জঙ্গল গড – এক না বলা কাহিনী
পলাশের আগুনঝরা চৈতি বিকেল! শেষ সকাল থেকে হেঁটে চলেছি এক ভাঙা কেল্লা দেখতে! জঙ্গল পথে প্রায় কুড়ি কিমি পথ! সাথী বলতে দুটি আদিবাসী কিশোরকিশোরী, বুধন ও গুরুবারি! বুধ বারে জন্ম তাই বুধন ও বৃহস্পতির জাতিকা বলে গুরুবারি॥ খুব প্রাণোচ্ছল ওরা! আমাকে এই ভাঙাকেল্লার গল্প বলতে বলতে নিয়ে চলেছে! উঁচু নিচু পাথুরে ভূমি! শাল, মহুয়া, পলাশ, শিমূলের হরজাই জঙ্গল! এই চৈত্র মাসে জঙ্গল যেন গরবিনী রূপসী! পলাশ শিমূলের রক্তিমা, কচি শালপাতার সবুজ, শালমঞ্জুরীর বাসন্তীর রঙে সেজেছে বনভূমি॥ বেশ কিছুটা যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লাম একটা ফুলে ছাওয়া শিমূলের তলায়॥ কত না পাখি ঐ গাছে ফুলের মধু খেতে এসেছে! বুলবুলি ও দোয়েল কে চিনতে পারলাম, বাকী সব অচেনা!
এই জঙ্গলে যে ভাঙা কেল্লা আছে তা এক আদিবাসী রাজার কেল্লা॥ রাজা ছিলেন শিবভক্ত! তাঁর কেল্লায় এক জাগ্রত শিবমন্দির ছিল! সেই মন্দির ঘিরেইরাজার কেল্লা, ঝামাপাথরে তৈরী॥ চারপাশে পাথরের প্রাচীর! প্রাচীরের মাঝে মাঝে বট, অশ্বথ্থের চারা প্রাচীর ফাটিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে॥ রাজা খুব স্বাধীনচেতা ছিলেন॥ইংরাজদের সাথে সংঘর্ষের সময় কজন বিশ্বাসঘাতক খাবারজলের কুয়োয় বিষ মিশিয়ে দেয়!ফলে রাজার সৈন্যরা হেরে যায়! রাজা যুদ্ধে মারা যান॥ জঙ্গলগড় শ্মশাণ হয়ে যায়॥
এবার ঐ আদিবাসী কিশোর কিশোরী আদিবাসী ভাষায় গান শুরু করে!এই রাজার বীরত্বেরগাথা॥ অদ্ভুত মায়াময় সুর, ওই সুর ভেসে বেড়াতে থাকলো চৈতি বাতাসে, বিষাদগাথা বয়ে চললো দূর থেকে আরও দূরে॥ অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর আবার যাত্রা শুরু কোরলাম॥ভাঙা তোরণ দিয়ে প্রবেশ করলাম ভাঙা গড়ে, ”জঙ্গলগড়”, অদ্ভুত নীরবতা, কোন আওয়াজ নেই চারধারে॥ পা পা করে উঠলাম কেল্লার বুরুজে॥ অলিন্দে দঁাড়িয়ে দূরে দৃষ্টি মেলে দিলাম ! সারা জঙ্গলপাহাড়ের দৃশ্য যেন ছবির মত ধরা দিলো॥ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে ছাদে উঠলাম! বেশীর ভাগ টাইধ্বসে গেছে॥ বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে ভাঙা সিঁড়িটা॥ কোনরকমে নিচে নেমে এলাম॥ এবার প্রাচীরের ওপর উঠলাম, কিছুটা ভালো আছে॥ ওখান থেকে দূরের রাস্তাটা বেশ সুন্দর দেখা যাচ্ছে॥ দুপাশে লালসবুজ রঙিন জঙ্গলেরমাঝ দিয়ে এয়োতির রাঙা সিঁথির মত রাস্তাটা চলে গেছে দিগন্তের পানে, জল ই যে জীবন ….এই পরিত্যক্ত গড় কে না দেখলে বোঝা যেত না …….. খাওয়ার জলের একমাত্র কুয়ো টার জল বিষ।ক্ত হয়ে যাওয়ায় পুরো জন বসতি শেষ হয়ে গেল …… ॥ তারপর থেকে এই অঞ্চল যেন অভিশপ্ত হয়ে পড়ে ……. ধীরে ধীরে সব ধবংস স্তুপে পরিণত…. খালি লোককথায় বেঁচে থাকে জঙ্গলগড়ে র কাহিনী . ….॥