Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গুর্গিন খাঁর দেয়াল || Syed Mustafa Siraj

গুর্গিন খাঁর দেয়াল || Syed Mustafa Siraj

গুর্গিন খাঁর দেয়াল

জিপ থেকে নেমেই আমরা মাঠের দিকে তাকালুম। চোখে পড়ল সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক দেয়াল—যেটা দেখতেই চলে এসেছি এই পাণ্ডববর্জিত জায়গায়। অজানা ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। ওই সেই রহস্যময় দেয়াল—যেখানে অদ্ভুত সব আলো আর ছায়ামূর্তি দেখা যায় নিশুতি রাতে। কারা চেরা গলায় বিকট চেঁচিয়ে ওঠে। শুনলে মহাদুঃসাহসীরও বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়।

আমার একা আসার ক্ষমতা ছিল না। প্রাণ গেলেও আসতুম না। অথচ চাকরি করি খবরের কাগজে। রিপোর্টার আমি। তাই আর সব কাগজে যখন খবরটা বেরিয়ে গিয়েছিল, আমাদের দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার বার্তা-সম্পাদক তেড়েমেড়ে আমাকেই বললেন—জয়ন্ত কি বেঁচে আছ, না তুমিও ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ? সবাই এমন একটা সাংঘাতিক খবর ছাপিয়ে তাক লাগিয়ে দিল, আর আমরা বসে গাল চুলকোতে থাকলুম? আজই বেরিয়ে পড়ো। সবাই শুধু খবরটাই ছেপেছে, আমরা ছাপব এর পেছনের রহস্যটা আসলে কী। বুঝেছ তো?

প্রথমে যা খবর বেরিয়েছিল, তা অনেকেই গাঁজাখুরি বলে মেনেছিলেন। কিন্তু পরে যখন আজমগড়ের পুলিশ সুপার স্বচক্ষে দেখে এসে সাংবাদিকদের কাছে বর্ণনা দিলেন, তখন আর উড়িয়ে দেওয়া গেল না। পুলিশকে ভূতপ্রেতও ভয় পায়। সেই পুলিশের লোক যখন বলছে, তখন ঘটনা নিখাদ সত্যি।

পুলিশ সুপার মিঃ দীক্ষিত স্থানীয় লোকের কাছে যা শুনেছিলেন, তা গুজব ভেবেছিলেন। তবু একটা তদন্ত করা তো দরকার। তিনি সেই জনমানুষহীন মাঠে তাঁবু ফেলে পরপর তিনটে রাত জেগে কাটান। তারপরেই রাতে সেই ভূতুড়ে কাণ্ড দেখতে পান। দেয়ালের ওপর দুটো জ্বলজ্বলে লাল চোখের মতো আলো দেখা যায়। টর্চ জ্বেলে তিনি চমকে ওঠেন। একটা কঙ্কাল নাকি নাচছে। তারপর বিকট আর্তনাদ শোনেন। অসংখ্য ছায়ামুর্তি ছুটোছুটি করতে থাকে পাঁচিলের কাছে। বন্দুক ছুড়তেই অবশ্য সব থেমে যায়। আলো নিভে যায়। ভৌতিক কাণ্ডটা আর ঘটে না। খুঁটিয়ে দিনের আলোয় সব দেখেছেন মিঃ দীক্ষিত। কিন্তু কোনও হদিশ পাননি। উঁচু পাঁচিলে অবশ্য ওঠেননি— ওঠা সম্ভব ছিল না।

তারপর যথারীতি সরকার একদল বিজ্ঞানী পাঠিয়েছিলেন সেখানে। তাদের বরাত—পরপর সাত রাত জেগেও কিছু দেখতে পাননি। তখন তারা পুলিশ সুপারকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে রিপোর্ট পাঠান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মিঃ দীক্ষিতের অবস্থা তখন শোচনীয়। চাকরি যায়-যায় আর কী!

সত্যসেবক পত্রিকার বার্তা-সম্পাদকের তাড়া খেয়ে আমি যখন আজমগড় যাওয়া ঠিক করে ফেলেছি, তখন হঠাৎ ইলিয়ট রোড থেকে কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের ফোন পেলুম।-হ্যাল্লো জয়ন্ত! জরুরি দরকার। এক্ষুনি চলে এস।

অমনি আমার মাথা খুলে গেল। আরে তাই তো! কর্নেলের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলুম! এসব ব্যাপারে এই ধূর্ত বুড়ো ঘুঘুর সাহায্য নেওয়া যায়। উনি সামরিক বিভাগে একসময় চাকরি করতেন। যুদ্ধে গেছেন। কত সব রোমাঞ্চকর কীর্তি করেছেন। এখন অবসর জীবনে নানান হবি নিয়ে থাকেন। যেমন—দুর্লভ জাতের পাখি প্রজাপতি পোকামাকড় খুঁজে বেড়ানো, পাহাড়ে জঙ্গলে সমুদ্রে ঘোরাঘুরি। তবে এখন ওঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় উনি প্রাইভেট গোয়েন্দা। নিতান্ত শৌখিন গোয়েন্দা আর কী! ধুরন্ধর কর্নেল এ অব্দি যে কত খুনি আর চোরডাকাত ধরতে সরকারকে সাহায্য করেছেন, তার সংখ্যা নেই। যেখানে রহস্যের গন্ধ, সেখানেই ষাট-বাষট্টি বছরের বুড়ো যেচে পড়ে নাক গলাবেন—এই ওঁর অভ্যাস। এই দাড়ি ও টাকওয়ালা বুড়োর খ্যাতি পুলিশমহলে অসাধারণ।

এমন মানুষ থাকতে আমি ভেবে মরছিলুম! তক্ষুনি ওর বাসায় চলে গেলুম। গিয়ে দেখি, এক অবাঙালি ভদ্রলোকের সঙ্গে উনি কথা বলছেন। ভদ্রলোকটির বয়স চল্লিশ-বেয়াল্লিশ হবে। খুব স্বাস্থ্যবান বলিষ্ঠ চেহারা। সিভিল পোশাকে ছিলেন বলে জানতেও পারিনি যে, উনিই আজমগড়ের সেই পুলিশ সুপার মিঃ রামধন দীক্ষিত!

ব্যস। তারপর আর কী! আকস্মিক যোগাযোগ এমনটি আর দেখা যায় না। আমরা পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়েছিলুম। ছোটনাগপুর অঞ্চলের আজমগড়ে পৌঁছতে আমাদের দুপুর লেগেছে। সেখানে মিঃ দীক্ষিতে কুঠিতে বিশ্রাম ও খাওয়া-দাওয়া সেরে অকুস্থলে পৌঁছেছি, তখন বিকেল চারটে।

সময়টা শীতের। বাপ। কী শীত কী শীত! বিহারের মাঠে দিনে হাঁড়কাপানো এমন শীত যখন, তখন রাতে কী অবস্থা হবে ভেবে ঘাবড়ে গেলুম। জিপে তাঁবু ও রান্নার সরঞ্জাম আনা হয়েছে। একজন রান্নার লোক রয়েছে—তার নাম মাযোরাম। আর আছে জনা চার সশস্ত্র সেপাই।

ওভারকোটটা কেন আনিনি তাই ভাবছি, দেখি কর্নেলবুড় দিব্যি বাদামি রঙের বুশ শার্ট প্যান্ট পরে ঘুরছেন। মাথায় শুধু লাল রঙের টুপি। শীতের বাতাস বইছে প্রচণ্ড। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে উনি চোখে বাইলোকুলার রেখে দেয়ালটা দেখছেন। আশ্চর্য বুড়ো!

একটা শুকনো নদীর তলায় আমাদের তাঁবু খাটানো হচ্ছে। জিপটা ঢালু পাড় গড়িয়ে নামাতে অসুবিধা হয়নি। ওপারে উঠে উঁচু জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি। দেয়ালটা দেখছি। আন্দাজ ছসাতশো মিটার দূরে একটা বিশাল স্কুপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালটা। গুর্গিন খাঁর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। কে এই গুর্গিন খা? কর্নেল তাও জানেন। মোঘল আমলের এক দুর্ধর্ষ শাসনকর্তা। তার ছেলের নাম ছিল আজম খাঁ। যার নামে ছমাইল দূরের ওই শহর আজমগড়। দুর্গের সব ভেঙেচুরে গেছে। শুধু এই ষাট ফুট লম্বা বিশ ফুট উঁচু একটামাত্র পাথুরে দেয়াল খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে অবাক লাগে।

আশেপাশে অনেক ঢিবি আছে। ধ্বংসাবশেষ আছে। ঝোপঝাড়ও প্রচুর। কিছু ক্ষয়াখবুটে গাছও চোখে পড়ল। তার ওধারে ধু ধু মাঠ। দূরে কিছু পাহাড়। কাছাকাছি কোনও বসতি দেখতে পেলুম না শুনলুম একদল রাখাল গোরু-মোষ চরাতে একটা বাথান করেছিল ওখানে। তারাই প্রথমে ভূতুড়ে কাণ্ডটা দেখে এবং পালিয়ে যায়। তারপর থেকে দিনদুপুরেও কেউ এদিকে পা বাড়ায় না। কোন কোম্পানি সীসের খনির খোঁজে এসেছিল। রাতারাতি তাবু গুটিয়ে পালিয়ে বাঁচে।

কর্নেল বাইনোকুলারে চোখ রেখে দেয়ালটাই হয়তো দেখছিলেন। মিঃ দীক্ষিত ও আমি কথা বলছিলুম! শীতের বেলা হু-হু করে পড়ে যাচ্ছে। শীগগির অন্ধকার এসে যাবে। আজ বরং অপেক্ষা করা যাক। কাল সকালে ওখানে গিয়ে সবকিছু খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা যাবে। আমরা দুজনে এসব কথাই আলোচনা করছিলুম। হঠাৎ দেখি কর্নেল এগোচ্ছেন। মিঃ দীক্ষিত বললেনএখনই—যাচ্ছেন নাকি? উনি কোনও জবাব দিলেন না। যেন সম্মােহিতের মতো চোখে দূরবীনটা রেখে হেঁটে যাচ্ছেন। আমি একটু হেসে চাপা গলায় বললুম—যাক না বুড়ো। ভূতে ঘাড় মটকে মিঃ দীক্ষিত হাসলেন। কিন্তু মুখটা কেমন করুণ দেখাল। বললেন—আসুন জয়ন্তবাবু। আমরাও যাই!

অগত্যা আমরা দুজনেও পা বাড়ালুম। তারপর অবাক হয়ে দেখি, বুড়ো দৌড়তে শুরু করেছেন। আমরা পরস্পর তাকাতাকি করলুম। আমরাও দৌড়ব নাকি? কিন্তু দেখতে দেখতে ততক্ষণে কর্নেল ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য। তখন আমরা হন্তদন্ত ছুটলুম।

ঝোপঝাড় পেরিয়ে খানিকটা ফাঁকা জায়গা। বড় বড় পাথর পড়ে আছে। কিন্তু কর্নেলের পাত্তা নেই। বেমালুম উবে গেলেন যে! মিঃ দীক্ষিত ডাকলেন—কর্নেল! কর্নেল সাহেব! কোনও সাড়া এল না। বললুম—ছেড়ে দিন। বুড়োর স্বভাবই এরকম। ঠিক এসে পড়বেনখন।

তখন সূর্য ড়ুবেছে। শীতও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। হাঁটতে-হাঁটতে আমরা গেলুম সেই দেয়ালটার কাছে। উঁচু ঢিবির কাছে রয়েছে। তাকাতেই আমার গা শিউরে উঠল। মনে হল দেয়ালটা যেন হিংস্র চোখে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। চোখের ভুল ছাড়া কিছু নয়। ঢিবির ওপর ওঠা শুরু করলুম। সেই সময় মিঃ দীক্ষিত মনে পড়িয়ে দিলেন—আমাদের সঙ্গে টর্চ নেই।

অতএব বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। ঢিবিতে উঠে দেখলুম একটা প্রশস্ত পাথরের মেঝে। ফাটলে ঘাস গজিয়ে আছে। সামনে পূর্বে-পশ্চিমে লম্বা দেয়ালটা আন্দাজ বিশ ফুট উঁচু। মনে হল, ওটা কমপক্ষে দুগজ চওড়া। সুতরাং ওর ওপর দৌড়াদৌড়ি করা সম্ভব বইকি। এক জায়গায় একটা মস্ত ফাটল দেখছিলুম। সেখানে একটা শুকনো কোনও গাছের গুড়ি ও শেকড় মেঝে অবধি নেমে এসেছে। গাছটা যেভাবেই হোক, মারা গেছে কবে এবং ডগার দিকটা ক্ষয়ে ভেঙে গেছে সম্ভবত। দীক্ষিত বললেন—দেখুন জয়ন্তবাবু, মনে হচ্ছে—কেউ ইচ্ছে করলে ওই গাছটা বেয়ে দেয়ালের ওপর উঠতে পারে। তাতে সায় দিলুম।

কিন্তু কর্নেল গেলেন কোথায়? দীক্ষিত আবার ডাকলেন-কর্নেল! কর্নেল সায়েব! অমনি ডাকটা দ্বিগুণ জোরে প্রতিধ্বনি তুলল। উনি বললেন—দেখছেন জয়ন্তবাবু? দেয়ালটা কেমন প্রতিধ্বনি তোলে?

বললুম-হ্যাঁ। ঐতিহাসিক দালানগুলো দেখছি এ ব্যাপারে ওস্তাদ। সবখানে এটা লক্ষ্য করছি। আমার ধারণা, সেকালের স্থপতিরা কোনও কৌশল জানতেন। তুঘলকাবাদে…

আমার মুখের কথা শেষ না হতেই কর্নেলের চিৎকার শুনলুম— মিঃ দীক্ষিত! জয়ন্ত! হেল্প! হেল্প! বাঁচাও! বাঁচাও!

চকিতে আমরা আওয়াজ লক্ষ্য করে দৌড়ে গেলুম। গিয়ে দেখি ঢিবির উত্তর দিকের ঝোপ-ঝাড়ের ওপর কর্নেল একটা কাটা গাছের ডগায় চড়ে রয়েছেন এবং মাথার টুপিটা জোরে নাড়ছেন। ব্যাপার কী? চেঁচিয়ে উঠলুমকী হয়েছে কর্নেল?

কর্নেল পাল্টা চেঁচিয়ে বললেন-সাবধান জয়ন্ত! এগিও না। যাচ্ছে—তোমাদের দিকে যাচ্ছে।

আমরা হতভম্ব। কয়েক মুহূর্ত পরেই দেখি, ওরে বাবা! একটা প্রকাণ্ড কালো ষাঁড় শিং নাড়তে নাড়তে ঝোপঝাড় ভেঙে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। অমনি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আমি দৌড় লাগালুম। আছাড় খেলুম বারকতক। হাত-পা ছড়ে গেল নিশ্চয়। টিবি থেকে নেমে আর পিছন ফিরেও তাকালুম না। ঊধ্বশ্বাসে দৌড়লুম। সেই সময় কানে এল গুলির আওয়াজ। ঘুরে দেখার সাহসও হল না। একেবারে নদীর তলায় গিয়ে পড়লুম। সেপাইরা ব্যস্ত হয়ে বলল—ক্যা হুয়া? বাবুজি?

আঙুল তুলে দেয়ালের দিকটা দেখালুম শুধু। ওরা বন্দুক বাগিয়ে তক্ষুনি দৌড়ে চলে গেল। কিন্তু অমন ষাঁড় ওখানে এল কোত্থেকে? এতো ভারি বিদঘুটে ব্যাপার! নাকি আসলে ওটা একটা ভূতপ্রেত! রাঁধুনি লোকটা স্টোভ জ্বেলে কেটলিতে জল গরম করছিল। সভয়ে বললে—কুছ দেখা বাবুজি? কৈ পেরেত বা?

জোরে মাথা নাড়লুম। শীত চলে গিয়ে ঘাম দিচ্ছে যেন। হাঁপানি থামছে না। একটু পরে কথাবার্তার আওয়াজ পেলুম। তখন দিনের আলো আর নেই। টর্চ জ্বালতে-জ্বালতে দীক্ষিত, কর্নেল ও সেপাইরা আসছিল। দীক্ষিতের কথা শুনতে পেলুম—হ্যাঁ, আমার ধারণা, আপনার লাল টুপিটাই ষাঁড়টাকে রাগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্য! ওখানে ষাঁড় এল কোত্থেকে? রাখালরা তো এক মাস আগে গোরু-মোষ নিয়ে পালিয়ে গেছে। কর্নেল বললেন—সম্ভবত, ওদের দলের একটা ষাঁড় দলছুট হয়ে থেকে গেছে ওখানে। দীক্ষিত বললেন—তাও বটে।

আমার কাছে কর্নেল এসে বললেন—হ্যাল্লো জয়ন্ত! আশা করি, হাড়গোড় ভাঙেনি?

তখন হেসে উঠলুম।আশা করি, আপনিও অক্ষত আছেন।

—আছি বৎস! কিন্তু—ওঃ! হরিবল, জয়ন্ত! আশ্চর্য বটে!

—হঠাৎ ষাঁড়ের পাল্লায় পড়তে গেলেন কেন? দৌড়েই গেলেন দেখছিলুম!

কর্নেল বিমর্ষ মুখে বললেন—দূর থেকে ওটাকে চিনতে পারিনি। যেই দৌড়ে গেছি—ব্যস।

দীক্ষিত বললেন—লাল টুপি! ওতেই ষাঁড়টা ক্ষেপে যায়। যাক গে, গুলির আওয়াজে ব্যাটা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় বলেই রক্ষে। কিন্তু কর্নেল, এ তো এক সমস্যায় পড়া গেল। ওখানে গেলেই তো ব্যাটা আবার তেড়ে আসবে।

কর্নেল চিন্তিত মুখে বললেন—হ্যাঁ। তা তো আসবেই। তবে যা বোঝা গেল, গুলির আওয়াজে বড্ড ভয় পায় ব্যাটা। তেমন দেখলে বরং আমরা তাই করব।

হ্যাসাগ জ্বালা হল। ক্যাম্পচেয়ার পেতে বসে আমরা কফি খেতে থাকলুম। রাত জাগতে হবে। কত রাত জাগতে হবে, জানি না। ভূতগুলোর মর্জি তো! কোন রাতে তাদের খেলা শুরু হবে, তার ঠিক তো নেই।

কিন্তু ব্যাপারটা ভাবতেই আমার এত ভয় হল যে অন্য কথা ভাবতে থাকলুম।…

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর তাঁবুর সামনে যে আগুন জ্বালা হয়েছিল, কিছুক্ষণ আমরা তার উত্তাপ নিলুম। তিনটে তাঁবু খাটানো হয়েছে। একটা তাঁবুতে মিঃ দীক্ষিত ও রাঁধুনি মাখোরাম, অন্য একটায় সেপাই চারজন, অরেকটায় আমি ও কর্নেল শোব। শোব বলা ভুল হল। শোওয়ার ভাগ্য আর মাত্র ঘন্টা তিনেক। ভূতুড়ে কাণ্ড নাকি ঠিক রাত একটার পর ঘটতে থাকে। অতএব তখন আমাদের সেই প্রচণ্ড শীতেই বেরোতে হবে। নদীর পাড়ে যেতে হবে। জায়গা দেখে রাখা হয়েছে। আগেই। তারপর কী করতে হবে, সে নির্দেশ কর্নেল দেবেন।

দুটো ক্যাম্প খাটে পাশাপাশি শুয়েছি কর্নেল ও আমি। তিনটে কম্বলেও শীত যাচ্ছে না। তাই ঘন্টা তিনেক ঘুমোবার সুযোগ হল না। দেওয়ালটা আমাদের উত্তরে সেদিকেই নদীর পাড়। এখান থেকে দেখা যায় না। আর তাঁবুর দরজা স্বভাবত দক্ষিণে। দরজায় পর্দা ঝুলছে। একদিকে সামান্য ফাঁক। তাকিয়ে আছে সেদিকে। আকাশের দু-একটা নক্ষত্র চোখে পড়ছে। কর্নেলের রীতিমতো নাক ডাকছে! হঠাৎ দরজার ফাঁকের নক্ষত্র ঢেকে গেল। তারপর চাপা খসখস শব্দ কানে এল। শব্দটা ভাল করে শোনার জন্যে কম্বল থেকে কান বের করলুম এবং মাফলার খুলে ফেললুম মাথা থেকে। হ্যাঁ-ঠিকই শুনেছি। তাছাড়া দরজার ফাঁকে নক্ষত্র আর দেখা যাচ্ছে না। ভয়ে বুক ঢিব ঢিব করে উঠল। বালিশের পাশ থেকে টর্চটা যেই টেনেছি, আবার সেই ফাঁকে নক্ষত্র দেখলুম। এর মানে কেউ কি এসেছে? কেউ কি কোনও দুষ্টু মতলবে তাবুতে উঁকি দিচ্ছিল? কে সে? কী। তার উদ্দেশ্য? ভাবলুম টর্চ জ্বালার আগে কর্নেলকে চুপি চুপি জাগিয়ে দিই। অমনি নাকে একটা বোঁটকা গন্ধ এসে লাগল। নাড়িভুঁড়ি উগরে পড়ার জোগাড় সেই পচা গন্ধে। নাক ঢেকে চোখ খুলে ভয়ে কাঁপতে থাকলুম। আর কর্নেলকে ডাকারও সাহস হচ্ছে না। যদি ওই নিশুতি রাতের আগন্তুক আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?

দম বন্ধ করে শুয়ে আছি। সেই সময় কর্নেলের নাক ডাকা বন্ধ হল। একটু সাহস পেলুম। বুড়ো জাগুক, হে ভগবান! বুড়ো ঘুঘুকে জাগিয়ে দাও। এ সব ব্যাপারে ওঁর মাথা খেলে ভাল। এ বয়সে গায়ের জোরও অসাধারণ। যোদ্ধা লোক। যুযুৎসু জানেন কতরকম। শত্রুকে ঢিট করতে জুড়ি নেই ওঁর।

হঠাৎ আবার চমকে উঠলুম। আমার পাশেই তাঁবুর গয়ে খসখস শব্দ! সেই গন্ধটা আরও বিকট এবার। তারপরই কী একটা আমার কপালে এসে পড়ল। ঠাণ্ডা অতি ঠাণ্ডা কিছু শক্ত জিনিস। ওমনি আঁতকে উঠে চেঁচালুম-কর্নেল! কর্নেল! আর যন্ত্রের হাতে টর্চের বোতাম টিপে দিলুম। ওদিক কর্নেলের টর্চও জ্বলে উঠেছে। এক মুহূর্তের জন্য দেখলুম, আমার মাথার উপর দিয়ে একটা—অবিশ্বাস্য! রীতিমতো অবিশ্বাস্য! একটা কঙ্কালের হাত সাঁৎ করে সরে গেল। তাবুটা জোরে নড়ে উঠল। পরক্ষণে বাইরে দূরে—অনেক দূরে কারা মিহি খনখানে গলায় হেসে উঠল-হি হি হি হি …হি হি হি হি… হি হি হি হি!

তারপর কী হল মনে নেই। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলুম। যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি হ্যাসাগটা কখন জ্বালা হয়েছে। রাতে ওটা নিভিয়ে রাখা হয়েছিল—কারণ আলো থাকলে পাছে দেওয়ালের আলৌকিক শক্তির লীলাখেলায় বাধা পড়ে।

কর্নেল ও দীক্ষিত বললেন—জয়ন্ত! জয়ন্তবাবু!

উঠে বসলুম। অমনি সব মনে পড়ে গেল। রুদ্ধশ্বাসে বলুম—ওরা কি পালিয়েছে? ওরা কারা এসেছিল কর্নেল?

কর্নেল গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লেন। বললেন—জানি না। সত্যি জয়ন্ত, আমি অবাক। হতভম্ব। বিস্তর ঘটনা ঘটতে দেখেছি জীবনে। কিন্তু এর কোনও মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছিনে! একটা জীবন্ত কঙ্কাল! সত্যিকারের কঙ্কাল। বালিতে এইমাত্র তার পায়ের ছাপ আমরা দেখে এলাম। ও ছাপ কোনও মানুষ বা প্রাণীর নয়, তা হলফ করে বলতে পারি। আর ওই বিকট হাসিই বা কারা হাসছিল কে জানে?

দীক্ষিত বললেন—হাসিগুলো গুর্গিন খাঁর দেয়াল থেকে আসছে মনে হচ্ছিল কর্নেল। আমিও সেবার এসে ওই হাসি শুনেছিলুম। তখন বুঝতে পারিনি।

কর্নেল ঘড়ি দেখ বললেন-সাড়ে বারোটা প্রায়। আর কী? আলোটা আবার নিভিয়ে দেওয়া যাক। আধ ঘন্টা পরে আমরা বেরোব! জয়ন্ত, আর ঘুমিও না।

বেরোতে হবে? কাঁচুমাচু মুখে তাকালুম। তা লক্ষ্য করে কর্নেল চাপা স্বরে ধমক দিয়ে বললেন—এই রকম ভয় পেলে তো চলবে না, জয়ন্ত। তুমি না খবরের কাগজের রিপোর্টার!……

ঠিক একাটায় আমরা বেরিয়েছি। প্রচণ্ড শীত। আমার তো সবসময় বুক ঢিব ঢিব করছে। কিন্তু উপায় নেই। কর্নেল আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছেন। নদীর উত্তর পাড়ে অন্ধকারে চুপি চুপি আমরা তিনজন এবং তিনজন সেপাই একটা পাথরের আড়ালে ওত পেতে বসেছি। একজন সেপাই রয়ে গেল তাবুর পাহারায়। রয়ে গেল মাথধারাম বাবুর্চিও।

বসে আছি তো আছি। আমাদর তিরিশ গজ সামনে গুর্গিন খাঁর দেয়াল অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কী অদ্ভুত দেখাচ্ছে ওই কালো দেয়ালটা! মনে হচ্ছে হাজার হাজার অদৃশ্য চোখ দিয়ে সে আমাদের দেখছে আর দেখছে। শয়তানি মতলব ভঁজছে। যেন উত্তুরে হাওয়ার ভাষায় শনশন করে বলছে—চলে আয়! আয় রে আয়! এই সময় দূরে প্লেনের শব্দ শুনলুম। দেয়ালের আড়ালে পড়ে গেল বলে প্লেনটা দেখতে পেলুম না।

কতক্ষণ পরে হঠাৎ কর্নেল ফিসফিস করে উঠলেন—ও কী?

তাকিয়ে দেখি, হা—যা শুনেছিলুম, তাই। দুটো লাল জ্বলজ্বলে চোখ যেন দেয়ালের ওপর স্থির হয়ে আছে। একটু পরে চোখ দুটো দুলতে শুরু করল। ওপরে-নিচে। কখনও দপাশে। দুলছে আর মাঝে মাঝে যেন চলে বেড়াচ্ছে।

অন্তত দীর্ঘ পাঁচ মিনিট ব্যাপারটা ঘটল। তারপর এক ঝলক আলো আকাশের দিকে ছুটে গেল ধূমকেতুর মতো। কয়েক সেকেন্ড ওই আলোর ঝাঁটাটা স্থির হয়ে থাকার পর ডাইনে বাঁয়ে দুবার নড়ে উঠল। তারপর আবার স্থির।

ঠিক এই সময় কানে এল বিকট এক চিৎকার। ও কি মানুষের না দানবের? মাথায় পুরু করে মাফলার কান অব্দি জড়ানো। তবু মনে হল কানে তালা ধরে যাচ্ছে। আঁ-আঁ আঁ আঁ অ্যাঁ! অদ্ভুত সেই আওয়াজ যেন আর্তনাদ, যেন প্রচণ্ড ক্রোধ। আমরা শক্ত হয়ে বসলুম। দীক্ষিত কী বলতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখি কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। তারপর চাপা স্বরে চলে এস তোমরা বলেই হাঁটতে শুরু করলেন।

কী সর্বনাশ! এ যে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করার শামিল। কিন্তু উপায় নেই। একা এখানে পড়ে থাকার সাহস আমার নেই। এমনকী দৌড়ে নদীর তলায় তাঁবুর কাছেও যেতে পারব না—যদি ফের জ্যান্ত কঙ্কালের পাল্লায় পড়ে যাই!

পিছনে অন্ধের মতো মরিয়া হয়ে চললুম। কয়েক পা যেতেই দেওয়ালের অশরীরীরা আওয়াজ আরও বাড়িয়ে দিল। সে বিকট চেঁচামেচির বর্ণনা ভাষায় দেওয়া দুঃসাধ্য। যেন হাজার হাজার প্রাগৈতিহাসিক দত্যি-দানো হঠাৎ নিশুতি রাতে ঘুম ভেঙে হইচই বাধিয়েছে। কখনও মনে হচ্ছে। তারা আর্তনাদ করছে, কখনও হি হি হি করে তখনকার মতো বিকট ভূতুড়ে অট্টহাসি হাসছে।

ঢিবির কাছে আমরা পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল টর্চ জ্বেলে দেয়ালে আলো ফেললেন। অমনি আমার পিলে চমকে উঠল। পাঁচিলের সেই ফাটলে মরা গাছটার ডালে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে আছে। সেই জ্যান্ত কংকালটা। এই দৃশ্য দেখামাত্র সেপাইরা হুকুম পাওয়ার আগেই দুমদাম বন্দুক ছুড়তে শুরু করল। প্রচণ্ড প্রতিধ্বনি উঠল। সবাই দৌড়ে ঢিবিতে উঠলুম। কর্নেলের টর্চ সামনে কঙ্কালটার ওপর পড়ে রয়েছে। কঙ্কালটা নড়ছে এবার। কর্নেল জ্বলন্ত টর্চ ও রিভলভার হাতে নিয়ে সেদিকে দৌড়ে গেলেন। অমনি সব বিকট আওয়াজ থেমে গেল। অস্বাভাবিক স্তব্ধতা জাগল।

কর্নেলের চিৎকার শুনলুম—মিঃ দীক্ষিত! এখানে আসুন।

আমি পা বাড়িয়েছি সবে, সেপাইরা সবাই একসঙ্গে টর্চ জ্বলেছে—দেখি পাশের ঝোপ ঠেলে সেই ষাঁড়টা বেরিয়ে আসছে—হ্যাঁ, আমার দিকেই।

অমনি ভূতের ভয়, এই ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানা, সব কিছু মুহূর্তে ভুলে তক্ষুনি দৌড় দিলুম। সন্ধ্যাবেলায় যেভাবে দৌড়েছিলুম, ঠিক সেভাবেই।

ঠাহর করে নদীর ধারে পৌঁছে তখন টর্চ জ্বালালুম। ষাঁড়টাকে পিছনে দেখতে পেলুম না। কিন্তু দূরে দেয়ালের ওখানে আবার মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ শুনতে শুনলুম। টর্চের আলোও ঝলকে উঠল বারবার। তারপর প্লেনের আওয়াজ শুনলুম। কিন্তু দেখতে পেলুম না প্লেনটা।

বোবাধরা গলায় চেঁচিয়ে উঠলুম—মাধোরাম! মাধোরাম!

সাড়া এল—বাবুজি বাবুজি! আপ কিধার হ্যায়?

সে রাতে কর্নেল, দীক্ষিত এবং সেপাই তিনজন ফিরে এলেন যখন, তখন রাত প্রায় তিনটে। হ্যাসাগ জ্বালা হল। সেই আলোয় দেখি, ওঁরা একগাদা তার, প্রকাণ্ড ব্যাটারি সেট, বাল্ব, টেপরেকর্ডার মাইক্রোফান এনেছেন সঙ্গে। ব্যাপার কী? তারপর আমার পিলে চমকাল আবার। কর্নেল দস্তানা পরা হাতে সেই কঙ্কালটার হাত ধরে আছেন এবং সেটা মাটিতে আধখানা গড়াচ্ছে। গড়াচ্ছে—অর্থাৎ আসামিকে টানতে টানতেই এনেছেন, যেন আসতে চায়নি—মাটিতে লুটিয়ে আনতে হয়েছে ব্যাটাকে। আমি ফ্যলফাল করে তাকিয়ে রইলুম।

কর্নেল বললেন—জয়ন্ত, আশা করি রহস্যটা টের পেয়ে গেছ এখন।

জোরে মাথা দোলালুম।—পাইনি।

—পাওনি? তোমার ভয়টা আসলে এখনও কাটেনি। বলে কর্নেল তাবুর সামনেকার নিভন্ত আগুনে কয়েকটা কাঠ ফেলে দিলেন। আগুন জ্বলে উঠল। ক্যাম্পচেয়ার বের করে তার সামনে বসে চুরুট ধরালেন।

দীক্ষিত বললেন—তাহলে গাড়ি নিয়ে অর্জুন চলে যাক, কর্নেল। রেডিওমেসেজ পাঠানোর ব্যবস্থা করুক।

কর্নেল বললেন—অবশ্যই। হেলিকপ্টারটা পাকড়াও করা যাবে অন্তত। মালগুলো হয়তো পাচার হয়ে যাবে।

হতভম্ব হয়ে বললুম—মাই ডিয়ার ওল্ড ম্যান, ব্যাপারটা খুলে বলবেন কি?

কর্নেল হাসলেন।-এখনও খুলে বলতে হবে? এ স্মাগলিংয়ের কারবার, জয়ন্ত। স্রেফ চোরাচালানী মালের ব্যাপার। গাঁজা আফিং চরস কোকেন এসব মাদকদ্রব্য এই অখাদ্য এলাকায় চোরাচালানীরা এনে ওই গুৰ্গিন খাঁর দেয়ালে একটা গুপ্ত জায়গায় মজুত করে। ব্যাটারি থেকে বিদ্যুতের সাহায্যে দেয়ালের মাথায় লাল বা জেলে হেলিকপ্টারকে সংকেত দেয়। কখনও স্রেফ হলদে আলোও দেখায়। এই হেলিকপ্টার তখন মাঠে নেমে পড়ে। এরা মালগুলো ওতে পৌঁছে দেয়। আমাদের দুর্ভাগ্য শয়তানগুলোকে তাড়া করতেই ব্যস্ত ছিলুম, হেলিকপ্টারটা গতিক বুঝে উড়ে পালাল।

বললুম—এই কঙ্কালটা? আর ওই অট্টহাসি?

কর্নেল বললেন—কঙ্কালটা নকল। এতে দুর্গন্ধ এমিনো অ্যাসিড মাখানো আছে। চোরাচালানীদের কেউ এটা নিয়ে এসেছিল আমাদের তাঁবুতে। ভয় দেখাতে চেয়েছিল। আর আওয়াজ হত একটা টেপরেকর্ডারে। মাইক্রোফোন ফিট করা ছিল দেয়ালে। নির্বিঘ্নে চোরাচালানী লেনদেনের ঘাঁটি গড়ার জন্য ব্যাটাদের এতসব আয়োজন। যাক গে! মাথোরাম কফি বানাও!

কিশোর কর্নেল সমগ্র ১ (Kishore Cornel Samagra)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *