নবরাত্রি
আমেদাবাদ শহর। উৎসবের আবহ।
নবরাত্রির উৎসবের প্রাঙ্গণ! একদল মেয়ে চিত্রিত মাটির পাত্রে প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে প্রদক্ষিণ করে নেচে চলেছে! পাত্রটি গর্ভের প্রতীক! নবরাত্রির নদিনে মায়ের নটি বিশেষরূপে আরাধনা করা হয়। প্রত্যেকদিন একটি বিশেষ রং সূচিত করে। ভক্তেরা ওই বিশেষ রঙের পোশাকে সজ্জিত হন। উৎসবের শুরু মহালয়ার পরদিন থেকে শেষ হয় মহানবমীতে।
প্রথম দিন মা শৈলপুত্রী। শিব সহচরী মা ত্রিদেবের মিলিত রূপ । প্রথম দিনের রং লাল যা উদ্যমের প্রতীক। এরপর ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সর্বশেষে সিদ্ধিদাত্রী—- এই নয় রূপের মায়ের আরাধনা করা হয়!
প্রথমদিনে নবরাত্রি প্রাঙ্গণে এই গুজরাটি মেয়েদের দলে একমাত্র বাঙালি অদ্রিজা ! লাল রংয়ের ঘাঘরা চোলি ও লাল ওড়না য় ওকে সাক্ষাৎ শৈলপুত্রী লাগছে। সব মেয়েদের মাঝেও যেন লাল পদ্মের মতো জ্বলজ্বল করছে। ওরা প্রবাসী বাঙালি! তিন পুরুষের! ওর দাদু কর্মসূত্রে এসেছিলেন এখানে!
গুজরাটি মন্ডলের সভাপতি রাতুল পারেখ বারবার ওকে দেখছেন আর চোখ মুছছেন। অশীতিপর বৃদ্ধ বারবার অতীত স্মৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছেন—- ওনার স্ত্রীকে এমনি নবরাত্রি উৎসবেই প্রথম দেখেছিলেন– তারপর প্রেম ও পরিণয়! একসাথে তিন দশকের পথ চলা— তারপর হঠাতই পথ আলাদা– না ফেরার দেশে চলে গেলেন রূপাবেন– রাতুলের স্ত্রী। আজ অদ্রিজা কে দেখে রাতুলের সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে। সেদিনও রূপবেন এমনই রক্ত লাল ঘাঘরাচোলিতে সেজেছিলেন। লাল ওডনার আঁচল একইভাবে চক্রাকারে ঘুরছিল নাচের ছন্দে ছন্দে।
বসে বসে স্মৃতিচারণ করছিলেন রাতুল। মন্ডল সভাপতি হিসেবে এই উৎসবের অনেক দায়িত্ব তাকে পালন করতে হয়। একজনকে ডেকে অদ্রিজার পরিচয় জানতে চাইলেন। অদ্রিজা রায় শুনে অবাক হয়ে বললেন বাঙালি –গুজরাটি নয়?
অদ্রিজা সুন্দরভাবে এই সংস্কৃতি কে আপন করে নিয়েছে! নিজের বাঙালি সংস্কৃতি ও কিন্তু ভোলেনি। বিজয়া দশমীর মাতৃ বরণ কিন্তু ও বাঙালি মতেই করে। নাচ শেষে সব শিল্পীদের সংবর্ধনা দিতে গিয়ে অদ্রিজা কে ডাকলেন— বললেন– ” তুমি মা সাক্ষাৎ শৈলপুত্রী– শিব সহচরী,– ত্রিদেবের তেজ সমন্বিতা! তোমার রক্ত লাল বেশ উদ্যোমে প্রতীক। তুমি সর্ব সিদ্ধিদাত্রী সফলতা ও মঙ্গল প্রদানকারী। তোমাকে প্রণাম।”
পূজা পরিক্রমা র প্রারম্ভে এই আত্মিক বন্ধনের চিরচেনা সুর গুনগুনিয়ে উঠল সবার মনে। প্রবাসী বাঙালি মনন ও গুজরাটি সংস্কৃতি একসঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠল ঐক্যের বন্ধনে।