Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভাষাবিভ্রাট || Satyajit Chowdhury

ভাষাবিভ্রাট || Satyajit Chowdhury

ভাষাবিভ্রাট

নারী পুরুষের ভালবাসা চিরন্তন। সেখানে জাতপাত, ধর্মবর্ণ সবকিছু গৌণ হয়ে যায়। এমনই হয়েছিল আমাদের কলিগ সৌমিত্র ওরফে রাজুর বেলায়।

আশির দশকের কথা। মেঘালয়ের তুরা শহরে সৌমিত্রের কাকু নবারুণ বসাক ছিলেন রাজ্য সরকারের একজন উর্দ্ধপদস্ত অফিসার। চাকরির সন্ধানে কলকাতা থেকে রাজু এলো কাকুর বাড়িতে। কাকুর ছেলে বিকির সাথে রাজুর অল্প দিনেই বেশ ভাব জমে উঠল। মাস তিনেকের মধ্যে বেশ অনেকগুলো ইন্টারভিউ দেওয়া হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত শিকে ছিড়লো স্টেট ব্যাংকের চাকরিতে। পোস্টিং হলো সদর শহর তুরাতেই।

তুরা শহরকে অচিরেই ভালোবেসে ফেলেছে রাজু। চারিদিকে শুধু সবুজের সমাহার। প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালে সবুজ আবির দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছেন এই রূপসী শহরকে । বাবুপাড়ার মনোরম ঝর্ণার পাড়ে বসে রাজু নিজের অজান্তে গুনগুনিযে উঠে। ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’।

অফিসে কলিগদের সাথে কয়েকদিনেই বেশ সখ্যতা গড়ে উঠল। এখানে স্থানীয় গারো উপজাতীয় কলিগ দের মধ্যে দু’জন মহিলা কলিগও আছেন। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। রোজি ও রুসেবেলা। ওদের প্রানবন্ত ব্যবহারে রাজুর মনে হলো যেন অনেকদিনের চেনা।

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে রাজু রুসেবেলার প্রেমে পড়ে গেল। কি সহজ সরল মন । ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। মনে যা আসে তাই বলে ফেলে।

বছর ঘুরতেই দু’জনে সাতপাকে বাঁধা পড়ল। মেয়ের বাড়িতে চার্চ এর নিয়মে ছেলের বাড়ী বাঙালী মতে। রুসেবেলা হাতে শাখা-পলা, শাড়ী পড়ে চেষ্টা করছে খাঁটি বাঙালী হওয়ার।

বছর পাঁচেক পরের কথা। রুসেবেলা এখন বেশ ভালো বাংলা বলতে পারে।. বাঙালী কলিগদের সাথে বাংলাতেই কথা বলে । কিন্তু এখানেই লাগল বিপত্তি। শব্দের মারপ্যাঁচে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো, কলিগেরা হেসে কুল পেত না।

এমনই একবার অফিসে রুসেবেলা একাই এসেছে. রাজু আসেনি। জিজ্ঞেস করাতে বলল। আপনাদের বন্ধু মেয়েছেলে নিয়ে স্কুলে গেছে। পেরেন্টস মিট আছে। চারদিকে হাসির রোল পড়ল। কোনকিছু বুঝতে না পেরে রুসেবেলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। আমাদের সিনিয়র কলিগ সৌমেনদা এগিয়ে আসেন। রুসেবেলাকে নিজের বোনের মত ভালোবাসে। রুসেবেলাকে এককোণে ডেকে নিয়ে ‘মেয়েছেলে’ ও ‘ছেলেমেয়ে’ শব্দ দু’টির মানে বুঝিয়ে দেয় ।

আর একবার রুসেবেলা কলকাতায় শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে পুজোর ছুটি কাটিয়ে। ইতিমধ্যে শাড়ী পড়া বেশ রপ্ত করে ফেলেছে। অফিসে এসেছে সুন্দর একখানা জামদানি শাড়ী পড়ে। সবাই জিজ্ঞেস করলো। কি রে বেলা? শাড়ীটা কি তোকে শ্বশুর বাড়ী থেকে দিল? কি সুন্দর শাড়ী! শ্বশুরবাড়ী নিশ্চয়ই খুব বড়লোক। না, না,. রুসেবেলা বাধা দিয়ে উঠল। শ্বশুরবাড়ী মোটেও বড়লোক নয়, ওরা ভীষণ ছোটলোক। আবার চারিদিকে অট্টহাসি। হাসির উৎস বুঝতে না পেরে রুসেবেলা সবার মুখ ঘুরে ঘুরে দেখছে। সব সমস্যার মুশকিল আসান আমাদের সবার প্ৰিয় বাণীদি রুসেবেলাকে আড়ালে টেনে নিয়ে শুদ্ধ গারোভাষায় বড়লোক ও ছোটলোক শব্দ দু’টির রহস্য বুঝিয়ে বলল। বড়র বিপরীত শব্দ ছোট হলেও বড়লোকের বিপরীত শব্দ ছোটলোক মোটেও নয়। ছোটলোক তুচ্ছাতে নিচুমনের মানুষকে বুঝায়। সমস্ত ব্যাপার বুঝতে পেরে রুসেবেলা হেসে বলল। আমাদের গারোভাষাই ভালো। বাংলাভাষার মত খটমট নয়।

আবার চারদিক থেকে হাসির ঝড় উঠল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress