Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৃষ্টিভেজা রোজনামচা || Manisha Palmal

বৃষ্টিভেজা রোজনামচা || Manisha Palmal

বৃষ্টিভেজা রোজনামচা

অনেকদিন পর আজ সকালে হাঁটতে বেরিয়েছি হিজলী ফরেস্টের পথে। ভোরবেলা এক ঝাঁক হরিয়াল এসে বসলো শ্বেতশিমুলের ডালে। বৃষ্টি ভেজা ডানায় দক্ষিণের মাঠের সুবাস বয়ে এনেছে এরা। চাঁপা গাছ থেকে টুপ টুপ করে জলের ফোঁটা নামছে। ফুল ভেজা সেই সুবাসি ফোঁটা সারা চরাচর কে আতর মাখাচ্ছে। মায়াবী ভোর– আতরগন্ধী। বর্ষা ভেজা সবুজের মখমলের মোডা। পাখিদের ভোরাই ছাড়িয়ে মাছরাঙ্গা তীব্র শিস শোনা যাচ্ছে। কি সুরেলা! সঙ্গিনীকে ডাকছে ও।
প্রাচী কপোল জুড়ে প্রভাতি রবির সোহাগী লালিমা চরাচর এক অলৌকিক সৌন্দর্যে ভরে দিচ্ছে। রাখা জঙ্গলের সবুজে বৃষ্টি ফোঁটার হীরকদ্যুতি। বড় রাস্তার গডানে সবুজের সমুদ্র। মাঝে মাঝে সাদা হলুদ ফুলের মীনাকারি। ঘর বিবাগী মন হারিয়ে যেতে চায় এই সবুজের মাঝখানে।
দক্ষিণের মাঠের বুক চিরে লাল রাস্তাটা এঁকেবেঁকে এয়োতির সিঁথির মত চলেছে দিগন্তের পানে। দুপাশের মাঠ ফসলের প্রাচুর্যে উথলে উঠেছে। একটু এগিয়ে পাথর চাট্টানের মাঝে একটা জলাশয়— যেন এক টুকরো শান্তির প্রলেপ! দূরে সাঁওতাল পাড়া! এই জলাশয় ওই বসতির যে কোনো উৎসবের সঙ্গী। ভূত ভৈরবী ঘেঁটু ঝিন্টির ঝোপে ঢাকা পুকুরপাড় পাখ-পাখালির স্বর্গরাজ্য। ঝোপে ঝাড়ে বুলবুলি তেলে মুনিয়ার ঝাঁকের কলকাকলি। বড় বড় মহীরুহ গুলিতে চিল প্যাঁচার বসতি। বাঁশ গাছের বিশাল ঝোপ এখানে। ওটাতো মা মনসার বাহনদের বিচরণক্ষেত্র। ছোট ও মাঝারি মাছরাঙাদের বসতি এখানে। ছোট্ট ছোট্ট তুঁতে নীল মাছরাঙ্গা গুলোর তীব্র শিস জানান দেয় ওরা এইখানের বাসিন্দা। শিরিষ গাছের ডালে তুঁতে খয়েরী কোট পরা মাঝারি মাছরাঙ্গাটা অপেক্ষা করে মাছের— তারপর হঠাৎ সবাইকে সচকিত করে ঝাঁপ দেয় জলে! লাল সাঁড়াশির মতো ঠোঁটে মাছ নিয়ে আবার এসে বসে গাছের ডালে!
ভূত ভৈরবীর গোলাপি সাদা হলুদ ফুলে মৌমাছি প্রজাপতির দখিনা যাচা যেন শেষই হয় না। শিরিষ চল্লা গাছের মাথায় সাদা বকের ঝাঁক ফুলের মতো ফুটে আছে! যখন দলবেঁধে উড়ে চলে দক্ষিণের মাঠের পানে বড় সুন্দর লাগে! দিনান্তের শেষ আলোর রেশ টুকু ডানায় মেখে উড়ে চলে পশ্চিম দিগন্তে। নেমে আসে মায়াবী আঁধার– শেষ হয় এক কর্মব্যস্ত দিনের!
উড়িষ্যা বাইপাসের বড় রাস্তার পাশের ঝিলে শাপলা শালুকের বাড়বাড়ন্ত! ঝিলের পশ্চিম পাশটা সাদা লাল শালুকে সেজে উঠেছে। ভোরের আঁধার থাকতেই লোভী মানুষের থাবা পড়ে এখানে। বাঁশের লগি দিয়ে টেনে টেনে সব ফুলগুলো নাল সমেত তুলে নেয়। ভীষণ কষ্ট হয়।

রাস্তার গড়ানে বেশ কিছু ফুল গাছ লাগানো হয়েছে- ধুতরা আকন্দ জবা টগর কলকে। বেশ ফুল ফুটছে। মৌটুসির সাথে ভ্রমণের গুঞ্জনে মুখরিত এই বাগান। ভালো লাগে। তবে নগরায়নের নাগপাশে ধীরে ধীরে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের দম বন্ধ হয়ে আসছে। রাখা জঙ্গলের সেই সুন্দর বাগান বিলাসের রঙিন বেড়া কংক্রিট প্রাচীরের কাঠিন্য ঢাকা পড়েছে। সেই বেগুনি সাদা হলুদ লাল রংয়ের মিছিল আর নেই। বাঁশ জঙ্গলটা এখন ও আছে তবে তার ও সৌন্দর্যায়ন হতে চলেছে। কোন কিছুই আর স্বাভাবিক থাকবে না। কৃত্রিমতার নকল সৌন্দর্যে ঢাকা পড়বে। মন খারাপ হয়ে যায় হঠাৎ এক টুকরো উড়ো মেঘ এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে এলো। মেঘ বালিকার বৃষ্টি চিঠি মনের কষ্টটাকে এক নিমিষে দূরে সরিয়ে ফেলল— পাতা সই যেন বৃষ্টি চিঠির ডাক পাঠালো আমার হরিয়াল মনকে! আমার ঘর বিবাগী মনটা আগল খুলে হরিয়ালের সবুজ ডানায় ভর করে উডান টানলো দিকশূণ্যপুরের উদ্দেশ্যে।
শুরু হলো বর্ষামঙ্গল — বৃষ্টিভেজা কুর্চি কদম কেয়ার সুবাস মাখা যাপন বৃত্তান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *