মাতৃ আত্মদান
বাঃ খুব সুন্দর ছবি জেঠিমা। কোন দেশের ছবি? দেশটা যেন চাদরে ঢাকা।
দাদার অস্ট্রেলিয়ার বন্ধু পাঠিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের গিপ্সল্যান্ড অঞ্চলের এই ছবি। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর বন্যার পরেই মাকড়সাগুলো এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
কি কান্ড গো?
ছবিটায় দেখ গ্রাম ঢেকে গেছে মাকড়সার জালে!
গাছ, ঝোপঝাড়, পথ সব ঢেকে গেছে সিল্কের মতো পাতলা চাদরে। তবে এগুলো আসলে সিল্ক নয়, বরং মাকড়সার বিশাল সব জাল।
ওখানে মাকড়সা এতো বড় জ্বাল বোনে?
গিপ্সল্যান্ড এই গ্রামাঞ্চল এলাকায় মাকড়সা এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ জালের চাদর তৈরি করেছে।
ইস যদি যেতে পারতাম সেখানে। নিজের চোখে দেখে আরও মন ভরে যেত।ওদের দেশের লোকেরা ওদের না মেরে বাঁচিয়ে রাখছে। আর আমরা মাকড়সা দেখলে আগে বিষাক্ত স্প্রে করে ওদের মেরে ফেলি নয়তো ঝাঁটার বারি মেরে শেষ করে দিই। ওদের সাথে আমাদের শত্রুতার সম্পর্ক। আমাদের মতো ওদের ও স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার আছে।
তাইতো ওখানকার বিশেষজ্ঞদের মতে এটি মাকড়সাদের বেঁচে থাকার একটি কৌশল যাকে ‘ব্যালুনিং’ বলা হয়। এর মাধ্যমে উঁচু জায়গায় ওঠার জন্য মাকড়সারা জাল তৈরি করে।
ওখানকার অধিবাসীরা জানায় মিউজিয়াম ভিক্টোরিয়া সংস্থার পোকামাকড় কিউরেটর ডঃ কেন ওয়াকার বলেন, লাখ লাখ মাকড়সা গাছগুলোতে সুতোর জাল বুনেছে।
তিনি লক্ষ্য করেছেন মাটিতে থাকতে পছন্দ করে না বলে মাকড়সাগুলো খুব দ্রুত মাটি থেকে উঁচুতে পালানোর চেষ্টা করে গাছপালায় আশ্রয় নেয়। সঙ্গে সঙ্গে এরা গাছে জাল তৈরি করে ফেলে। এর ফলেই সেল ও লংফোর্ডের মতো জলাভূমির শহরতলিতে বিশাল জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে মাকড়সার জাল।
মাকড়সার জালটা দেখতে ভারী সুন্দর। আট বছরের দেওরঝি দেখে বলল জেঠিমা এই জালটা আমাদের মশারীর ভাল কাজ করবে। ওই মাকড়সা ধরে এনে খাটের ছত্রিতে রেখে দিলে সুন্দর ভাবে খাটটা জালে আচ্ছাদিত করে দেবে।আর মশার কামড় খেতে হবে না। ছেলেমানুষ ও তো এমন কল্পনাই করবে। তবে কল্পনা মন্দ নয়। মশাগুলো জালে আঁটকে যাবে আর মাকড়সারা ওদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। সেই খাদ্য খাদক সম্পর্ক তৈরী হবে।
স্থানীয়রা বলেন, বন্যার দেখা দিলে লেকের পাড়ে এই আশ্চর্জময় প্রাকৃতিক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। এটি ভয়ঙ্কর এমন নয়, এটি সুন্দর। গাছ, বেড়া সবকিছু এই পাতলা ফিনফিনে জালে এরা ঢেকে ফেলে। ওখানকার আরেক স্থানীয় অধিবাসী আমান্ডা ট্রেগার বলেন, তার পরিবার প্রথমে এগুলোকে রাস্তার পাশে রাখা জাল ভেবে ভুল করেছিল। এত বেশি পরিমাণে আগে দেখেনি। এটি বন্যার পরে আশ্চর্জজনক ছিল।’
কিছুদিন পরে জালগুলো ছিঁড়ে মাকড়সার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। শত শত ক্ষুদে বাচ্চা। ক্ষুধার্ত বাচ্চাগুলোর পৃথিবীতে আসার পরই তাদের খাদ্যের দরকার হয়। কিন্তু মা মাকড়সা বাচ্চাদের ছেড়ে খাবার আনতে যেতে পারেনা। ভয় পায় যদি কেউ এসে বাচ্চার কোন ক্ষতি করে দেয়। নিরুপায় হয়ে মা মাকড়সা শেষমেশ নিজ দেহটাকে বাচ্চাদের খাদ্য বানায়। বাচ্চারা খুঁটে খুঁটে মায়ের দেহ খেয়ে একসময় চলে যায়, যে যার পথে। পেছনে পড়ে থাকে মায়ের শরীরের খোলস।এখানেও মধুর সম্পর্ক। মাতৃস্নেহ থেকে এরাও বঞ্চিত হয় না।