উৎসবের ঋতু-শীতকাল
প্রকৃতির ঋতুরঙ্গে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ঋতু হলো শীত! রবি খন্দের ফসলে প্রকৃতির ডালি উপচে পড়ার সময় এটাই। কৃষিজীবীদের উৎসবের মরশুম। বাংলার কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সংস্কৃতির উৎসবের ঋতু এই শীত। টুসু ও মকর সংক্রান্তির উৎসব ও মেলা খেলায় মেতে ওঠে বাংলার গ্রাম গঞ্জ। সোনালী ধানের সম্ভারে খামার ভরে ওঠে। পৌষলক্ষ্মীর খামার পূজার আয়োজনে মেতে ওঠে সবাই। নবান্নের নতুন চালের অন্ন ঔ পিঠা-পায়েসে আপ্যায়িত হয় অতিথি অভ্যাগত ও প্রতিবেশীরা।
হিমেল হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় নলেন গুড়ের সুবাস। সরষে সূর্যমুখীর খেতে হলুদের বান ডাকে। সবজি ক্ষেতের শ্যামলিমায় চোখ জুড়িয়ে যায়। আঘুন হিমের আবছা কুয়াশায় শীতের আবাহন গড়িয়ে চলে। টুসু স্থাপনও হিমেল সাঁঝে টুসু আরাধনায় মেতে ওঠে প্রান্তিক বাংলার মানুষ জন। বাতাসে ভেসে বেড়ায় টুসু গানের কলি—
“উলটপালট ফুলোট বাঁশিতে
সুরে তালে কাঠি পড়ে না!”
পৌষ কে বরণ করে সকলে এই বলে—–
” এসো পৌষ বস পৌষ খাও পিঠে পুলি
বউডি ঝিউডি পায় যেন সোনার শাঁখা রুলি।”
এই শীতকালেই কৃষিজীবী মানুষেরা মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ ধন্য থাকেন। লোক উৎসব এর মহা মিলন মেলায় মেতে ওঠে সবাই। পুরুষানুক্রমে চলে আসা উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে প্রান্তিক বাংলা।
বিভিন্ন নদীর ঘাটে ঘাটে বসে মকর মেলা। টুসুর রামধনু রঙিন চৌদলের রঙে ঝলমল করতে থাকে নদী ঘাট। টুসু গানের মায়াবী সুর ভেসে বেড়ায় নদীর চরের লিলুয়া বাতাসে। সামাজিক সচেতনতা কিংবা মানবিক সুখ-দুঃখের কাহিনীর বাখান চলে গানের সুরে। কৃষি লক্ষ্মী ও ঘরের মেয়েকে একাত্ম করার সহজিয়া ভালোবাসাই এই শীতের উৎসব কে এত প্রাণবন্ত করে তোলে।
হিমেল বাতাসে ,খেজুর গুড় , পুরপিঠা র সুবাসে, ঝুমুর টুসুর মায়াবী সুরে সেই চিরচেনা আত্মিক সুর ভেসে আসে—–
“তোরা কে যাবি আয়
যাবি কে আয়
আমার সোনার সেই গাঁয়ে
যেথা বসে আছে মা জননী
আমায় নিতে কোল বাড়িয়ে
আমার সোনার সেই গাঁয়ে—-“
শীতের ঝরা পাতার সাথে জীবনের দুঃখ বেদনা কে ঝেড়ে ফেলে নতুন খুশির ,নতুন আশার, নতুন আনন্দের খোঁজে শুরু করে নতুন যাপন!