Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আফিং ও ইন্দ্রনাথ রুদ্র || Adrish Bardhan

আফিং ও ইন্দ্রনাথ রুদ্র || Adrish Bardhan

আফিং ও ইন্দ্রনাথ রুদ্র

ইন্দ্রনাথ রুদ্রকে অনেক অপকর্মের নাড়ীনক্ষত্র জানতে হয়েছে, কারণ সে প্রাইভেট ডিটেকটিভ। তা সত্ত্বেও একটি কেস নিয়ে নাজেহাল হয়েছিল ইন্দ্রনাথ। হওয়াটা আশ্চর্য নয়। কেন না, এত জেনেও যা নিয়ে কোনওদিন মাথা ঘামাতে হয়নি তাকে, চাঞ্চল্যকর এই মামলার মূল রহস্য ছিল সেইটাই। আমি আফিংয়ের চোরাই কারবারের কথা বলছি।

বড়দিনের সময়ে সাধারণত আমরা কলকাতায় থাকি না। শীতের আমেজ গায়ে লাগলেই মনটা উড়ুউড়ু হতে থাকে। বড়দিনের কটা দিন কোথাও না কোথাও কাটিয়ে আসি। একা কখনো যাই না। গৃহিণী কবিতা সঙ্গে তো থাকেই। সেই সঙ্গে বন্ধুবর ইন্দ্রনাথ রুদ্র।

বছর কয়েক আগে এমনি একটা বড়দিন কাটাতে আমরা এসেছিলাম রাজস্থানে। মরুভূমির শীতের একটা আলাদা আমেজ আছে। ধু-ধু বালির দিকে তাকিয়ে মনটাও কেন যেন হু-হুঁ করে ওঠে। আমার গিন্নি বলে, তুমি নির্ঘাত আরব বেদুইন ছিলে গত জন্মে। আমি ওর থুতনি নেড়ে বলতাম–আর তুমি ছিলে বেদুইন বউ?।

ইন্দ্রনাথ অমনি গলাখাঁকারি দিত পেছন থেকে। বলত–ওহে কপোত-কপোতী, তোমাদের দস্যুবৃত্তির মধ্যে আমি কিন্তু ছিলাম না।

মুখ টিপে হেসে কবিতা বলত–তুমি দস্যু নও, তুমি তস্কর। রমণীকুলের চিত্ত লোপাট করতে অদ্বিতীয়।

ছেলেমানুষ হয়ে যেতাম তিনজনেই। মরুভূমি আমাদের সব ভুলিয়ে দিত। আমরা ভুলে যেতাম আমাদের শিষ্টাচারের আড়ষ্টতা, ভুলে যেতাম কথা বলার ঠাটবাট। সহজ হয়ে যেতাম অন্তর পর্যন্ত। ফলে যে ধরনের ইয়ার্কি-ঠাট্টায় মত্ত হতাম, তা নিষ্পাপ মনেই করতাম।

দিনরাত পাপী-তাপীদের নিয়ে ঘেঁটে ঘেঁটে ইন্দ্রনাথ নিজেও চাইত সব কিছু ভুলে যেতে। কিন্তু এমনই কপাল, কোনওবারেই তা সম্ভব হত না। একটা না একটা ভজকট ব্যাপার এসে জুটতই। যেমন হল সেবার–রাজস্থানে।

বিকানীরে গিয়ে আমরা মরুভূমির রুখু চেহারা দেখে কবিতার পর কবিতা আওড়াচ্ছিলাম, ইন্দ্রনাথ ওর কবি-কবি চেহারা নিয়ে বসে থাকত বালিয়াড়ির ওপর। হাওয়ায় চুল উড়ত। টানা-টানা স্বপ্নালু দুটি চোখে ও কিসের স্বপ্ন দেখত, তা ভগবানই জানেন। দেখে আমার মনটা কীরকম হয়ে যেত। ব্যাচেলর হলেই কি অমনি হয়? আমিও এককালে ব্যাচেলার ছিলাম। বম্বের কোটিপতি কন্যার পাণিপীড়ন করার আগে আমিও নিঃসঙ্গ ছিলাম। কিন্তু ইন্দ্রনাথের একাকীত্বের জাত আলাদা। ওর মনের নাগাল পাওয়ার ক্ষমতা বোধকরি কোনও নারীরই নেই। তাই ও চিরকুমারই রয়ে গেল।

