনস্তিত্বের বেড়াজালে বিতর্ক চলতে থাকুক অনন্তকাল ধরে, বিজ্ঞানীরা খুঁজে চলুক মৌলিক কণা, আর সাধক মুনি ঋষি তপস্বীরা খুঁজে চলুক এক এবং অদ্বিতীয় পরম ব্রহ্মকে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress