Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাহুল সাংকৃত্যায়ন || Sankar Brahma

রাহুল সাংকৃত্যায়ন || Sankar Brahma

রাহুল সাংকৃত্যায়ন (স্বনামধন্য পর্যটক, বৌদ্ধ-শাস্ত্র এবং বিভিন্ন শাস্ত্রে সুপণ্ডিত, মার্কসীয় শাস্ত্রে দীক্ষিত)

রাহুল সাংকৃত্যায়নের জন্ম ১৮৯৩ সালে সনাতন হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তার আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তার পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তার জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।

রাহুল সাংকৃত্যায়নের ব্যক্তিগত জীবনের পুরোটাই কেটেছে ভ্রমণ করে। নয় বছর বয়সে তিনি পৃথিবী দেখার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। কয়েক বছর পর কিছুদিনের জন্য বাড়িতে ফিরে আসেন, এবং আবার বাড়ি ছাড়েন। এবারে তিনি একটি মঠে সংস্কৃত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তিনি তাঁর জীবনের ৪৫ বছর ব্যয় করেছেন বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে।
ভোজপুরী, মৈথিলী, নেপালি, রাজস্থানী প্রভৃতি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষায় তার অসাধারণ দক্ষতা ছিল। তিনি এমনকি ফটোগ্রাফিও শিখেছিলেন। তিনি ভারতের সকল তীর্থ-ক্ষেত্রে ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি মাদ্রাজে ছিলেন এবং তামিল ভাষা শিখেছিলেন। এছাড়াও অন্ধ্র প্রদেশ, ব্যাঙ্গালোর, হাম্পি, কর্ণাটক প্রভৃতি স্থানেও ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ করেই তিনি জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন। তিনি এমনকি তিব্বতের নিষিদ্ধ ভূমিতেও গিয়েছিলেন। কাশ্মীর, কার্গিল প্রভৃতি এলাকা দিয়ে পায়ে হেটে তিনি তিব্বতে প্রবেশ করেন। তেরশো সালে বখতিয়ার খিলজীর নালন্দা ও বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় এর পাঠাগার পুড়িয়ে ফেলার পর ভারতে সেই অর্থে তেমন সংস্কৃত ভাষার কাজ খুঁজে পাওয়া যায় না। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিলো হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃত পুঁথি উদ্ধার করা, মূলত যেগুলো ছিলো বৌদ্ধ ধর্মের উপর। তিব্বত থেকে তিনি পালি ও সংস্কৃতের মূল্যবান পুঁথি, বই ও কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে আসেন। এগুলো নালন্দা ও বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিয়ে যাওয়া বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ তিব্বতে নিয়ে গিয়েছিলেন। পাটনা জাদুঘরে এর একটি অংশ সংরক্ষিত আছে। তিনি তিন বার তিব্বত গিয়েছিলেন, তিব্বতীয় ভাষা শিখেছিলেন। তিব্বত-হিন্দী অভিধান রচনা করেছিলেন, যার শুধুমাত্র প্রথম অংশ তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তিনি এরপর শ্রীলঙ্কা, জাপান, কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, তেহরান, বালুচিস্তান প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।

জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ড (১৯১৯) তাকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন।
এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন।
বৌদ্ধ দর্শনে তার পাণ্ডিত্য ছিল অসামান্য। কাশীর পণ্ডিতমণ্ডলী তাকে “মহাপণ্ডিত” আখ্যা দিয়েছিলেন।

তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তার কোনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, তবুও তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন।
তার দুই পত্নী – সন্তোষী, এলেনা নারভারটোভনা কোজেরোভস্কায়া, কমলা সাংকৃত্যায়ন।
তিনি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ( ভিক্ষু ) হয়েছিলেন এবং অবশেষে একজন মার্কসবাদী হয়ে ওঠেন । সাংকৃত্যায়ন ছিলেন একজন ভারতীয় দেশপ্রেমিক, ব্রিটিশ বিরোধী লেখা ও বক্তৃতার জন্য তাকে গ্রেফতার করে তিন বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। তাকে তার বৃত্তির জন্য ‘সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত’ বলা হয়। তিনি ছিলেন পলিম্যাথ এবং বহুভুজ । ১৯৬৩ সালে ভারত সরকার তাকে বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত করে ।
ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ।

তিনি কুড়ি বছর থেকে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন তার দিনলিপি রাখতেন সংস্কৃত ভাষায়। এটি পরে তার আত্মজীবনী লিখতে কাজে লেগেছিলো। তার মাতৃভাষা ছিল ভোজপুরী, তবে তিনি মূলত সংস্কৃতেই লেখালেখি করতেন। এছাড়াও হিন্দী ব্যবহার করতেন। তিনি অন্তত ৩৬টি ভাষা জানতেন। ভোজপুরী, হিন্দী ও সংস্কৃত ছাড়াও পালি, উর্দু, ফার্সি, আরবী, তামিল, তিব্বতী, সিংহলী, ফরাসি, রুশ প্রভৃতি ভাষা জানতেন। তিনি ছিলেন একজন ভারতবিশারদ। ভ্রমণ, সামাজিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের উপর তার অনেক গ্রন্থ আছে। এর মাঝে কিছু জীবনী ও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থও আছে। লেখক জীবনের পরের দিকে মৌলিক কাজ অব্যাহত থাকলেও গ্রন্থ সম্পাদনা, অভিধান সঙ্কলন ইত্যাদি তুলনামুলকাভাবে বেশি করেছেন। এ সময় তিনি সর্বহারা শ্রেণীর মহান নেতাদের জীবনী রচনায় মনোযোগ দেন। তার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো ভোলগা থেকে গঙ্গা।, এটি রচনার পর ভারতের হিন্দীভাষী প্রায় সমস্ত অঞ্চল থেকে তাকে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো।

“ভোলগা থেকে গঙ্গা” ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –
১). “মেরি জীবনযাত্রা”,
২). “মধ্য এশিয়ার ইতিহাস”,
৩). “দর্শন দিকদর্শন”,
৪). “কিন্নর দেশে আমি”,
৫). “যাত্রাপথে”,
৬). “মানব সমাজ”,
৭). “আমার লাদাখ যাত্রা”,
৮). “ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান পতন”,
৯). “তিব্বতের সওয়া বছর”,
১০). “ভবঘুরে শাস্ত্র”,
১১). “ইসলাম ধর্মের রূপরেখা”,
১২). “মাও সে তুং”,
১৩). “আকবর”,
১৪). “স্তালিন”,
১৫). “বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ” ইত্যাদি।

“মেরি জীবনযাত্রা” – বইয়ের ভূমিকায় বুদ্ধকে তাঁর শিক্ষক, গুরু আখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন “নানা অভিমতকে আমি গ্রহণ করেছি একটা নৌকার মতো যাতে নদী পেরিয়ে বিপরীত দিকে যেতে পারি কিন্তু সেই অভিমতগুলোকে এমন বোঝা করে তুলিনি যাতে মনটাই পাষাণভার হয়ে যায়”।

যখন দিনি শ্রীলঙ্কায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। পরে তিনি স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন।পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ সালের ১৪ই এপ্রিল তারিখে ৭০ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তাঁর প্রাপ্তপুরস্কার –

পদ্মভূষণ (১৯৬৩ সালে)
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮ সালে)

————————————————————–

[সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া

“ভোলগা থেকে গঙ্গা”। ১৬ই জুলাই ২০১৩ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬শে মার্চ ২০১৪ সাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *