শরৎচন্দ্রের “ছদ্মনাম” এ সাহিত্য
শরৎচন্দ্রের ছোটবেলা নিদারুণ দারিদ্র্যবশ্যতা ও পরাশ্রিত হয়ে থাকায় তার জীবনে এসেছিল এক পরম আশীর্বাদ— সে কারণেই ভবিষ্যতে কলমাস্ত্রে, প্রখর ও শাণিত আঘাত হানতে পেরেছিলেন কুসংস্কারযুক্ত সমাজের প্রতি।
হুগলি জেলার ছোট্ট গ্রাম , দেবানন্দপুরের এক অতি দরিদ্র পিতা মোতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবীর শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান, সবার বড়ো দিদি অনিলা দেবী, পরবর্তী চার ভাইদের মধ্যে দুজন শৈশবস্থায় মারা যায়, অপর দুজন, প্রভাষচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র সবার শেষে ছোট বোন সুশীলা দেবী। বাল্যবস্থা কাটে ভাগলপুরে মাতামহের বাড়িতে।
খুব কাছের থেকে অবহেলিত নারী চরিত্র সকল অবলোকন করতে পেরেছিলেন, — উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং অতি নিম্নবিত্ত পরিবার ও নারীদের, আর পতিতাদের।
নারীরা সমাজে সর্বস্তরে উপেক্ষিতা বলেই হয়ত কলম ধরেছিলেন নারীদের হয়ে ছদ্মনামে—- প্রথমেই স্বর্গীয়া দিদির সম্মানে “অনিলা দেবী” ছল্মনামে লিখলেন এক প্রবন্ধ “নারীর মূল্য ” ধারাবাহিকরূপে “বোঝা, “হরিচরণ”।
পরে, “অপরাজিতা দেবী” ও “অনুরূপা দেবী” নামেও কিছু। এ ছাড়াও ছদ্মনাম নিয়ে লিখেছেন, শ্রীকান্ত শর্মা , শ্রী চট্টোপাধ্যায়। আবার “পরশুরাম” নামেও, যে নামে কিনা সাহিত্য জগতে রাজশেখর বসু অধিক পরিচিত।
সবচেয়ে মজা হলো যখন “কুন্তলীন” সুবাস নির্মাতা এক গল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তখন শরৎচন্দ্রের বয়স ছাব্বিশ বছর, প্রায় প্রতিষ্ঠিত লেখক। লিখলেন এক গল্প, “মন্দির” কিন্ত লেখকের নাম দিলেন তার মাতুল— সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।
এরপর সে গল্প মনোনীত হয় ও প্রথম পুরস্কারের জন্য স্থির হলে, প্রকৃত লেখক শরৎচন্দ্র সে “কুন্তলীন” (1902) পুরস্কারে ভূষিত হন।