সেদিন হঠাৎ কবিতা বায়না ধরল, ঠাকুরপো চল উটে চড়ি।

চড়ে? ভুরু কোচকালো ইন্দ্রনাথ।

মরুভূমির ভেতর পর্যন্ত চলে যাব। যেখানে মোটরসাইকেল যায় না, জিপ যায় না–সেইখানে চলবে আমাদের উট খপখপ করে। আমরা উটের পিঠে বসে দুলব আর দুলব। গলা ছেড়ে গান গাইব। বালিয়াড়ির ঢেউ দেখব। ফণিমনসা আর কাটাঝোঁপ গুণব। সূর্যাস্তের রঙ মনে গেঁথে নেব। তারপর আবার ফিরবে আমাদের উট খপখপ করে বালির টিলা পেরিয়ে। ভালো লাগবে না?

কবিতার কথার সুরে কী যেন ছিল। জাদু বোধহয় একেই বলে। ঘরকুণো বাঙালি আমরা। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের নেশা কেন আমাদের রক্তে, এ প্রশ্নের জবাব পাই না। থর মরুভূমির দিকে তাকিয়ে ভাসা ভাসা দুটি চোখে দুর-দিগন্তের ছবি দুলিয়ে কবিতা যা বলল, তা যেন আমাদেরই মনের কথা। আমরা যেন একই সুরে একই গান গেয়ে উঠলাম। সমস্বরে বললাম-তাই ভালো। চল যাই।

এলাম স্টেশনের কাছে। উটের আড্ডা সেখানে। সেইসঙ্গে জিপ আর মোটরসাইকেল। অপরূপা কবিতার দুইপাশে দুই বঙ্গ-তনয় দেখে ছেকে ধরল ড্রাইভাররা। ওদের অনর্গল কথা থেকে এইটুকু বুঝলাম যে বাবুরা শুটিংয়ের জন্যে মরুভূমি দেখতে যাবেন তো? ফার্স্টক্লাস জিপ দেব, চলে আসুন। শুনলাম, শুটিং এখানে হামেশাই হচ্ছে। বিশেষ করে সত্যজিৎ রায় তাঁর গোপী গায়েন বাঘা বায়েন-এর কিছু দৃশ্যগ্রহণ করতে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তারপর থেকেই বেঙ্গলিবাবু দেখলেই আর রক্ষে নেই।

অত কথায় আমরা আর গেলাম না। শুধোলাম–উট আছে?

হাঁ করে তাকিয়ে রইল ওরা।

কবিতা এবার ওর দুর্গাপ্রতিমার মতো বড় বড় দুই চোখ পাকিয়ে ঝঙ্কার দিল–হাঁ করে দেখবার কি আছে? বলি, উট আছে?

উট? এমনভাবে ওরা সাড়া দিল যেন উট জিনিসটা প্রাগৈতিহাসিক জন্তু–এ যুগে দুর্লভ। ডাইনোসর বা টেরোড্যাকটিস-এর মতো উট প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলাও নিরাপদ নয়। একজন তো বলেই বসল–উট কি হবে? উটের পিঠ একতলা উঁচু। পড়ে মরবেন নাকি? হাড়গোড় গুঁড়িয়ে যাবে যে।

কবিতা গেল ক্ষেপে–তাতে তোমার কী? আমরা উট চাই। উটের পিঠে চাপব, মরি মরব। তিনটে উট চাই। সারাদিনের জন্যে।

ওরা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইল। দু-একজন নিজেদের মধ্যে ফিসফাসও করে নিল। তারপর শুনলাম, উট নামক জীবটা নাকি ইদানীং বিকানীরে বড়ই দুর্লভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাইলেই তা পাওয়া যায় না। সবুর করতে হবে।

রাগে গজগজ করতে করতে আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। কবিতা যদি নাগিনী হত, তাহলে নিশ্চয় আসবার সময় ছোবল বসিয়ে আসত উটের আড্ডায় কাউকে না কাউকে। কিন্তু কিছুই যখন করা গেল না, তখন আমরা গেলাম বিকানীর প্যালেসে। সেখানে পাথরের চত্বরে দাঁড়িয়ে নীচের শহরের দিকে তাকিয়ে আছি, দেখছি সাদা সাদা ঘিঞ্জি বাড়ির চেহারা আর ভাবছি সব দেশীয় রাজ্যেই কি একই দৃশ্য? চকমিলানো মার্বেল প্রাসাদ একজনের, ঝুঁকো বাড়ি সকলের?

এমন সময়ে কবিতা বলল–ঠাকুরপো, বললে তো বলবে মেয়েদের মনে সন্দেহ লেগেই আছে। কিন্তু সেই সকাল থেকে একটা লোক আমাদের পিছু নিয়েছে। লোকটা এখানেও এসেছে।

কবিতা কথাটা বলল যেন হাওয়াকে লক্ষ্য করে নীচের ঘিঞ্জি বাড়ির দিকে তাকিয়ে। ইন্দ্রনাথও কথাটা শুনল যেন হাওয়ার মুখে। দুজনের কেউই পিছন ফিরল না, এদিক ওদিক তাকাল না। অগত্যা আমিও যেভাবে দাঁড়িয়েছিলাম, রইলাম সেইভাবেই দাঁড়িয়ে।

ইন্দ্রনাথ বলল–যদি কেউ পেছনে লেগে থাকে তো তোমার জন্যে।

অপরাধ?

তোমার উর্বশীরূপ। বিদেশ-বিভুয়ে বেরিয়ে রূপটাকে ঢেকে রাখলেই পার।

তুমি গোয়েন্দা না কচু। |||||||||| কেন?

চোখ থাকতেও চোখ নেই। মেয়েদের এইজন্যই গোয়েন্দা হওয়া উচিত।

খুলে বল।

আমরা সোজা চলি। সোজা দেখি। কিন্তু পাশ থেকে কে আমাদের দেখে কী করছে, না তাকিয়েও বুঝতে পারি। যেমন এখন পেরেছি।

সে তো ভালো কথা। কিন্তু সে জন্যে আমি গোয়েন্দা না হয়ে কচু হতে যাব কেন?

যাবে এই কারণে যে লোকটা কার দিকে তাকিয়ে আছে তা তুমি দ্যাখনি–কিন্তু আমি দেখেছি।

কার দিকে তাকিয়ে?

তোমার দিকে।

ইন্দ্রনাথ কোনও জবাব দিল না। পকেট থেকে চন্দনকাঠের কাজ-করা সিগারেট কে বার করল। একটা সিগারেট ঠোঁটের ফাঁকে আলগোছে ঝুলিয়ে নিয়ে কি যেন ভাবতে লাগল। তারপর দেশলাই বার করে জ্বালতে গিয়ে কাঠি নিভে গেল। হাওয়া বোধহয় সামনে থেকে আসছে। তাই পেছন ফিরে হাত আড়াল করে কাঠি জ্বালতেই জ্বলে উঠল। সিগারেটও জ্বলল।

আমি দেখলাম, আঙুলের ফাঁক দিয়ে সেইসঙ্গে অদূরে মার্বেল ক্যানোপির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকেও দেখা হয়ে গেল ইন্দ্রনাথের।

কাঠিটা ফেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল ইন্দ্রনাথ।

বলল–বউদিকে ধন্যবাদ জানাই। আমার নাম কচু হওয়াই উচিত। লোকটা আমাকেই নজরে রেখেছে।

কিন্তু কেন? শুধোলাম আমি।

বুঝতে পারছি না। আমরা তিনজনেই এ অঞ্চলে বিদেশি। অথচ নজর আমার দিকে। তার মানে একটাই। লোকটা আমাকে চেনে। আমি কিন্তু ওকে চিনতে পারছি না।

এই পর্যন্ত কথা হল বিকানীর প্যালেসে। এবার ফেরার পালা। মনটা আর ততটা হালকা নয়। রোমাঞ্চ-রোমাঞ্চ ভাবের সঙ্গে একটু দুর্ভাবনা তো আছেই। রাজপুতদের দেশে এসে না জানি কি ঝামেলায় পড়তে হয়।

হলও তাই। এঁকাবেঁকা পথে ফিরছে আমাদের অটোরিক্সা। মানে, তিনচাকার মোটর সাইকেল। আচমকা রাস্তার ওপর ডিনামাইট ফাটল।

পরে শুনেছিলাম, রাস্তা চওড়া করার জন্যে অমন ডিনামাইট নাকি হামেশাই ফাটছে শহরে। কখনো ফাটাচ্ছে মিলিটারি, কখনো অন্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেদিনের ডিনামাইটটি কার দয়ায় সমস্ত রাস্তা জুড়ে ফাটল, সে হদিশ আর পাওয়া গেল না।

ফল হল সাঙ্ঘাতিক। বেগে ছুটছিল মোটরসাইকেল রিকশা, আচম্বিতে সামনে দেখলাম রাস্তা উড়ে গেল। তিনতলা বাড়ির সমান ধুলো আর ধোঁয়ার ফোয়ারা লাফিয়ে উঠল।

আর আমাদের অটোরিকশা সোজা গিয়ে আছাড় খেল সেই গর্তে।

তারপর আর কিছু মনে নেই।

জ্ঞান ফিরলে দেখলাম রাস্তাতেই শুয়ে আছি। মাথা ভিজে গেছে রক্তে। রক্তটা আমার চাইতে আমার ড্রাইভারের বেশি। তার খুলি দু-ফাঁক হয়ে গিয়েছে। মারা গিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে।

কবিতার হাত ভেঙে গিয়েছে। ইন্দ্রনাথ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মাথা দিয়ে গড়াচ্ছে রক্ত।

আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে। তার মধ্যে মিলিটারি দেখলাম, পুলিশ দেখলাম সাধারণ পথচারীও দেখলাম।

মাথার মধ্যে অত যন্ত্রণা নিয়েও চোখ সরাতে পারছিলাম না ইন্দ্রনাথের ওপর থেকে। ইন্দ্রনাথ…যে ইন্দ্রনাথ সহস্র বিপদ-ঝঞ্ঝায় চিরকাল অকুতোভয়, যে ইন্দ্রনাথ বহুবার বহুভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা কষে হাসতে হাসতে কদলী দেখিয়েছে যমালয়কে–সেই ইন্দ্রনাথ সামান্য একটা অ্যাকসিডেন্টের ফলে এমন হয়ে গেল?

হাসছিল ইন্দ্রনাথ। আপনমনে হাসছিল। শব্দহীন হাসি।

শব্দ ওর কণ্ঠেও আর জাগেনি।

.

ব্রেন শক। ডাক্তারেরা তাই বললে। মাথায় এমন চোট লেগেছে যে সহসা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ইন্দ্রনাথ রুদ্র। সেই সঙ্গে চিন্তার স্বচ্ছতাও। সংক্ষেপে পাগল হয়ে গিয়েছে দুরন্ত ইন্দ্র…সেই সঙ্গে হয়েছে বোবা।

সে কি কান্না কবিতার। খবর ছড়িয়ে পড়ল দেখতে দেখতে। সারা বিকানীর শহরে যেন জাদুমন্ত্রবলে রটে গেল, কলকাতার বিখ্যাত গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্রকে ডিনামাইট ফাটিয়ে কারা যেন বোবা করে দিয়েছে, উন্মাদ বানিয়ে ছেড়েছে। মোমের হাত রহস্য ভেদ করে ভারত সরকারের মুখোজ্জ্বল করেছিল যে ইন্দ্রনাথ রুদ্র, হীরামনের হাহাকার প্রহেলিকায় অভূতপূর্ব মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিল যে প্রাইভেট ডিটেকটিভ, মরুভূমির দেশে এসে সে ঘায়েল হয়েছে।

কিন্তু কাদের হাতে?

রহস্য রহস্যই রয়ে গেল। আমি ওকে কলকাতায় সরাতে চাইলাম । কিন্তু নতুন বিপদ দেখা দিল। একমুখ দাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় টো-টো করত ইন্দ্রনাথ। এমনও গেছে রাতে ফেরেনি–সারাদিন ফেরেনি। তারপর আবার দেখা দিয়েছে লাল চোখ নিয়ে..মুখে সেই শব্দহীন হাসি। সরল চাহনি। মাঝে মাঝে কী এক আতঙ্কে বিস্ফারিত…তখন যেন চমকে চমকে উঠত অকারণে..খুট শব্দ শুনলেই এমন করে উঠত যেন কানের কাছে আবার ডিনামাইট ফাটল।

জয়ন্তকে চিঠি লিখলাম। জয়ন্ত চৌধুরী। আমাদের কলেজবন্ধু। এখন পুলিশের দাসত্ব করে। চোর-ছ্যাচোড় নিয়ে কারবার। বিপদে-আপদে তিন বন্ধুই তিনজনকে স্মরণ করতাম। এবারও করতে হল। কেননা, ইন্দ্রনাথকে আমি বিকানীর থেকে সরাতে পারছিলাম না কিছুতেই। যার দেখা পাওয়াই ভার, তাকে স্টেশনে নিয়ে যাই কী করে?

জয়ন্ত এল যথাসময়ে। সব শুনল। ইন্দ্রনাথের সঙ্গেও দেখা হল। কিন্তু জয়ন্তকে যেন চিনি চিনি করেও চিনতে পারল না ইন্দ্রনাথ।

কীভাবে যে দিন কেটেছে, ভগবানই জানেন। কবিতা প্রায় নাওয়া-খাওয়া ত্যাগ করেছিল ইন্দ্রনাথের ওই শোচনীয় অবস্থা দেখে। কাকে সামলাই আমি? বন্ধুকে না, বউকে? আমার নিজের অবস্থাও যে শোচনীয়। নার্ভের সহ্যের একটা সীমা আছে তো।

জয়ন্ত স্থানীয় পুলিশ-মহলে গেল। উদ্দেশ্য ছিল ডিনামাইট বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান। ইন্দ্রনাথকে যে লোকটা পিছু নিয়েছিল, তার হদিশ পাওয়া গেছে কিনা, এ খোঁজও নিয়েছিল। খবর কিছুই পায়নি। পুলিশ মহল অন্য ঝামেলা নিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছে। ডিনামাইট বিস্ফোরণ আর উধাও আততায়ী নিয়ে মস্তিষ্ক ঘর্মাক্ত করবার সময় তাদের নেই।

তবে চাঞ্চল্যকর একটা খবর নিয়ে এল জয়ন্ত। বালির দেশের সাজানো গোছানো সুন্দর এই শহরটিতে যে এমন অসুন্দরের কারবার চলছে, তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি আফিং, মরফিন, হেরোইনের কথা বলছি।

বছরখানেক আগেই নাকি বোম্বাই, কলকাতা, দিল্লির পুলিশ মহল আর আবগারী বিভাগের টনক নড়েছিল। রাতারাতি মাদকদ্রব্যের চোরাই চালান কেন যে এত বেড়ে গেল, তা ভাবতে ভাবতে চুল পাকবার উপক্রম হয়েছিল কেষ্ট-বিষ্ণুদের। হোমরা-চোমরারা অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে, অনেক তদন্ত-টদন্ত করে জানতে চাইল মালটা আসছে কোত্থেকে? সমস্ত উত্তর ভারত তোলপাড় করে জানা গেল সেই তথ্য।

বিস্ময়কর তথ্য সন্দেহ নেই। প্রথমে সন্দেহ করা গিয়েছিল বোম্বাই আর কলকাতাকে। যত লটঘট ব্যাপার তো অপরাধের এই দুটি ডিপো থেকেই ঘটছে। কাজেই প্রচণ্ড চাপ এসে পড়েছিল দুই শহরের পুলিশ চাইদের ওপর। নাকে কি সরষের তেল দিয়ে ঘুমনো হচ্ছে? মরফিন-আফিং হেরোইনে দেশ যে ছেয়ে গেল।

চাপে পড়ে খোঁজ-খোঁজ শুরু হল। তখনই জানা গেল চাঞ্চল্যকর খবরটা। ঘুণাক্ষরেও যা কেউ কল্পনা করতে পারেনি, ঘটছে তাই। বড় শহর নয়, আফিং আর আফিংজাতীয় সব কিছুই বিপুল পরিমাণে চালান হচ্ছে বিকানীর শহর থেকে।

বিকানীর! যার নাম শুনলেই নেচে ওঠে টুরিস্টরা, চোরাই চালান আসছে সেই শহরেই। সেখান থেকে বিভিন্ন পথে মালটা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

তবে কি টুরিস্টদের হাতেই আসছে চোরাই চালান? অসম্ভব। টুরিস্টরা আসছে কোত্থেকে? অধিকাংশই দিল্লি এবং বোম্বাই থেকে। অথচ পাকা খবর রয়েছে, মাল যাচ্ছে বিকানীর থেকে দিল্লি এবং বোম্বাইতে। ওদিকে থেকে এদিকে আসছে না।

তবে? তখন গবেষকরা বসলেন আফিংয়ের জাত নির্ণয় করতে। জানা গেল এ আফিংয়ের চাষ হয়েছে তুরস্কর মাটিতে। অর্থাৎ তুরস্কর আফিং মরফিন আর হেরোইনের আকারে ভারতে ঢুকছে বিকানীর দিয়ে।

কিন্তু কীভাবে? এই নিয়ে পাগল হবার উপক্রম হয়েছে স্থানীয় পুলিশ। সুরাহা আর হচ্ছে । তুরস্ক আর ভারতের মাঝে রয়েছে পারস্য, আফগানিস্থান, পাকিস্তান। তিন-তিনটে দেশ পেরিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি হেরোইন ভারতে প্রবেশ করছে। অথচ পথটা কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না।

জয়ন্ত বলল–মৃগাঙ্ক, আফিং থেকে যে কটা মাদক দ্রব্য তৈরি হয়, তার মধ্যে সবচাইতে মারাত্মক হল হেরোইন। আউন্স পিছু এর দাম নিউইয়র্কে তিনশো থেকে ছশো ডলার। প্যারিসেও তাই। ইন্ডিয়ায় প্রতি আউন্স তিন হাজার থেকে ছহাজারে খুচরো বিক্রি হচ্ছে নীচের মহলে।

শুনে হাঁ হয়ে গেলাম আমি। বললাম–বল কি! তার মানে এক-এক চালানেই তো রাজা বনে যাওয়া যায়।

যায়ই তো। বিকানীর এয়ারপোর্ট থেকে একটা উড়োজাহাজে লেজের মধ্যে লুকিয়ে এক খেপে কত টাকার মাল নিয়ে গিয়েছিল জান?

কত টাকার?

শুনে কথা আটকে গেল আমার। জয়ন্ত দেখলাম খুবই উত্তেজিত। বলল–হিরোইনের যারা চোরাই চালান দেয়, তাদের একটা আন্তর্জাতিক দল আছে। নারকোটিক ব্যুরোর কাছে তাদের নামের লিস্টও আছে। নিউইয়র্ক থেকে চাপ এসেছে আমাদের ওপর। ইন্ডিয়া ঘাঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে হেরোইন পাচারের। ওরা বলছে, তুরস্কর আফিং ইরানের একটা ফ্যাক্টরিতে এসে হেরোইন হচ্ছে। সেখান থেকে ভারত হয়ে চলে যাচ্ছে বোর্নিও। বোর্নিও থেকে আরও ওদিকে। কি ফ্যাচাং বল তো।

আমি বললাম–ফ্যাচাং বলে ফ্যাচাং! কিন্তু তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার দরকার কি ভাই? ইন্দ্রনাথকে নিয়ে পিট্টান দিতে পারলেই বাঁচি।

জয়ন্ত বললে–তাহলে তো হেরে ভূত হয়ে দেশে ফিরতে হয়।

হেরে ভূত হতে যাব কেন?

ইডিয়ট। ইন্দ্রনাথকে ঘায়েল করেছে যারা, তারা আঁচ করেছিল ইন্দ্রনাথ বিকানীর এসেছে ওদের ঘাঁটি খুঁজতে। বিকানীর পুলিশকে যারা থোড়াই কেয়ার করে, ইন্দ্রনাথকে তারা ভয় পেয়েছে। তাই চেয়েছিল পথের কাঁটা সরাতে। কিন্তু কী হতে কী হয়ে গেল।

খট করে একটা শব্দ হল। দেখি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রনাথ। কখন জানি ফিরেছে রাস্তা থেকে। কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল তাও জানি না। নিঃশব্দে হাসছে জয়ন্তর দিকে চেয়ে।

মুখের হাসিটা পাগলের হাসি, কিন্তু চোখের হাসিটা যেন কীরকম।

.

দিন কয়েক পরের কথা।

কবিতার প্লাস্টার করা হাত নিয়ে ট্রেনের ধকল সইবে না বলেই বোধহয় জয়ন্ত কলকাতা যাত্রা স্থগিত রেখেছিল। বেরিয়ে যেত সেই সকালে, ফিরত রাতে। শুনতাম কলকাতা বোম্বাই দিল্লির নারকোটিক স্কোয়াড ডিটেকটিভরা এসে রোজ গুলতানি করছে বিকানীরে। এমনকী লন্ডন আর নিউইয়র্ক থেকেও দুজন এক্সপার্ট এসেছে চোরাই চালানের হদিশ বার করতে। কিন্তু ঘোল খেয়ে যাচ্ছে সবাই।

যে দিনের কথা বলছি, সেদিন সকাল থেকেই টিকি দেখা যায়নি ইন্দ্রনাথের। দুপুরের দিকে হন্তদন্ত হয়ে ফিরল জয়ন্ত। এসেই নাকে মুখে গুঁজে সেই যে বেরিয়ে গেল, সারা রাত আর পাত্তা নেই। যাবার সময়ে অবশ্য একটু অদ্ভুত হেসেছিল। বলেছিল, কাল সকালে একটা সারপ্রাইজ নিউজ দেব। তৈরি থাকি।

