Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পাষন্ড || Rana Chatterjee

পাষন্ড || Rana Chatterjee

পাষন্ড

“এ এক ভারি মুশকিলে পড়া গেল,” অফিস থেকে ফিরে সন্তান রোহিতের পড়ার ঘরে নিচের ভাড়াটিয়া বাপ্পার গলার আওয়াজ পেতেই মাথা গরম হয়ে যায় সুনীলের । স্ত্রী রমলা বুঝিয়েছে বহুবার, “রাগ করো কেনো,ওই টুকু বাচ্চা সারাদিন  একা,একটু বন্ধুর সাথে খেলছে দোষের কি ! প্রথম থেকেই এমন ভাড়াটিয়াই তো খুঁজেছি আমরা ,যাদের রোহিতের সমবয়সী বাচ্চা থাকবে ।”

সব বোঝে সুনীল, তবুও ট্রেন জার্নি করে বাড়িতে এসে বাপ্পাকে ওপরে দেখলেই কেমন যেন গা’টা রি রি করে ওঠে! 

আবার রোহিত যে নিচে খেলতে যাবে তাতেও মন সায় দেয় না! যদি ছেলেটাকে ,নানা প্রশ্ন করে, বিছানায় বসতে না দেয়,এসব হাবি জাবি প্রশ্ন, মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় ।

আজ ফেরার পথে ভীষণ খিদে তাই গরম গরম জিলাপি আর চপ নিয়ে এসেছে সুনীল । ওদের দুটোকে খেলতে দেখেই গজ গজ শুরু!”এবার নাও ভাগ করে দাও পরের ছেলেকে ,যত্তসব “বলতেই বলেই ঘরে ঢুকে যেতেই , সুনীলের মুখোমুখি হয়ে রমলা শুনিয়েছে, দু চার গরম কথা।  “এই শোনো এমন নোংরা মানসিকতার হলে ,হাতে করে কিছু নিয়ে ঢুকবে না বাড়িতে! তোমার এত হিংসা ,আমি পারবো না সামলাতে তোমায় ! ওই টুকু বাচ্চাকে না দিয়ে, নিজে খেতেও আমার বিবেকে বাঁধবে বরং ,নাও একা খাও “বলে প্যাকেটটা নামিয়ে দেয়। বেরুবার সময় বলে যায় ,”আমি খাবোও না, ছুঁয়েও দেখবো না।”

স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে সুর নরম করে, গতিক সুবিধের নয় দেখে হাঁক দিল কত্তা,”কইগো কোথায় গেলে চা কি  দেবে না !” সে দিন ছিল শনিবার, তুলনামূলকভাবে জলদি বাড়ি ফেরে সুনীল। এসে জানতে পারে নিচের বৌদি আর রমলা একসাথে বাজার যাবে । পাশের ঘরে রোহিতের মতো বাপ্পাও নিচে ঘুমাচ্ছে।নিচ থেকে ভাড়াটিয়ার হাঁক এলো,” দাদা, ঘুম ভাঙলে যেন বাপ্পা ওপরে এসে বসে,দেখবেন”,এই বলে দুজনে বেরিয়ে গেল। 

ঘড়িতে তখন সাতটা পনের বাজছে। তীব্র গরমে মাথাটা যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে সুনীলের।হালকা করে গান চালিয়ে টিভির খবরে নজর দিতে বসতেই ,”ওরে বাবা,পাশের  রুমে শুরু হয়েছে দুই হনুমানের দাপট ততক্ষনে, এবার বিছানার গদিটা যেন ফাটিয়ে দেবে মনে হচ্ছে ! ” টিভির আওয়াজ  মিউট করতেই, “কে যেন ধুপধাপ করে নিচে গেল ,শুনতে পেয়ে “তবে কি নিচের বাপ্পা কিছু আনতে নিচে নামলো”! 

হঠাৎ তড়াক করে লাফিয়ে সুনীল, বাথরুমের ছোট বালতিটা জল ভর্তি করে, কি মতিভ্রম হলো কে জানে,  সিঁড়িতে ঢেলে,আলো নিভিয়ে এসে চুপচাপ আবার  টিভি দেখতে লাগলো।এখন মাথায় মধ্যে একটা কিছুর অপেক্ষার ঠান্ডা স্রোত, নামছে শিরদাঁড়া বেয়ে! 

একেই অন্ধকার তার উপরে মার্বেল সিঁড়ি! এই তো  আছাড় খাওয়ার শব্দ!ব্যাটা শুধু ওপরে খেলতে আসা হতো!বোঝ এবার,ঠোঁটের কোণে ভিলেন হাসি! “ওরে বাবারে ,বাবাগো  মরে গেলাম “, কান্নার আওয়াজ শুনে ,”আরে একি রোহিতের গলা না ! “বলেই দৌড়ে গিয়ে চমকে ওঠে সুনীল। দেখে পা পিছলে  রোহিতের যন্ত্রনা ক্লিষ্ট মুখ আর গোঙানি!  বাপ্পা ততক্ষনে এক দৌড়ে ওপরের পাশের ঘর থেকে সিঁড়িতে নেমে তখনো বলে চলেছে,”বন্ধু তোকে বললাম ,তুই বোস,আমি নিচে থেকে নিয়ে আসি লুডোটা,তবু জিদ করলি তুই”! 

ততক্ষনে রমলা ও নিচের বৌদি ফিরেছে।অজ্ঞান হয়ে যাওয়া রোহিতকে পাঁজাকোলা করে টোটো ডেকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতেই ডাক্তারবাবু সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করে দিলেন। সাবধান বাণী শোনালেন,” বাহাত্তর ঘণ্টা না পেরুলে কিছুই বলতে পারবেন না ,ভীষণ ভাবে ব্রেনে আঘাত লেগেছে”। জ্ঞান না ফেরা রোহিতের  পাশে উদ্বিগ্ন মুখে ওর বন্ধু বাপ্পা,চোখ ছল ছল চোখে করুন ভাবে দাঁড়িয়ে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress