“কই গো খেতে এসো, খাবার ঠান্ডা হচ্ছে যে” – বারবার গিন্নি ও বৌমার আওয়াজ পেয়েও বিছানা থেকে নামতে পারছিলেন না বটকৃষ্ণ বাবু”।কেমন যেন তার মনে হচ্ছে আজ তার শেষ দিন,শেষ মুহূর্ত।আর্মিতে যোগ দেওয়া শহীদ ছেলের শেষ চিঠি বারবার পড়ছিলেন।
কোনো সাড়া নেই দেখে ঘরে উঁকি দিতেই ওরা দেখলো বাড়ির বটবৃক্ষ মানুষটি ছেলের চিঠি আঁকড়ে নিথর।সন্তানের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার পর থেকেই আনচান করছিল শরীরটা।এভাবে যে ঘুমের মধ্যে বাবা মারা যাবেন কেউ কল্পনা করে নি।চোখের জল মুছে চিঠিটা ভাঁজ করে নিজের কাছে তুলে রাখলো শহীদের স্ত্রী।
শ্রীচরনেষু বাবা,
প্রণাম নিও।দেশে হাজার খবরের ভিড়ে ছোট্ট খবর”পণবন্দী জওয়ান” অনেকের চোখ এড়ালেও বাড়ির কেউ আর্মিতে থাকলে আতঙ্কে রাখে পরিবার,তোমাদের বাবা ।
জঙ্গিদের ঘাঁটি উড়াতে সক্ষম হয়ে ফেরার পথে ঘৃণ্য কৌশলে তোমার রতন পণবন্দি শত্রুদেশে।আমার এতটুকু আক্ষেপ নেই বাবা,আমি গর্বিত ন্যস্ত লক্ষ্যপূরণে।তোমার মতো দৃঢ় মেরুদণ্ডের মানুষের শিক্ষা-রক্ত আমার ধমনীতে, মায়ের স্নেহ ভালোবাসা শিরা-উপশিরায় ।
রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠক কূটনৈতিক সহাবস্থানের আগেই হয়তো জঙ্গীরা আমায় কাপুরুষের মত হত্যা করবে। ঘাবড়িও না বাবা।তোমার কাছে আমার একটা শেষ ইচ্ছা,আবদার রাখছি। আমার মৃত্যুর পর সরকার ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু দিলে গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় নিজের উদ্যোগে যে পরিকাঠামো শুরু করেছি অভাবী বাচ্চাগুলোর পড়াশোনায় ওই প্রাপ্ত অর্থ পৌঁছে দিও।
পড়াশোনার প্রতি ওদের আগ্রহ,একাগ্রতা মানুষ হয়ে ওঠার মধ্যেই বেঁচে থাকবো আমি তোমাদের সত্যিকারের রতন হয়ে।
ইতি
তোমার রতন