সুতরাং সারারাত জয়ন্ত না ফেরায় খুব দুশ্চিন্তা হয়নি। ধরে নিয়েছিলাম, হেরোইন নিয়ে নিশ্চয় সাতঘাটের জল খেয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সেইসঙ্গে উন্মাদ ইন্দ্রনাথও নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল। কর্তা-গিন্নি দুজনেই ঠায় বসে৷ রাগ হতে লাগল জয়ন্তর ওপর। আফিংয়ের পাহাড়ে ভারত চাপা পড়ে পড়ুক, তাতে আমাদের কী? ইন্দ্রনাথ আগে না আফিং আগে? চটপট কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখালে এখনও হয়তো একটা অমূল্য ব্রেন রক্ষা পেতে পারে।

ছটফট করে কাটালাম সমস্ত রাত। ভোরের দিকে যখন নিজেই পুলিশ ফাঁড়ির দিকে যাব ভাবছি, এমন সময়ে একটা জিপ এসে থামল ফটকের সামনে।

পুলিশ জিপ। প্রথমে নামল জয়ন্ত। পেছনে ইন্দ্রনাথ রুদ্র। হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট।

সিগারেট! ইন্দ্রনাথ ফের সিগারেট ধরেছে? অথচ ডিনামাইট বিস্ফোরণের পর থেকে সিগারেটের সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্কই ছিল না!

.

জয়ন্ত বলেছিল, একটা সারপ্রাইজ নিউজ দেবে। সে নিউজটা যে এমনি পিলে-চমকানো হবে, তা ভাবিনি।

ঘরে ঢুকল ওরা দুজনে। ঢুকেই নাটকীয় ভঙ্গিমায় জয়ন্ত বলল–বন্ধুবর মৃগাঙ্ক এবং বন্ধুপত্নী কবিতা। তোমাদের প্রথমেই একটা সু-খবর জানাই। খবরটা হচ্ছে এই : থ্রি চিয়ার্স ফর ইন্দ্রনাথ রুদ্র! হিপ হিপ হুররে! হিপ হিপ হুররে! হিপ হিপ হুররে!!!

কোটরাগত দুই চোখ নাচিয়ে ইন্দ্ৰনাথ শুধু হাসল। শব্দহীন হাসি। সিগারেটে জপেশ টান দিয়ে বসল সোফায়।

চিরকালই দেখেছি, অধিক উত্তেজনায় আমি তোতলা হয়ে যাই। বিয়ের আগে কবিতার কাছে কতবার হয়েছি। এখনও গিন্নির মুখ-নাড়ায় মাঝে মাঝে হই। কিন্তু সেদিন তোতলা হলাম ইন্দ্রনাথের ওই পাগল মূর্তির মধ্যেও একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করে।

জয়ন্ত মুখ টিপে হাসল। বলল–মৃগ, আফিং-রহস্য ভেদ হল। কাল রাতে পুরো গ্যাংটা ধরা পড়েছে।

কোথায়? যন্ত্রচালিতের মতো প্রশ্ন করলাম।

উটের আড্ডায়।

উটের আজ্ঞায়! বলে ক্ষণেক হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। তারপর বিজ্ঞের হাসি হেসে বললাম–তাই বল। উট আফিং বয়ে আনছিল। অথচ কেউ অ্যাদ্দিন দেখেনি।

উট আফিং বয়ে আনছিল–ঠিকই ধরেছিস। বলে অদ্ভুত হাসল জয়ন্ত। তবে কেউ দেখেনি। দেখবে কী করে? ফ্লোরোস্কোপ করার বিদ্যে যে কারো জানা ছিল না।

কি কোপ বললি?

ফ্লোরাস্কোপ। মানে যা দিয়ে চামড়া ভেদ করে মেট্যাল ক্যাপসুলগুলো দেখা যায়।

মেটাল ক্যাপসুল! ফ্লোরোস্কোপ! ভাই জয়ন্ত, আমার মাথা ঘুরছে। একে সারা রাত জেগেছি। আর তার ওপর আর হেঁয়ালি ভালো লাগে না। কী হয়েছে খুলে বল। আফিং, উট, ফ্লোরোস্কোপ, মেট্যাল ক্যাপসুল–মানে কী এ-সবের?

হে লেখক, গাঁজাখুরী গপপো না বানিয়ে এ কেস নিয়ে দুকলম লিখো। সুনাম হবে। তুরস্ক থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত এসে হেরোইন আর মরফিন কীভাবে থর মরুভূমি পেরিয়ে বিকানীরে ঢুকেছিল তা জান?

জানবার জন্যেই তো আমি বসে।

উটের চলাচল মরুভূমির সীমান্তে খুব সন্দেহজনক কিছু নয়। তাই থর মরুভূমির ও-প্রান্তে ধাতুর ক্যাপসুল খাইয়ে দেওয়া হত উটদের। সাধারণ ক্যাপসুল নয়। ক্যাপসুলের ভেতরে থাকত হেরোইন আর মরফিন। উটের পাঁচকযন্ত্র যে কি বিদঘুঁটে, তা তোমার অজানা নয়। দীর্ঘদিন না খেয়েও শরীরের মধ্যে জমানো খাবার ভাঙিয়ে ওদের চলে যায়। মেটাল ক্যাপসুলগুলো অন্যান্য খাবারের সঙ্গে শরীরের মধ্যেই খাবার জমানোর খুপরিতে গিয়ে জমা থাকত। মরুভূমি পেরিয়ে বিকানীরে আসার পর উট মেরে খুপরির মধ্যে থেকে বার করে নেওয়া হত মেটাল ক্যাপসুল।

উট মেরে?

অবাক হওয়ার কী আছে? এক-একটা উট কত টাকার হেরোইন নিয়ে আসত জান?

আমি নীরব।

জয়ন্ত বলল–লাখখানেক টাকার কম তো নয়। কাজেই একটা উট মরলেও লাভের ভাগ এমন কিছু কমছে না। অথচ কারো চোখে পড়ছে না। তন্নতন্ন করে সার্চ করেও কিছু ধরা পড়ছে না। ফ্লোরোস্কোপ কই?

ফের ফ্লোরোস্কোপ। বলছি না হেঁয়ালি করিসনি। খেঁকিয়ে উঠলাম আমি। সারা রাত জেগে মাথার কি ঠিক থাকে?

থতমত খেয়ে জয়ন্ত বলল–বারে, হেঁয়ালি আর রইল কোথায়? সবই তো বললাম।

আজ্ঞে না, সব এখনও বলা হয়নি।

কী বাকি রইল বন্ধু?

উটকে সন্দেহ হল কেন?

বিকানীরে উট কমে গিয়েছিল বলে, উটের দাম হঠাৎ চড় চড় করে বেড়ে গিয়েছিল বলে, মরুভূমিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্যে ইন্দ্রনাথ রুদ্র উট পায়নি বলে।

মরুভূমিতে-বেড়াতে-যাওয়ার জন্যে-ইন্দ্রনাথ-রুদ্র-উট-পায়নি-বলে! যেন আবৃত্তি করলাম…থেমে থেমে প্রতিটি শব্দ ওজন করে করে বললাম। তারপর বুঝি বিদ্যুৎ খেলে গেল মাথায়। বললাম সন্দিগ্ধ কণ্ঠে–ইন্দ্রনাথ কেন বলবে? ইন্দ্রনাথ তে বোবা।

আচমকা অট্টহাসি মানুষকে যে কি সাঙ্ঘাতিক চমকে দেয়, এতদিনে হাড়ে হাড়ে বুঝলাম।

কিঞ্চিৎ ধাতস্থ হয়ে দেখলাম ইন্দ্রনাথ রুদ্র হাসছে। হাসির ধমকে ফুলে ফুলে উঠছে সর্বদেহ। সশব্দ অট্টহাসি–নিঃশব্দ নয়।

ইন্দ্রনাথ রুদ্র হাসছে! শব্দ যার কণ্ঠ থেকে বিদায় নিয়েছিল ডিনামাইট বিস্ফোরণের পর মাথায় চোট পেয়ে, সে হাসছে।

হাসি থামিয়ে বলল ইন্দ্রনাথ রুদ্র–তুই একটা প্রকাণ্ড গভ। আমাকে যারা মারতে গিয়ে মারতে পারল না, তারা আবার আমাকে মরণ-মার মারত যদি না আমি বোবা আর পাগলের ভান করতাম। আমি বোবা নই, পাগল নই, কোনওকালেই হইনি। কেবল অভিনয় করেছিলাম ওদের ঢিঢ করবার জন্যে। উদ্দেশ্য আমার সফল হয়েছে। এবার হে বন্ধু, চল গৃহে ফিরি।

হঠাৎ একটা শব্দ শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, কবিতার সংজ্ঞাহীন দেহ লুটোচ্ছে সোফার নীচে। জ্ঞান নেই। অথচ দুই চোখে বইছে অশ্রুর ধারা। আনন্দ-অশ্রু!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *