Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তাহলে কি || Mrinmoy Samadder

তাহলে কি || Mrinmoy Samadder

তাহলে কি

দিনটা ছিল তেরো তারিখ শুক্রবার তার ওপর অমাবস্যার রাত। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। তবে বিদ্যুৎ চমকানি বা বাজ পড়ছে না। শিয়ালদা থেকেই একটা ফাঁকা বনগাঁ লোকালের সিটে বসে আছে সমীর। বনগাঁ লোকাল এতটা ফাঁকা দেখে আশ্চর্যই হয়ে গেছিল। তবুও বাড়ি ফিরবার তাগিদে ও আর কোনো দিকে না তাকিয়ে উঠে পড়ল এবং ফাঁকা সিটে গিয়ে বসে পড়ল।
শিয়ালদা থেকে সময়মতো ধীরে ধীরে ট্রেনটা ছাড়লো।বগিতে ও ছাড়া আর চার পাঁচজন ছিল সাকুল্যে। রাত হয়েছে বৃষ্টিও পড়েছে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল একটা আমেজে। কিন্তু সমীর জেগেই বসে থাকল। সেসময় মোবাইলেরও এতোটা রমরমা ছিল না।
শিয়ালদা ছেড়ে বিধাননগর রোড এল ট্রেন। যথাসময়ে বিধাননগর রোড ছেড়ে দিল। উদ্দেশ্য দমদম জংশন। বিধান নগর রোড ছাড়বার পরপরই পাতিপুকুরের কাছে এসে ট্রেনটা হঠাৎ থেমে গেল এবং সাথে সাথেই ট্রেনের আলোও নিভে গেল। ট্রেনের ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার।
বাইরে বৃষ্টিও পড়ছে সেই কারণে পাতিপুকুর অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগও খুব সম্ভবত ছিল না। ফলে ট্রেনের ভেতরে এবং বাইরের পরিবেশ রীতিমতন অন্ধকার এবং ভয়ঙ্কর।
বাইরে অন্ধকার সাথে বৃষ্টি,চাঁদের আলোও নেই আর ওদিকে ট্রেনের ভেতরেও অন্ধকার। কিছুই দেখা যায়না। এক হাত দূরের মানুষকেও ছায়ামূর্তি বলে মনে হয়। এমন পরিবেশে আরো ভয়টাকে জাগিয়ে তুলেছে একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ।
এমন সময় একটা হাত সমীরের ঘাড়ে এসে পড়ল এবং বলে উঠলো কিরে সমীর কেমন আছিস? বাড়ি ফিরছিস বুঝি? ট্রেনে তো একদম লোকই নেই তোর ভয় লাগছে না এরকম ফাঁকা ট্রেনে যেতে।
কে তুই আর আমাকে চিনলি কিভাবে?
আরে আমাকে চিনতে পারলি না। আমিতো শ্যাম রে, শ্যাম। মনে পড়ছে একসাথে পড়তাম স্কুলে। এখন তো এই দমদমে থাকি রে। তাই আর ওদিকে যাওয়া হয়ে ওঠে না।
আরে তুই শ্যাম, কেমন আছিস? আর এই অন্ধকারে আমাকে চিনলি কিভাবে? কতদিন পর দেখা হল বল তো। আয় আয় বস।
আরে নারে আমি বসব না এইতো দমদমে নেমে যাব। আর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ কেমন জ্বল জ্বল করছে। এই চোখে আমি সবকিছু দেখতে পাই যা তোরা খালি চোখে দেখতে পাস না।
সমীর শ্যামের চোখের দিকে তাকাতেই একটা হিম শীতল স্রোত ওর শরীর দিয়ে বয়ে গেল। এরকম কি কোনো মানুষের চোখ হতে পারে? ওর চোখ দুটো যেন গনগনে আগুনের শিখা। অস্বাভাবিক সে দৃশ্য।
যে হাতটা ওর ধারে ধরা ছিল এখন যেন মনে হচ্ছে হিমশীতল একটি হাত। এতো শীতল হাত তো মানুষের হতে পারে না। তাহলে কি? ও আর কিছু ভাবতে পারছে না সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ।
হঠাৎ শ্যাম বলে উঠলো কিরে কী চিন্তাতে ডুবে গেলি? আচ্ছা, বলতো এই ট্রেনটার মধ্যে তোর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কি করবি তুই? না, মানে বলতে চাইছি যদি তোর হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
এরকম কথা বার্তা চলছে এমন সময় ট্রেনটা নড়ে উঠলো আর চলতে শুরু করলো। শ্যাম আবার বলে উঠল চলি রে ভালো থাকিস পরে কোন সময় আবার দেখা হবে।
একথা বলেই শ্যাম উধাও হয়ে গেল যেন কর্পূরের মতো গায়েব হয়ে গেছে। এদিকে ট্রেনের আলো জ্বলে উঠেছে। সমীর তন্নতন্ন করে খুঁজেও শ্যামকে কোথাও পেল না। ট্রেন ধীরে ধীরে দমদমে ঢুকলো, দাঁড়ালো। এবং জানতে পারল ও যে ট্রেনে আছে এই ট্রেনেই পাতিপুকুরে একজন কাটা পড়েছে এবং সাথে সাথেই মারা গেছে।
তাহলে কি? তাহলে কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress