কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী।
পিতার কাছ থেকেই শৈশবে তিনি সাহিত্য সাধনার প্রেরণা লাভ করেন। দারিদ্রের সাথে কঠোর সংগ্রাম করে তার পাঠ্যজীবন কাটে কিছু দিন। শেষ পর্যন্ত অর্থের অভাবে এফ.এ.পরীক্ষা দিতে না পেরে তার পাঠ্যজীবনে ইতি টানতে হয়েছিল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন চিরকালের ভরঘুরে। ছেলেবেলায় বেশ কয়েকবার তিনি পায়ে হেঁটে পুরী বেরিয়েছেন ।
তিনি ছিলেন অমর কথাশিল্পী। সমাজের অসহায়, নিপীড়িত, পতিতাদের দুঃখ দুর্দশা ও নানাবিধ সমস্যার নিখুঁত ছবি এঁকেছেন তাঁর বিবিধ উপন্যাসে।একদিকে যেমন সমাজের আর্ত,অত্যাচারিতের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পাই , তাঁর রচনায়; অন্যদিকে তেমনি অসহায়, অবলা নারী জাতির প্রতি তাঁর দরদী ও মরমী হৃদয়ের অপূর্ব প্রকাশ পাই। তাই শরৎ সাহিত্যে দেখা যায় পুরুষ চরিত্র অপেক্ষা নারী চরিত্রের প্রাধান্য।
কিরণময়ী, সাবিত্রী,রাজলক্ষ্মী,চন্দ্রমুখী,ষোড়ষী এরা নারীত্বের অতুলনীয় মহিমায় উদ্ভাসিত ও উজ্জ্বল। জীবানন্দ,সতীশ,মহিম,সুরেশ, শ্রীকান্ত ততটাও বর্ণদীপ্ত নয়। শরৎচন্দ্র নারীর, নারীত্বের মর্যাদা দিয়েছেন গভীর ভাবে। তিনি নারীর সতীত্বের চাইতে নারীত্বের অধিক মূল্য দিয়েছন। সমাজে যারা পতিতা,ও নষ্ট চরিত্রের নারী বলে গন্য হত,শরৎসাহিত্যে তারা কেউ ব্রাত্য ও অপাঙ্ক্তেয় নয়। বিধবাদের প্রতি ও তাঁর ছিল অকুণ্ঠ সহমর্মিতা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে বিধবা রোহিনী হয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে,কুন্দনন্দিনী বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিনোদিনী কে করেছেন কাশীবাসিনী। আর আমরা শর সাহিত্যে দেখতে পাই, ইচ্ছে সত্ত্বেও রমা-রমেশ কে পারেন নি মিলিত করতে। সমাজের রক্ত চক্ষুর দিকে তাকিয়ে কিরণময়ী কে শেষ পর্যন্ত করেছেন অপ্রকৃতিস্থ। তবে “শেষ প্রশ্ন” তে বিধবার বিয়ে দিয়ে তার অন্তরের সুপ্ত বাসনার চরিতার্থ করেছেন।
আত্মজ নয়, এমন সন্তানের প্রতি অকুণ্ঠ বাৎসল্য ও অকৃত্রিম মাতৃস্নেহের অপূর্ব ভাব প্রকাশ শরৎসাহিত্যে একটি বিশেষ লক্ষ্যনীয় বৈশিষ্ট্য!তাই কেষ্টর প্রতি মেজদির,রামলালের প্রতি নারায়নীর স্নেন মমতা তুলনাহীন!