স্বাধীনতার ৭৫ —
দেখা হবে আদ্যপ্রান্ত বর্ণমালা জুড়ে
স্বাধীন ভাবনার স্বরচিত অক্ষরে অক্ষরে,
জন্ম হবে নতুন ভোরের
সাজবে শব্দ, গড়ে উঠবে উপাখ্যান,
কবর-শ্মশান-শব ধুয়ে ফিরে পাবে প্রত্যাশিত স্বাধীনতার মান-সন্মান।
আমার কলকাতার পথে-ঘাটে, দেওয়ালে দেওয়ালে সাজবে ভাষার সহজ পাঠ।
কবিতার শরীর পেয়েই যাবে মাটি, অন্তহীন ক্ষোভ লুকিয়ে শিকড় জুড়ে ছড়িয়ে দেবে স্বাধীনসত্ত্বার পাঠ।
স্বাধীনতার ৭৫ —
দেখা হবে পোড়া-রুটি জুড়ে অনাহারে
অন্নের ভাঙাচোরা থালায় দুমড়ে মুচড়ে,
সফলতার মিছিলে অথবা স্বগতোক্তির সমাহারে
বিনাবাক্যে কিম্বা সত্যের মুখ রুদ্ধ করে,
আমার গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে, নিরন্ন-বুভুক্ষ মানুষের কবর ফুঁড়ে হেঁটে চলব গটগট।
ভয়ংকর বদলের অপাংতেয় লাশ হয়ে পড়ে রব বিদ্রোহী ইতিহাসের সন্নিকট।
স্বাধীনতার ৭৫ —
আবার দেখা হবে অপভ্রংশ মাঝরাতে একদিন
তিনকাল পার করে পতঙ্গের মতো সটান,
সকল ইচ্ছার পরাকাষ্ঠায় তর্জনী উঁচিয়ে
কর্কষ গলায় সকল অখ্যাতির দায় চাপিয়ে,
সবল কন্ঠে পৃথিবীর সকল রস শুষে নিতে
বসুন্ধরার বুকের উত্তাপ ছিনিয়ে নিতে অন্ধ-গহ্বরে থাকব ওঁত পেতে।
স্বাধীনতার ৭৫ —
দেখা হবে ক্ষয়িষ্ণু অরণ্যে দিনভর
সুন্দরী কাঠের হয়ে বিকৃত ঠিকাদার,
বন্যপশু মেরে, হাড়-মাংস শিকারে
নিষ্কলুষ কুশলতায়, নীতিহীন শিল্পীর শিওরে,
তীব্র বৈরিতায় অর্বাচীন সুখের উল্লাসে মেতে
নিপুণতার বুনট নকশায় অসঙ্গতির বিভূতি মেখে
পড়ব ঝরে নিরুত্তাপ এক টুকরো মেঘ খুঁজতে খুঁজতে।
স্বাধীনতার ৭৫ —
দেখা হবে বিহ্বল ফুটপাথে নয়তো বন্ধ্যা গলিতে
দ্বাদশ আশ্চর্য উপলব্ধির ইচ্ছাতে,
নিরাশ্রয় বিস্তর, সকলই সার্কাসের জাগলার
লাগাম ছেড়ে একলাফে, হাড়-পাঁজর উঠেছে কেঁপে
আত্মনাশা ফুঁষছে মাটি,ছন্নছাড়া জীবনের বেদনাতুর শিহরণ
সশস্ত্র হাতে উপড়াতে চায় সর্বনাশা দুঃশাসন।
স্বাধীনতা ৭৫ —
আবারও দেখা হবে সহস্র স্লোগানের সুরে
আকাশ বাতাস রাঙিয়ে সাতবাহারে,
জাতগোলামীর পঙ্কিল শেকল ছিঁড়ে
দুর্জয় প্রতিশ্রুতির অনন্ত বক্ষ চিরে
উন্মুক্ত আকাশ ও উলঙ্গ ফুটপাতে বর্ণাঢ্য আড়ম্বর সাজিয়ে
আবারও একবার উদাসীন পার হব জগত-সংসার,
অমর সংগ্রামের গরীমাময় শক্তি সঞ্চয় করে
মাথা তুলে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটবো সবাই নতুন করে একসাথে, এক হৃদয়ে —
স্বাধীনতার অমলিন সাজে, গভীর কৃতজ্ঞতার ভাঁজে ভাঁজে
দেশ ভক্তির বন্দনা-গীতি অসম্ভব ক্ষীপ্রতায় চলুক বয়ে।