শেষ চিঠি
বাবী,
জানি না এই চিঠি তুই কবে পাবি বা পেলেও তোর সময় হবে কি না পড়ার।এখন সময় না হলে রেখে দিস বাবা, কোন এক কোণে,হয়তো সময় পড়ার সময় করে দেবে একদিন।
কত দিন তোকে দেখিনি বাবা!!ph করাও কবেই বন্ধ করে দিয়েছিস।ভাবিস না এ আমার অভিযোগ।তুই ভালো থাকলেই আমার শান্তি আমিও ভালো থাকবো।
মাঝে মাঝে এখানে সবাই কাগজে যখন তোর ছবি দেখিয়ে বলে, “ঠাকুমা, তোমার ছেলের ছবি বেড়িয়েছে কত বড়ো বড়ো লোকেদের সাথে।”বুকটা ভরে যায় আমার জানিস।মনে পড়ে যায় তোর ছোট বেলার সব স্মৃতি।কত দিন তোর জন্ম দিনে পায়েস করে দিইনি।আমার হাতের শুক্ত ছারা কোথাও খেতিস না শুক্ত। তোকে যখন সাইকেলে করে School দিয়ে আসতাম তখন তুই শুধু বলতিস”মা,আমি যখন তোমার মতো বড়ো হবো তুমি তখন আমার মতো ছোট্ট হয়ে যাবে আর আমি ও তোমায় সাইকেল করে School দিয়ে আসবো।আমার ছুটির কত্ত আগে ছেলে ধরার ভয়ে যেমন তুমি দাঁড়িয়ে থাকো,তোমার ছুটির আগেও আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো মা না হলে তোমায় ছেলে ধরা ধরে নিয়ে যাবে।তাহলে কে আমায় খাইয়ে দেবে?আমার সাথে খেলবে?আমার ঘোড়া হয়ে পিঠে করে সারা ঘর ছুটবে?”আজ সত্যি তুই অনেক বড়ো হয়ে গেছিস রে…তুই তোর কথা রেখেছিস বাবা!!সাইকেল না বড়ো গাড়ি করে রেখে গেছিস বৃদ্ধা আশ্রমের এই School. তবে ঐ একবার।আর আসিসনি।হয়তো সময় হয়নি তোর….
আজ বড়ো বেশি সব কথা মনে পড়ছে তোকে নিয়ে।ঘুম থেকে উঠে আমায় না দেখতে পেলে কত কেঁদেছিস কত বড়ো বয়সেও।”হ্যাঁ রে বাবা,আজ আর চোখ মন কিছুই কাঁদে না বল মার জন্য”?সত্যি তোর বড়ো হওয়ার সাথে সাথে আমি অনেকটাই ছোট হয়ে গেছি রে…
আমার ছুটির ঘন্টা অনেকদিন বেজেছে।বসে আছি তোর আনতে আসার অপেক্ষায়।মাথায় আমার আজ আকাশ ভাংছে বাবী।দুচোখ ভরে কালো মেঘের ঘনঘটা।নিশ্বাসে দম বন্ধ করা গুমোট।বৃষ্টি নামবে হয়তো জীবন জুড়ে ।School এবার বন্ধ হবে আমার।থাকার অনুমতি নেই আর।তাই একাই ফেরার পথে পা বাড়িয়ে দিলাম।
ভালো থাকিস বাবা।খুব ভালো থাকিস।সাবধানে থাকিস।আজকাল তোর অনেক পরিশ্রম রোগা হয়ে গেছিস অনেক।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস।গাড়ি সাবধানে চালাস।তুই বৌমা নাতনিকে আমার বুক ভরা ভালোবাসা আর্শীবাদ দিস।কিছুই করে যেতে পারলাম না তোদের জন্য।ক্ষমা করিস।
আজ তোর কাজের সময় থেকে একটু সময় আমায় ধার দিস।অনেক ক্ষতি হবে জানি।তবুও এ দয়া টুকু তুই না করলে আমার মুক্তি নেই বাবা!!
আমি সারা জীবন স্বাধীন ভাবে চললেও তোকে না বলে কখন কোথাও যাইনি।তুই ফিরেই ডেকে বলবি”মা,খিদে পেয়েছে খেতে দাও”।তাই…
তাই আজও বলে গেলাম সময় যদি পাস তো সাড়া দিস।তিন ঘন্টা সময় আছে Death certificate দিতে।সবার্থপরের মতো তোকে একা রেখে গেলাম।সাবধানে থাকিস।
আসছি বাবা…..
ইতি
তোর মা
অনবদ্য সৃষ্টি । মুগ্ধতা একরাশ ।
ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন
লেখার সাথে থাকুন