অদৃষ্ট
দর্পণ তিতলির ছবির পেন্সিল স্কেচ করে বসে আছে। আর ভাবছে ওকে কি ড্রেস মানাবে। শাড়ি পরাব,না স্কার্ট! অবশেষে সালোয়ার কামিজ পরাবে মনস্হির করে। দর্পণের আঁকতে আঁকতে কত কথা মনে পড়ে।মনে পড়ে কলেজ লাইব্রেরীতে প্রথম দেখার কথা, বন্ধুত্বের কথা, কলেজ প্রাঙ্গণে টেবিল টেনিস খেলা, সিনেমা দেখা। মেলামেশাটা বেশি হতো কেননা তিতলির বাড়ি শিলিগুড়িতে।তাই তিতলি কলেজ হস্টেলে থাকত। পড়াশোনা ও ঘোরাঘুরি করতে করতে বি.টেক,এম বি এ পড়াশোনা পর্যায়ক্রমে সব শেষ। তিতলি শিলিগুড়ি ফিরে গেছে। দুজনেই ব্যাঙ্গালোরে ইম্ফোসিসে চাকরি পেয়েছে। সামনের মাসে দুজনের জয়েনিং ডেট। তিতলি বলেছে বাবা ও মাকে এবার তাদের সম্পর্কের কথা বলবে। বাবা নাকি ভীষণ রাগী মানুষ।কষ্টে রাজি করাতে হবে। প্রায় এক সপ্তাহ হলো তিতলি বাড়ি গেছে। এরপর ফোনে একবার যোগাযোগ হয়েছে।বলল আমাদের সম্পর্কের কথা বাবা ও মা জানতে পেরেছে। তাই ব্যাঙ্গালোরে যে চাকরি পেয়েছি আপত্তি করে নি।তবে ব্যাঙ্গালোর যাবার আগে আমাদের বাড়িতে এসো। বাবা ও মার সঙ্গে আলাপ করে যেও। ঠিকানা টা দিয়ে ও দিয়েছে। দর্পণ ভাবতে ভাবতে দেখে অজান্তেই কখন আঁকা ছবিতে রং করা শুরু করে দিয়েছে। শাড়ির পাড়ে শেষ কল্কা টানতে গিয়ে #তুলির টান দিতেই লাল ছোঁপ লাগে শাড়িতে।কোন রকমে ঠিক করার চেষ্টা করে। দর্পণ আঁকা শেষ করে তিতলিকে ফোন করে , কিছুতেই ফোন ধরে না।হোয়াটস অ্যাপ ও বন্ধ। শেষ দেখেছে ওই ফোন কলের দিন। দর্পণ ছবি সুন্দর করে প্যাক করে পরদিন শিলিগুড়ি ছোটে। ঠিকানা দেখে তিতলির বাড়িতে যায়। তিতলি ছবিতে মালা দিয়ে পুজো হচ্ছে।কি শ্রাদ্ধ পুজো!ওই দেখে দর্পণ সেখানে অজ্ঞান।হাত থেকে ছিটকে পড়ে তিতলির ছবি। অপঘাতে মৃত্যু তিনদিনে কাজ হয়।দর্পণের চোখ খোলে তখন দেখে খাটে শুয়ে।এক মহিলা জিজ্ঞাসা করে শরীর কেমন লাগছে বাবা। কোলকাতা থেকে আসছ! কাঁদতে কাঁদতে বলে তিতলির কি হয়েছিল।গাড়ি দুর্ঘটনার জন্য তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়েছে। তোমার তো মা বাবা নেই।আজ থেকে তুমি আমার ছেলে।দেখবে চলো তোমার আঁকা ছবি পুজোর ওখানে টাঙানো হয়েছে। দিন কেটে গেছে তিতলির মা ও বাবা দর্পনের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোর থাকে।মাঝে মাঝে তিনজনের চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।কি আর করা যাবে। তিতলিকে তুলির টান দিয়ে আঁকা হলো বটে, কিন্তু সংসার করা হোলো না।