Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শুধু কি স্বপ্ন || Mrinmoy Samadder

শুধু কি স্বপ্ন || Mrinmoy Samadder

শুধু কি স্বপ্ন?

হঠাৎ করেই অসীমবাবুকে যেতে হল অফিসের কাজে। উনি একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। অফিসের নির্দেশে যেতে হচ্ছে। সকাল সকাল বেরোবার কথা ছিল। সকালবেলা উনি সেই মতো অফিস পৌঁছে গেলেন।
ওখান থেকে সবকিছু শেষ করে বেরোতে বেরোতে বিকেল হয়ে গেল। আসলে ওনাকে যেতে হবে রামপুরহাট। কিন্তু সাড়ে সাতটার আগে কোন ট্রেন নেই শিয়ালদা থেকে। বাধ্য হয়েই উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে রওনা দিলেন। মাত্র তো তিন সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ।
ট্রেনে উঠে বসলেন। কানে হেডফোনটা লাগিয়ে গান শুনতে লাগলেন। তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা গান শুনতে শুনতেই কেটে যাবে।
রামপুরহাটে একটা বাড়ির খোঁজ নিতেই উনি যাচ্ছেন। যথাসময়ে ট্রেন চলতে শুরু করল। জানলার পাশে বসে গান শুনতে শুনতে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এক একটা স্টেশন পিছন দিকে চলে যাচ্ছে। হু হু করে দৌড়াচ্ছে। ওনার মনেও একটা আনন্দ। এর আগে অনেক জায়গায় গেছেন কিন্তু রামপুরহাটে এই প্রথমবার। কাল এই শহরটা ঘুরে দেখবেন বলে ঠিক করেছেন। এত কাছে এসে তারাপীঠে অবশ্যই পুজো দেবেন। এছাড়াও কঙ্কালীতলা তো আছেই।
যদি তারপরেও সময় থাকে তাহলে বক্কেশ্বর যাবেন বলে ঠিক করেছেন। ট্রেন ধীরে ধীরে বর্ধমান পৌঁছালো। আবার যথাসময়ে ছেড়েও দিল। এরপর ট্রেন গিয়ে দাঁড়াবে বোলপুর শান্তিনিকেতন তারপর ওনার গন্তব্য রামপুরহাট।এটাও ঠিক আছে উনি গিয়ে ওই বাড়িটিতেই উঠবেন।
রামপুরহাট এল উনি ট্রেন থেকে নেমে পড়লেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে উনি প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে এলেন। বেরিয়ে এসে একটা রিক্সাওয়ালাকে ঠিকানাটা বললেন। রিক্সাওয়ালা রাজি হয়ে গেল। রাত তখন সাড়ে দশটা।
ছোট ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে রিকশায় উঠে বসলেন। কিছুক্ষন পরিকশাটা বড় রাস্তা থেকে নেমে অন্ধকার রাস্তা ধরল। চারিদিকে ঝিঝি পোকার একটানা আওয়াজ। বহু দূরে দূরে রাস্তায় টিমটিম করে জ্বলছে আলো। রাস্তার আলোতে উনি দেখতে পেলেন রাস্তার দু’পাশেই ধানজমি।
উনি রিক্সাওয়ালাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করাতে রিক্সাওয়ালা কোন কথাই বলল না এক্কেবারে চুপ।
আরো কিছুক্ষণ চলবার পর রিক্সাওয়ালা একটা বড় দালান বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। বলল আপনার জায়গা চলে এসেছে, আমাকে ভাড়াটা মিটিয়ে দিন। অনেক রাত হয়ে গেছে আর বেশিক্ষণ থাকবো না।
ভাড়া টাড়া মিটিয়ে উনি বাড়ির দরজায় এসে কড়া নাড়লেন। বাড়িটাতে কোন আলো নেই। রাস্তার আলোয় যেটুকু দেখা যাচ্ছে। কড়া নাড়বার একটু পর একজন লোক বেরিয়ে এলো। মাথা ভর্তি তার জট। রক্ত জবার মতো চোখ দুটি জ্বলছে। চেহারাটাও তথৈবচ। এতটা শীর্ণ কি কেউ হতে পারে? লাল সালুটা হাঁটু পর্যন্ত লম্বা। কালো আবলুস কাঠের মতো গায়ের রং। সবচাইতে উজ্জ্বল হলো ওনার সাদা দাঁতের পাটি।
সাদা দাঁত বের করে লোকটা বলল আসুন বাবু। আপনার জন্য ঘর গুছিয়ে রেখেছি। আমার নাম মংলু। অনেকদিন বাড়ির ইলেকট্রিক বিল জমা দেয়া হয়নি বলে কেটে দিয়ে গেছে। আপনি ঘরে গিয়ে হাত পা ধুয়ে বসুন আপনার খাবার নিয়ে আসছি।
অসীমবাবু বাথরুম থেকে হাত পা ধুয়ে এলেন। কিন্তু বাথরুম থেকে বেরোবার পর ওনার হাত মুখ চ্যাট চ্যাট করতে লাগলো। মোবাইলের আলোতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওনার চক্ষু চড়কগাছ। মুখ বেয়ে রক্তের ধারা বইছে। হাত-পা পুরো লালে লাল। উনি এক ছুঁটে আয়নার সামনে থেকে সরে গেলেন।
আবার কিছু সময় পর উৎসুকতার জন্য আবার আয়নার সামনে গেলেন। কিন্তু এবার আয়নায় ওনার ছবির বদলে অন্য কাউকে দেখা গেল। রীতিমত ভয় পেয়ে গেলেন।
এমন সময় মংলু খাবার নিয়ে এলো। রুটি আর মাংস। ওনার তখন খিদের ব্যাপারটা বেমালুম মাথায় উঠে গেছে। মংলুকেও কিছু বললেন না। চুপচাপ খেতে লাগলেন।
আর দুটো রুটি দেব, বাবু।
হ্যাঁ, দাও।
মংলু হাত বাড়ালো। হাতটা ক্রমশ লম্বা হতে লাগলো। আর দরজার বাইরে থেকে রুটি নিয়ে এসে দিল। উনি ভীত বাকরুদ্ধ। মংলুকে এই অবস্থায় দেখে উনি শিহরিত।
বাড়িটা দেখে কোন সময়ই পোড়োবাড়ি বলে মনে হয়নি। তবে এইসব কাণ্ডকারখানা কি চলছে?
রাত বাড়ছে ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজটাও জোরালো হচ্ছে। দূরে কোথাও শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক যেন ওনার নিজের প্রাণবায়ু কেড়ে নিচ্ছে। কেমন যেন একটা দম বন্ধ পরিবেশ?
বাইরে জোনাকির আলো মিটিমিটি জ্বলছে নিচ্ছে। হঠাৎ ওনার মনে পড়ল আজ অমাবস্যা। নিকশ কালো রাত। মোবাইলের ব্যাটারিটারও চার্জ প্রায় শেষের পথে। কি করনীয় উনি আর ভাবতে পারছেন না।
ক্লান্তি ছিল বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলেন। মখমলের মত নরম গদিতে শরীরটা এলিয়ে দিতেই ক্লান্তিটা যেন ওনার দুচোখজুড়ে চলে এলো।
কতক্ষন ঘুমিয়ে ছিলেন মনে নেই। তবে খুট করে একটা শব্দে ওনার ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘরের পিছনের জানালায় আওয়াজটা আবার হলো। মোবাইলে দেখলেন তখন রাত আড়াইটে বাজছে। একটু সাহস নিয়ে উনি জানালাটা খুললেন।
প্রথমে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলেন না। ধীরে ধীরে চোখ সয়ে যেতেই দেখলেন পেছনের আমগাছের একটা ডালে দুটো কঙ্কাল পা ঝুলিয়ে বসে আছে। শুধু বসে নেই একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছে। আর মাঝে মাঝে দুলছে।
ধীরে ধীরে অমাবস‍্যার অন্ধকার কাটতে লাগলো।আর কঙ্কালদুটোও আস্তে আস্তে রূপ বদলাতে শুরু করলো। উনি দেখলেন একজন পুরুষ আর একজন মহিলা।
কঙ্কালগুলো যখন পুরোপুরি নিজের রূপে ফিরে এলো দেখলেন পুরুষটি আর কেউ নয় স্বয়ং মংলু। মহিলাটিকে অবশ‍্য চিনতে পারলেন না।
কোনদিকে না তাকিয়ে ব‍্যাগটা কাঁধে ফেলে মোবাইলটা হাতে নিয়েই মারলেন দৌড়। কতক্ষন দৌড়েছেন জানেন না। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলেন একটি হোটেলের বিলাসবহুল স‍্যুইটে রয়েছেন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress