আজ লোকটা থমকে দাঁড়ালো ।
ফর্সা মুখশ্রীটা এখন তামাটে ,
শিথিল চামড়ায় ঢাকা মুখে
কালের অসংখ্য ছাপ ।
আঁধারে ঢাকা —
জীবনের শেষ ধাপ গুলো
পেরনোর আগে–
সে পেছন ফিরে তাকায় ।
মনের পর্দায় সযত্নে আঁকা
কতগুলো অসমাপ্ত ছবি
মনে মোচড় দিয়ে যায় ।
বাবার হাতে মুঠোবদ্ধ হয়ে
স্কুলে আসা যাওয়া করতে করতে
প্রাণবন্ত একটা কিশোর
কবে যেন ভেসে গেলো
অজানা মিছিলের স্রোতে !
অন্ধকার কারাগৃহে প্রহর গনে গনে
মিছিলের নেশা একদিন কাটলো ।
মুক্ত পৃথিবীর বাতাসে শুনলো –
যৌবনের মত্ত মাতাল ডাক ।
শুরু হলো-
জীবনের একটা নতুন অধ্যায় !
যৌবনের স্বপ্নে হলো সে মশগুল ।
সোনালী ধানের শীষে ঢেউ খেলানো
সবুজ প্রান্তরের গাঁ ঘেঁষে
ছায়া ঘেরা ছোট্ট একটা আবাস !
নিকানো দাওয়ায়
মাটির মাতাল সৌরভ !
উঠোনের এক প্রান্তে
সাঁঝের প্রদীপের তুলসী মঞ্চ ।
গৃহকাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে
আঙিনায় দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষায়
সবুজ প্রান্তরে পাঠাবে
স্বপ্নের দুটো কালো চোখের নিমন্ত্রণ-
কপালে উজ্জ্বল সিঁদুরের টিপ,
হাতে মঙ্গল শাঁখা ,
অতি সাধারণ লাল পেড়ে শাড়ির
আধো ঘোমটা…..
যৌবনের কল্পনার ছবিটা
আঁকা শেষ হলো না লোকটার ।
সমাজের ঘাটে ঘাটে আবর্তিত হয়ে
একদিন আছড়ে পড়ল রাজপথে ।
তারপর –
অফিসে অফিসে ঘুরে ঘুরে
নো ভেকেন্সির ঘা খেয়ে খেয়ে
পেরিয়ে গেলো বেশ ক’টা বছর।
অবশেষে একদিন লোকটা
শহুরে মেসিন হয়ে গেলো।
পেলো না আর থামার অবকাশ ,
পেলো না জীবনের অসমাপ্ত
ছবিগুলো আর আঁকতে ।
অতীতের সেই ছেলেটা –
আজ একটা লোক হয়ে গেছে !
কালের কয়েকটা সীমিত ধাপ
তার জন্য বাকী ,-
তাই লোকটা থমকে দাঁড়ালো ।