Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সেই বাড়ি || Mrinmoy Samaddar

সেই বাড়ি || Mrinmoy Samaddar

সেই বাড়ি

অনিশ শ্রাবন্তী পিয়ালী আর কৌশিক চার বন্ধু। কলেজ পড়াকালীন ওদের বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। কলেজ শেষ হয়ে যাবার পর অনিশ আর শ্রাবন্তী এবং পিয়ালী আর কৌশিকের প্রেম-বিয়েতে শেষ হয়। চারজনই চাকরিজীবী এবং খুব ভালোভাবেই থাকে ওরা। বন্ধুত্ব চির অটুট। সারা বছর একটানা কাজ করতে করতে ওরা ক্লান্ত। সবাই মিলে ঠিক করলো কিছুদিন নিজেরা কোথাও ঘুরে আসবে। যেখানে কোন কাজ কিছু থাকবে না। থাকবে শুধু ওদের নিজস্বতা আর বন্ধুত্ব।
শ্রাবন্তী ওখানে গিয়ে আমরা কিন্তু কোন হোটেলে থাকবো না।
সবাই সমস্বরে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে উঠলো।
কৌশিক বর্ধমানের কাছে একটা বাড়ির খবর পেয়েছি তোরা কি ওখানে থাকতে চাস। তাহলে সেভাবে কথা বলবো।
অনিশ হ্যাঁ, হ্যাঁ থাকব তুই কথা বলে ফাইনাল করে ফেল।
পিয়ালী আরে আগে তারিখটাতো ঠিক করো সবাই।
অনিশ আচ্ছা, আগামী শুক্রবার গেলে কেমন হয়? শনি-রবি ওখানে কাটিয়ে সোমবার ফিরে আসবো।
পিয়ালী খুব ভালো প্রস্তাব।
অনিশ শোন সবই ঠিক হল, আমার গাড়ীটা নিয়ে যাব। তোরা আমাদের এখানে চলে আসবি একসাথেই সবাই যাব।
শ্রাবন্তী ঠিক ঠিক, একদম ঠিক কথা বলেছো।

শুক্রবার এল। ঠিক ছিল দুপুর তিনটে নাগাদ ওরা বেরোবে। কিন্তু কৌশিকদের আসতে অনেক দেরি হলো। প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে।
পিয়ালী আরে আর বলিস না। বেরোবো এমন সময় ওর একজন আত্মীয় এল। কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেল।
শ্রাবন্তী চল চল অনেক দেরি হয়ে গেছে যেতে যেতে কথা হবে।
অনিশ নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। সাড়ে তিন চার ঘন্টার জার্নি। সবাই গল্প করতে করতে যেতে থাকলো।
রাত নটার দিকে ওরা অনেক ঘুরে বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালো বাড়িটা পুরো অন্ধকার। ইলেকট্রিক আলোর কোন ব্যবস্থা নেই। এদিকে আবার অমাবস্যা। হেডলাইটের আলোতেই যা দেখা যাচ্ছে। চারিদিকে শুকনো পাতা পড়ে রয়েছে। বেশকিছু গাছের ঝুরি নেমে এসেছে। একটা ছমছমে পরিবেশ বাড়িটা জুড়ে। অনিশ গাড়ির হর্ন বাজালো। গাড়ির হেডলাইটের আলো অন্ধকার দিগন্তকে চিরে দিচ্ছে, হর্নের আওয়াজ যেন মনে হচ্ছে নিস্তব্ধতাকে ভেঙেচুরে দিয়েছে। একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর জোনাকির গুচ্ছ গুচ্ছ আলো। জোনাকির আলোর মাঝে মাঝে কিছু যেন জ্বলজ্বল করছে।শেয়াল হতে পারে আবার হায়না টায়নাও হতে পারে। হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে ভেতর থেকে শীর্ণকায় কুঁজো মতন এক মুখ দাঁড়িগোঁফওয়ালা একটি লোক বেরিয়ে এলো। হাতে একটি লাঠি। এতটাই শীর্ণকায় মনে হয় হাড়ের ওপর শুধু চামড়া রয়েছে। সবচাইতে আগে নজর পড়বে ওর কোটরাগত চোখের দিকে। চোখ যে এত কোটরগত হতে পারে ওই লোকটিকে না দেখলে বোঝা যেত না। তবে চোখগুলো অসম্ভব রকম জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ঝকঝকে দাঁতের পাটি সর্বদা বেরিয়ে রয়েছে। পরনে একটা লাল হাঁটু পর্যন্ত লম্বা সালু।
বাবু আপনারা চলে এসেছেন আমার নাম সুবল। এই বাড়িটা আমিই দেখাশোনা করি। বাবু গাড়িটা ঐদিকে রেখে আসুন। খ‍্যানখেনে গলায় বলল সুবল।
অনিশ গাড়িটা রেখে দিতে গেল। ওরা সবাই হৈ হৈ করছে। আর বলছে ঠিক যেরকম বাড়ি ভেবেছিলাম এটা ঠিক সেরকমই। বাড়িটা বিরাট অট্টালিকা। আর দোতলা। বাড়িটার অনেক জায়গা থেকে প্লাস্টার খসে পড়েছে। যেন মনে হচ্ছে বাড়িটা দাঁত বের করে হাসছে। অনিশ গাড়িটাকে রেখে দিল। ফিরে আসবার সময় পায়ের নিচের শুকনো পাতায় মচমচ আওয়াজ হচ্ছে। হঠাৎ মনে হল পায়ের পাশ দিয়ে সরসর করে কিছু চলে গেল। সাপখোপ হতে পারে। অনিশ ফিরে এলো ওদের কাছে।
সুবল চলেন বাবু আপনাদের জন্য ঘর গুছিয়ে রেখে দিয়েছি আপনারা আসুন।
বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি। কয়েকটা বাদুর ঝটপট করে উড়ে গেল। ওদের মনে হলো মাথাটা নিচু না করলে হয়তো মাথায় ঠুকরে দিত। এই অন্ধকারে বাড়িটাকে রহস্যময়ী বলে মনে হচ্ছে ওদের। নিচের প্লাস্টার এদিক ওদিক দিয়ে খসে পড়েছে। হোঁচট খেতে খেতে সুবলের পেছনে পেছনে যেতে লাগলো ওরা। নির্দিষ্ট ঘরের সামনে এসে ওদেরকে বলল এই পাশাপাশি ঘর দুটো আমি গুছিয়ে রেখে দিয়েছি আপনাদের জন্য। নিজেদের সাথে আনা জিনিসপত্র রেখে দিলো আর মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে বসলো।
কৌশিক আর পিয়ালী ওদের ঘরে গিয়ে নিজেদের জামা কাপড় পালটে নিল। এদিকে অনিশরাও। সবাই একজায়গায় একত্রিত হয়ে বসল গল্প করতে। গল্পের কোন আগামাথা নেই। এমন সময় সুবল রাতের খাবার নিয়ে এলো।
শ্রাবন্তী বাথরুমে গেল হাতমুখ ধুতে। কিন্তু ও গিয়েই বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে উঠলো। সবাই মোমবাতি নিয়ে ঢুকলো বাথরুমে। গিয়ে দেখল শ্রাবন্তী স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনেক ডাকাডাকির পর শ্রাবন্তী হাত দিয়ে কলের দিকে ইশারা করলো।
একটু থিতু হয়ে বলল কল দিয়ে রক্ত পরছে জল নয়। অনিশ কলটা আবার চালাল কিন্তু সব স্বাভাবিক। তখন ও সবাইকে আশ্বস্ত করলো। সবাই হাতমুখ ধুয়ে ঘরে এলো। ঘরে এসেই ওরা চমকে উঠলো। সুবল খাবার দিয়ে যাবার পর তো ওরা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু দরজা খুলে গেল কিভাবে? কোনরকমে খাওয়া-দাওয়া করলো।
এখন সবে মাত্র সাড়ে নটা বাজছে কিন্তু এর মধ্যেই ওদের মনে হচ্ছে মাঝ রাত হয়ে গেছে।খাওয়া-দাওয়ার পর অনিশ আর কৌশিক বাইরের বারান্দায় গেল সিগারেট খেতে। সিগারেট খেয়ে ফিরে আসবার সময় ওদের কারুর সাথে ধাক্কা লাগল। পেছন ঘুরে দেখে অশরীরী আত্মার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে সুবল। আর দাঁত বের করে হাসছে। খাওয়া-দাওয়া করে কৌশিক আর পিয়ালী ওদের ঘরে চলে গেছে। অনিশ মোমবাতির নেভাতে যাবে এমন সময় শ্রাবন্তী বলে উঠল অনিশ আমার মনে হচ্ছে আমাদের সাথে এই ঘরে আরো কেউ আছে।
অনিশ হেসে উঠলো। অনিশের হাসিটা যেন মনে হলো এই প্রেতপুরীর আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে দিল। অনিশ মোমবাতিটি নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। ক্লান্তিটা ছিল তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।
রাত তখন অনেক গভীর অনিশের যেন মনে হলো ওর ঘাড়ের কাছে কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ও ধড়মড় করে উঠে পড়লো। শ্রাবন্তীও উঠে পড়ল।
কি হলো উঠে পড়লে যে?
অনিশ মুখে হাত দিয়ে কথা বলতে বারণ করল। ওরা কান খাঁড়া করে শুনতে পারল ঘরের মধ্যে কেউ পায়চারি করছে। আর বারান্দায় বেশ কয়েকজনের হাটা চলার শব্দ। মোবাইলের ঘড়িতে দেখতে পেল রাত তখন বারোটা বেজে পনের মিনিট। এমন সময় ঘরের মধ্যে সুবলকে দেখতে পেল মোবাইলের আলোতে।
অনিশ কি হলো সুবল তুমি এত রাতে ঘরের মধ্যে? যাও আমরা ঘুমাচ্ছি তো এখন।
সুবল কোন কথা না বলে বেরিয়ে গেল। দরজা তো বন্ধ তাহলে সুবল ঘরে এলোইবা কিভাবে আর বেরোলোইবা কিভাবে?
এমন সময় পাশের ঘর থেকে চিৎকার ভেসে এলো বাঁচাও বাঁচাও। অনিশ আর শ্রাবন্তী পড়িমড়ি করে ছুটলো পাশের ঘরের দিকে। গিয়ে দেখল কৌশিক আর পিয়ালী ঘরের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। আর ঘরের ভেতরে যেন একটা ঝড় বইছে। ওরা কি করবে বুঝে উঠবার আগেই অনিশের কানের পাশ দিয়ে মনে হল কিছু একটা বেরিয়ে গেল। ঘর আবার আগের মতো শান্ত হয়ে গেল। ওরা মানে অনিশ আর শ্রাবন্তী মিলে বাকি দুজনের জ্ঞান ফেরার চেষ্টা করলো। হঠাৎ সেখানে দেখে সুবল। সুবলকে সাথে নিয়ে ওরা কৌশিক আর পিয়ালীর জ্ঞান ফেরালো। জ্ঞান ফিরতেই ওরা বলতে শুরু করলো আর এক মুহূর্তও আমরা এখানে থাকবো না। চল সবাই ফিরে চল। এই বাড়িতে অশরীরী আত্মার বাস আছে। এখানে থাকলে আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু হবে না।
অনিশ এত রাতে কোথায় যাব সকালটা হোক।
আবার ওরা সবাই এক ঘরে চলে এলো। ওরা বারান্দা দিয়ে যখন অনিশের ঘরের দিকে যাচ্ছিল দূরে দেখতে পেল একটা আগুন জ্বলে নিভে গেল। ওদের সবার আত্মারাম খাঁচা হয়ে গেল। পড়িমড়ি করে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল।
ঘরে মোমবাতি জ্বলছে। হঠাৎ জানালায় একটা খুঁট করে আওয়াজ হতেই ওরা কান খাঁড়া করে নিল। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের কোন বিরাম নেই। জানালাটা খুললো হঠাৎ মনে হল কিছু একটা ঘরের ভেতর ঢুকে এলো। খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেল একটা কুচকুচে কালো বিড়াল। বিড়ালটাকে তাড়া মারতেই বিড়ালটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। দরজাতো বন্ধ কিন্তু বিড়ালটা বেরোলো কোত্থেকে? সবাই একসাথে বসে রয়েছে। কারুর মুখে কোন কথা নেই। সবার চোখে-মুখে একটা আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। বাড়ির বাইরে থেকেই শিয়ালের ডাক ভেসে এলো। আরো না জানি কোন্ পশুর ডাক শুনতে পেল। একে অমাবস্যার রাত তার ওপর এইসব ঘটনা সবারই মধ্যে একটা ভয় ভীতির সঞ্চার করেছে।
ওরা সবাই একসাথে বসে আছে।হঠাৎ সেই সময়ে ওরা চারজন শুনতে পেল একজন পুরুষ কন্ঠের আর্তচিৎকার। সেই সাথে লেলিহান আগুনের শিখা। মনে হল ঠিক ওদের ঘরের বাইরের বারান্দাতেই এটা ঘটছে। আর্তচিৎকারটা এমন যেন মনে হচ্ছে কাউকে চরম আঘাত করা হচ্ছে। প্রেতপুরির দরজা খুলে বাইরে বেরোলো। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। আশ্চর্য তাহলে আগুনের লেলিহান শিখাটা কোথায় গেল? হঠাৎ ওদের চোখ গেল বাড়ির দক্ষিণ দিকে। দেখল একটা আগুন দপদপ করে জ্বলছে আর দুলে দুলে এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আগুনটা শূন্যে ভাসছে। ধীরে ধীরে আলোটা ওদের কাছাকাছি আসতে লাগলো। একদম কাছে আসার পরে ওরা দেখতে পেল সুবলকে।
কি গো বাবুরা তোমরা ঘুমাও নি এখনও?
ওরা তখন পুরো ঘটনাটা বর্ননা করল সুবলকে।
সব কথা শুনবার পর সুবল বলল দাদা বাবুরা আপনারা এটা শুনেছেন? তাহলে শুনুন বলি। এই বাড়িটা ছিল রায়বাহাদুর শংকরের। আমার বাবার মুখে শুনেছিলাম রায়বাহাদুর এই অঞ্চলের একজন মস্ত বড় জমিদার ছিলেন। আমার বাবা তখন ওনার দেখাশোনা করতেন। এই রকমই এক শুক্রবার অমাবস্যার রাতে এই বাড়িতে হানা দেয় জনাবিশেক সশস্ত্র লোক। কিন্তু জমিদারের লেঠেল বাহিনীর হাতে জনাদশেক নিহত হয় ঠিকই কিন্তু বাকি জনাদশেক কোনরকমে ঘরে ঢুকে পড়ে। এবং জমিদারবাবুকে জোরপূর্বক এই বারান্দায় টেনে নিয়ে এসে ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে আহত করবার পরে জীবন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে দেয়। জমিদারের কোন বংশধর না থাকার কারণে বাড়িটি তখন থেকেই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। আপনাদের মত মাঝে মাঝে কিছু লোক এখানে এলেও তারাও থাকতে পারে না ভয়ে চলে যায়। আসলে রায়বাহাদুরের অতৃপ্ত আত্মা এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়।
এইসব গল্প করতে করতে সকাল হয়ে যায়। এদিকে শ্রাবন্তী অনিশকে ধাক্কা দিতে দিতে বলে কি গো কি হল গো গো করছ কেন? ওঠো সকাল হয়ে গেছে। অনিশ চোখ মেলে তাকাল। অদ্ভুত সে দৃষ্টি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল ও ওর ঘরের বিছানাতেই শুয়ে রয়েছে। তাহলে এতক্ষণ কি ছিল? সবটাই কি ওর কল্পনার জগতের নাকি অন্য কিছু ??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *