Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নববর্ষার পাঁচালী || Manisha Palmal

নববর্ষার পাঁচালী || Manisha Palmal

নববর্ষার পাঁচালী

আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার! বর্ষা সুন্দরীর আগমন বার্তা সূচিত হচ্ছে! মেঘের আঁচলে ঢাকা প্রকৃতির মুখ! দূরে আকাশ পটে বক আর পানকৌড়ির ঝাঁক উড়ে চলেছে দক্ষিণের ঝিলের পানে। দূর থেকে ভেসে আসছে মাছরাঙার সুরেলা শিস। সঙ্গী কে ডেকে চলেছে সে।

প্রাক বরষার বৃষ্টিতে গাছপালা শ্যামল শোভাতে ঝলমল করছে। বনপুলক আর মাধবীলতা গলাগলি। বৃষ্টি ভেজা বাতাসে ওদের মিশ্র সুগন্ধ যেন প্রকৃতির বুকে র আতরদানির সুবাস। মন ভরিয়ে দিচ্ছে। রঙ্গন বাগানবিলাসের ঝোপে মৌটুসী দুটো সমানে লুকোচুরি খেলছে। ওদের সুরেলা শিসে বাদুলে হাওয়াটা মেতে উঠেছে। কলাবতীর জঙ্গলে কমলা হলুদ ফুলের মেলা মৌটুসী দুটো ওখানেও উঁকি দিচ্ছে— প্রজাপতিদের সাথে পাল্লা দিয়ে!

শ্বেত শিমুলের তেডালায় বুলবুলি বাসা করেছে। কাউকে গাছে বসতে দেখলেই কর্তা-গিন্নি তেড়ে আসছে— সদ্য মা বাবা হয়েছে তো! দক্ষিণের মাঠ থেকে এক ঝাঁক হরিয়াল এসে বসলো শ্বেত শিমুলের ডালে। ওদের আগমনে পাখিদের মজলিসে আলোড়ন উঠলো। সবাই মাঠের খবর জানতে উৎসুক। দক্ষিণের মাঠ বর্ষার আগমনে পান্নাসবুজ হয়ে উঠেছে। বকের ঝাঁক সেই সবুজের মাঝে সাদার মীনাকারি। নয়ানজুলি র জলে শাপলা-শালুক চোখ মেলেছে। বুলবুলি গিন্নি অমনি বাসা থেকে গলা বাড়ালো—” দিদিমনির জল বাগানেও ফুটেছে গো শাপলারাণী। কি সোন্দর!”

বড় কমলাতুঁতে মাছরাঙ্গাটা হড়বড় করে এসে বসলো শিমুলের তেডালায় ।কি যে বললো কেউ বোঝার আগেই আবার উডান টানলো রাখা জঙ্গলের দিকে। আবার শুরু হল বৃষ্টির রিমঝিম। জলচুডি ওডনায় ঢাকা পডলো চরাচর। জল তরঙ্গের মধুর সুর যেন চরাচরকে মায়ায় জড়িয়েছে। বৃষ্টি একটু কমতে বাগানে পাখপাখালির কলরব শুরু হলো। আসলে এখনই তো ওদের মিলন ঋতু ।ঘর বাঁধবার সময়। দেবদারু মেহগিনি চাঁপা বকুল গাছে বাসা বাঁধার জন্য গাংশালিক বুলবুলি টুনটুনি প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। নারকেল গাছে তো শালিকদের একচ্ছত্র আস্তানা। মাধবীলতা বন পুলকের কুঞ্জে ডাহুকগিন্নি বাসা করার জন্য ঘোরাঘুরি করছে। ওটা তোআসলে ঘুঘু দম্পতির বিশ্রাম স্থল। মাধবীলতা আর বাগানবিলাসের ঝোপে মৌটুসীর ঘর-গেরস্থালি। সারাবাগান প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর।

হঠাৎ পাখিদের সমবেত চিৎকারের চমকে উঠি— দেখি প্রাচীরের পাশের জবা গাছের ডালে একটা ঢোড়া সাপ! পাখিরা সমবেতভাবে চড়াও হয়েছে তার ওপরে! আস্তে আস্তে সাপটা মাঠে নেমে গেল! আম্রপালির মগডাল থেকে কাঠবেড়ালি দুটো সমানে চিৎকার করে চলেছে! বুলবুল গিন্নি মুখ বাঁকালো—” এই যে এলেন বিদ্যেধরীরা। এবার আর বাগানের কোন ফল পাকুড দাঁতে কটার জো থাকবে না।”

আসলে বাগানের আম পেয়ারা সবেদার দাবীদার বুলবুলিরা আর কাউকেই ভাগ দিতে চায় না ।মাঝে মাঝে টিয়ার ঝাঁক এসে উৎপাত করে তবে বুলবুল দেরই একচেটিয়া অধিকার এই বাগানে। বৃষ্টির প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে মেঘের ঘোমটা সরছে। বৃষ্টিভেজা মিষ্টি সকালে চারপাশ সবুজের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে —কি নয়ন মনোহর! লাল রঙ্গনের থোকায় বৃষ্টিফোঁটার হীরকদ্যুতি। কামিনী গন্ধরাজের সুবাস মেশা ভিজে হাওয়াটা সোহাগ পরশে প্রভাতী প্রকৃতি যেন হেসে উঠেছে। ডাহুক দম্পতি এসে বসলো মেহগিনির ডালে– তার গল্পের ঝুলি খুলতেই দোয়েল ছাতারে ফিঙে সমস্বরে বলে উঠল–” আগে দক্ষিণের মাঠের খবর বল!” পাখিদের মজলিস জমে উঠেছে! হঠাৎ উড়ো মেঘের ওড়না আলোর মুখ কে দিলো ঢেকে। অকাল আঁধারে ঢাকা পডলো চরাচর। পথ ভোলা এক দল শামুকখোল হুরমুড়িয়ে এসে নামল দক্ষিণের মাঠে– ঝিলের পাশের জমিতে। ওদের পাখায় ভর করেই যেন নেমে এলো নববর্ষার সজল ধারা। জল চুডি ওড়নায় মুখ ঢাকল চরাচর। মন গুনগুন করে উঠলো—” আবার এসেছে আষাঢ়—“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *