Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভ্যালেনটাইন গিফ্ট || Subhra Saha Shelley

ভ্যালেনটাইন গিফ্ট || Subhra Saha Shelley

ভ্যালেনটাইন গিফ্ট

বিয়ের 40 বছর অতিক্রান্ত হলো —

বিয়ে কথাটার অর্থ উপলব্ধি করতে না করতেই দুইবাড়ির লোকেরা 18 বছরের ছেলের সাথে 15 বছরের মেয়ের গাঁটছড়া বেঁধে দিলেন। যৌবনে পা দিতে না দিতেই লাইফ পার্টনার তো পাওয়া গেলো কিন্তু তাতে লাভটা কি হলো—

বাবার কড়া হুকুম দুজনকেই অর্দ্ধসমাপ্ত পড়াশুনো সমাপ্ত করতে হবে। আচ্ছা বলুন তো এমন বেরসিক বাবা কেউ হয়? পড়াশুনাই যদি করবো তাহলে সাততাড়াতাড়ি আশার সাথে বিয়ে দিয়ে মনে ভালোবাসার আশা জাগানোর দরকার কি ছিলো —

কিন্তু ঐ আর কি বাবার মুখের উপর তো কথা বলা যায় না অগত্যা পড়ার বই খুলে আশার আশা করতেন সুকান্তবাবু। রাগে গজগজ করলেও কিচ্ছু করার নেই –শেষমেষ ফন্দী আটলেন বাবাকে জব্দ করতে বইকেই বেছে নিলেন।

চিরকূটে ভালোবাসার কথা লিখে বইয়ের ভাঁজে ভরে বই আদানপ্রদানের কাজ করবেন ঠিক করলেন — কিন্তু এই কাজে ভাইবোনেদের ওপর ভরসা ঠিক রাখতে পারলেন না সুকান্ত নিয়োগী। অবশেষে বিন্তিদিদিকেই পাকড়াও করেন।

ছেলের পড়াশুনায় বিঘ্ন যেন কোনভাবেই না ঘটে তাই ভাত খাওয়াটুকু ছাড়া রান্নাঘরে এসে চা বা জলখাবার খাবার সবটাই বিন্তিকে সুকুর ঘরে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন বাড়ির বড়কর্তা। তাই বিন্তিদিদির হাতেই আশার কাছে বই পাঠিয়ে নিজের পড়াশুনোর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেন আর মনের আঁশ কিছুটা মেটালেন। এমনি করে বি.এ পাশ করার পরেই বাবার কাছ থেকে বি.এ পাশ করেন।

পড়ন্ত বিকেলে বিছানায় শুয়ে দুটো মানুষের স্মৃতিরোমন্থণের পরে —-

“শোন আজ রাতে ওরা ফিরবে না বলে গেছে —ভ্যালেন্টাইন ডে সেলিব্রেশন হবে। লেট নাইট পার্টি। শুধু তুমি আর আমি”—- বললেন আশালতা।

তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে সুকান্তবাবু বলেন ” তাই বুঝি? তবে রাতে ভাতে ভাত করে ফেলো।” রাগে গজগজ করতে করতে আশালতাদেবী বিছানা ছেড়ে আলনার কাপড় গোছাতে লাগলেন—

সুকান্তবাবু গায়ে পাঞ্জাবি গলিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলে টেরি কেটে ঘড়িটা বাঁধতে বাঁধতে “আমি একটু বের হচ্ছি ।দরজাটা লাগিয়ে দাও”—

“যাও , যাও পাড়ার মোড়ে মোড়ে আজ জোড়ায় জোড়ায় কপোতকপোতী দেখে চক্ষু সার্থক করে এসো— আর ফেরার সময় রুটি তরকা নিয়ে ফিরো— রাতে আমার উপোস।”— বলে আশালতা দেবী দড়াম করে বাইরের দরজাটা বন্ধ করে দেন।

বাইরে থেকে সুকান্তবাবু বললেন “আচ্ছা বেশ তাই হবে — ফিরতে একটু দেরীই হবে। কয়েকটা মোড় ঘুরে তবে আসবো তো —

চোখ ফেটে জল আসে —-ভালোবাসা কি এমনই হয় ? যে মানুষটা বিয়ের পরে একটু দেখা করার জন্য সবসময় আঁকুপাকু করতো সেই মানুষটাই কি না এমন ফাঁকাবাড়িতে একা রেখে চোখের সামনে দিয়ে গটগট করে করে বেড়িয়ে গেলো টেরি কেটে। আবার বলে গেলো কয়েকটা মোড়ে চক্কর খেয়ে ফিরতে দেরী হবে। সন্ধ্যে প্রদীপ দিয়ে ঘরে এসে সিরিয়াল চালিয়ে বসেন আশালতা দেবী। প্রত্যেকটা সিরিয়ালেই আজ ভ্যালেনটাইন ডে নিয়ে দেখাচ্ছে।

ভালোবাসার মানুষেরা লাল গোলাপ হাতে দিয়ে “আই লাভ ইউ বলছে “—

হঠাৎ অসময়ে কলিং বেলের আওয়াজে মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো —

দুমদাম পা ফেলে টিভিরদিকে তাকাতে তাকাতে দরজাটা খুলতে লাগলেন । “ম্যাডাম আশালতা নিয়োগীর নামে অর্ডার আছে —
রিসিভ করুন “

একটু ঝটকা খেয়ে ” আপনি ঠিক দেখছেন তো ? নাম ঠিকানা ?”

“হ্যাঁ ম্যাডাম। সি/21 –রবীন্দ্রনগর তো?”

সই করে প্যাকেটটা হাতে দিয়েই বাইক নিয়ে হুশ করে বেড়িয়ে যায় ডেলিভারী বয়।

অসীম বিস্ময়ে নিজের নামে আসা প্যাকেটটা খুলতেই বেড়িয়ে আসে একটা কার্ড তাতে লেখা “হ্যাপি ভ্যালেনটাইন ডে”—এছাড়া একটা প্যাকেটে জবা ,গাঁদা ফুল ,বেলপাতা ,তুলসীপাতা — আর সাথে একটা প্রেসার মাপার মেশিন ,একটা সুগার মাপবার মেশিন।

ভ্যালেনটাইন ডে তে কে এমন করে গিফ্ট পাঠালো ভেবে ভাবনার রাজ্যে ঢুকতেই একটা ঠক্কর খায় আশালতা নিয়োগী। একটা মুখই বারবার মনক্যামেরায় ভেসে ওঠে —

নিজেরই নিজের ওপর রাগ হয় –“তিনি তো টেরি কেটে পাঞ্জাবি পরে ফুলবাবু সেজে কপোতকপোতী দেখতে বেড়িয়ে গেলেন —“

এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘাড়ের ওপর একটা হাতের স্পর্শ — 40 বছরের পুরোনো প্রথম স্পর্শের মতো। পেছন ফিরতেই সুকান্তবাবু গাইতে থাকেন “তোমরা যে বলো ভালোবাসা ভালোবাসা — সখী ভালোবাসা কারে কয়?”– এতদিন পর কর্তার গলায় এমন প্রেমের গান শুনে মনটা বেশ ফুরফুরে ওঠে আশালতাদেবীর।

কপট রাগ দেখিয়ে আশালতাদেবী বলেন “ভ্যালেনটাইন ডে র গিফ্টের কি ছিরি –“

” কত মাথা খাটিয়ে তোমাকে গিফ্ট পাঠালাম — যাতে ভোরে উঠে এই ঠান্ডায় দুদিন তোমার ফুল তুলতে না হয় আর নিয়ম করে তুমি তোমার সুগার ,প্রেসারটা মাপতে পারবে—“

আশালতাদেবীর চোখের কোনটা চকচক করে ওঠে প্রকৃত ভালোবাসার আবেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *