সূচনা পর্ব
মহাভারতের প্রতিটি পাতাই যেন রত্নখনি,অমূল্য সম্পদে পরিপূর্ণ, প্রতিটি চরিত্রই স্বমহিমায় উজ্জ্বল!
মহাভারত শ্রষ্টা ব্যাসদেব রাজা শান্তনু মহামহিম ভীষ্ম বিদুর ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডু দ্রোণাচার্য ইত্যাদী সূত্রধরদের সময় পেরিয়ে যখন আমরা দূর্যোধন দূঃশাসন যুধিষ্ঠির ভীম অর্জুন কর্ণ শকুনি ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনীতে প্রবেশ করি তখনই মহাভারতের আসল মোড়। এই সময়টাই মহাভারতের সুবর্ণ যুগ, তার বিস্তার ঘটনা পরম্পরা ও কাহিনী বিন্যাস মহাভারতের মূল বিষয়বস্তু।
কৌরব ও পাণ্ডবদের মাঝে জ্ঞাতি শত্রুতার যে চিত্র মহর্ষি ব্যাসদেব অঙ্কিত করেছেন তা স্বাভাবিক। আবহমান কাল থেকেই প্রতিষ্ঠা ও অধিকার রক্ষায় এই লড়াই চলে আসছে। মহর্ষি কশ্যপের দুই স্ত্রী দিতি ও অদিতির পুত্র দৈত্য ও দেবতাদের মাঝেও এই প্রতিষ্ঠা ও অধিকার রক্ষার লড়াই হয়েছে। দেবতা ও দৈত্যদের এই অধিকার রক্ষার লড়াইএ কোন পক্ষই সবসময় ধর্মযুদ্ধ করেছ এমন নয় দুপক্ষই প্রয়োজনে স্বেচ্ছাচার করেছে। ওই ” মারি অরি পারি যে কৌশলে”, এই নীতি অনুসরণ করে।
দূর্যোধন দূঃশাসন যুধিষ্ঠির ভীম অর্জুন সকলেই কুরু বংশের সন্তান, সম্রাট কুরু থেকে ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডু পর্যন্ত কুরু বংশের প্রবাহ একই ধারায় প্রবাহিত। হঠাৎই দূর্যোধন শত ভ্রাতাদের কৌরব অর্থাৎ কুরু বংশীয় আর যুধিষ্ঠির পঞ্চ ভাইদের পাণ্ডব অর্থাৎ কুরু বংশের উপ গোত্রীয় আখ্যায়িত করা হলো। এর পেছনে কি মহৎ উদ্দেশ্য ছিলো মহাভারতে তা অনুক্ত হলেও ধারনা করা যায় সাম্রাজ্যের অংশ থেকে বঞ্চিত করাই এর প্রাথমিক লক্ষ্য।
প্রথম থেকেই পিতৃহীন পাণ্ডবদের কিভাবে প্রতিপদে হেনস্তা ও দুর্বল করা যায় দূর্যোধন সুচারু রূপে তাই করছিলেন। নিজেকে হস্তিনাপুরের ভাবি যুবরাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। শৈশবেই প্রতিদ্বন্দ্বি ভীমকে হত্যার চেষ্টা, কারনে অকারনে যুধিষ্ঠিরদের সাথে অশালীন আচরন, অভিভাবকদের দৃষ্টিতে তাদের হীন প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা, এসবই দূর্যোধন অতি নিপুণতার সাথে করেছেন। বারাণাবতে যুধিষ্ঠিরদের পুড়িয়ে মারার চক্রান্ত করতেও তিনি দ্বিধা করেন নি, অর্থাৎ লক্ষ্য ওই একটাই প্রতিষ্ঠা ক্ষমতা ও অধিকার সুরক্ষা।
যুবরাজ পদে ক্ষমতাধর পিতা ধৃতরাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন ছিল দূর্যোধনের প্রতি, কিন্তু সমসাময়িক নিয়মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকায় যুধিষ্ঠিরের যুবরাজ হওয়ার দাবীকে তিনি উপেক্ষাও করতে পারছিলেন না। রাজ সভার সংখ্যা গরিষ্ঠের বিচারে একসময় তিনি বাধ্য হন হস্তিনাপুরের যুবরাজ হিসেবে যুধিষ্ঠিরকে স্বীকার করে নিতে। আর তখনই যুধিষ্ঠিরদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করার সেই ঘৃণ্য চক্রান্ত বারাণাবত কাণ্ড। রাজা হিসেবে ধৃতরাষ্ট্রের কাছে এই তথ্য অজানা থাকার কথা নয়। ধৃতরাষ্ট্র যে একজন প্রতিহিংসা পরায়ন ও ক্রুর স্বভাবের মানুষ ছিলেন একথা তার পরবর্তী ক্রিয়াকলাপেই প্রমাণিত। যাইহোক কৌরব ও পাণ্ডবদের মহাভারতীয় দ্বন্দ্ব চলুক আপন গতিতে আমি তৎকালীন সময়ের দুই মহাধনুদ্ধর কর্ণ ও অর্জুনকে নিয়ে কিছু তথ্য ভিত্তিক ( সবটাই মহাভারতে উল্লিখিত ) আলোচনার প্রয়াস করবো। আমি আশা করবো দুই তিন পর্বের এই সরণীতে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা পাব। মুখবন্ধে যদি চিত্রাঙ্কনে কোন ত্রুটি থেকে থাকে আমাকে সম্যকভাবে জানালে উপকৃত হব।
ধন্যবাদ সহ
আগামী সংখ্যায়
কর্ণ ও অর্জুন সংবাদ
প্রথম পর্ব