মার্ক টোয়েইন
“মার্ক টোয়েইন” (Mark Twain) ছদ্মনামেই তিনি অবশ্য বেশি পরিচিত। তাঁর আসল নাম – স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স। জন্ম তাঁর – ৩০শে নভেম্বর ১৮৩৫ সালে, ফ্লোরিডা, মিসৌরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ছিলেন একজন মার্কিন রম্য লেখক, সাহিত্যিক ও প্রভাষক। তাঁ পেশা লেখা এবং অধ্যপনা। তিনি জাতিতে আমেরিকান।
তাঁর লেখার ধরণ Fiction, historical fiction, শিশু সাহিত্য, non-fiction, ভ্রমণ সাহিত্য, বিদ্রুপ, প্রবন্ধ, দার্শনিক সাহিত্য, social commentary, সাহিত্য সমালোচনা।
তাঁর দাম্পত্যসঙ্গী – ওলিভিয়া ল্যাংডন ক্লেমেন্স (বি. ১৮৭০–১৯০৪)
তাঁর সন্তানগণ – ল্যাংডন, সুসি, ক্লারা, জিন।
মার্ক টোয়েইনের রসবোধ আর চপলবুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ, এবং তিনি জনসমক্ষেও ছিলেন ভীষণ জনপ্রিয়। তার বৃহস্পতি যখন তুঙ্গে, তখন সম্ভবত সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই ছিলেন সবচাইতে জনপ্রিয় তারকা। এমনকি মার্কিন গ্রন্থকার উইলিয়াম ফকনার টোয়েইন সম্বন্ধে একথা বলতেও বাকি রাখেননি যে, টোয়েইন ছিলেন “প্রথম এবং প্রকৃত আমেরিকান লেখক, তার পরের আমরা সকলেই তার উত্তরাধিকারী”। টোয়েইন ১৯১০ সালের ২১শে এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন (৭৪ বছর বয়সে) রেডিং, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বর্তমানে এলমিরা,নিউইয়র্ক এ শায়িত আছেন।
তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্য কাজ হচ্ছে “অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টম সয়্যার” এবং “অ্যাডভেঞ্চার্স অফ হাকলবেরি ফিন”। এই উপন্যাসদ্বয় বিশ্ব সাহিত্যে ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করেছে।
টোয়েইনের বেড়ে ওঠা হ্যানিবল, মিসৌরীতে। পরবর্তীতে এ শহর থেকেই টোয়েইন তার বিখ্যাত দুটি উপন্যাস হাকলবেরি ফিন এবং টম সয়্যার রচনার মূল উপাদান খুঁজে নিয়েছিলেন। একজন প্রকাশকের অধীনে কিছুদিন শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার পর তিনি একজন মুদ্রণ সন্নিবেশক হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার বড় ভাই ওরিয়নের সংবাদপত্রের জন্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। বড়ভাই ওরিয়নের সাথে নেভাডাতে যোগ দেয়ার আগে টোয়েইন মিসিসিপি নদীতে নৌকার মাঝি হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৮৬৫ সালে তার কৌতুকপূর্ণ গল্প “The Celebrated Jumping Frog of Calaveras County” প্রকাশিত হয়। গল্পটি তিনি শুনেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়াতে কিছুদিন খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময়ে। হাস্যরসেভরা এ ছোট গল্পটি তৎকালীন সময়ে তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এমনকি গ্রিক ক্লাসিক হিসেবে অনূদিত হয় তার এ ছোট গল্পটি। গল্পে কিংবা কথায় তার বুদ্ধিদীপ্ত এবং ব্যাঙ্গাত্মমক উপস্থাপনভঙ্গি সমালোচক, পাঠক নির্বিশেষে সকলের অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
টোয়েইনের জন্ম হয়েছিলো পৃথিবীর আকাশে হ্যালির ধূমকেতু আবির্ভাবের ঠিক কিছুদিন পরেই। তিনি ধারণা করতেন হ্যালির ধূমকেতুর সাথে সাথেই তিনি আবার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে তিনি সত্যি সত্যিই হ্যালির ধূমকেতুর পুনরায় প্রত্যাবর্তনের পরদিনই পরলোকগমন করেন। টোয়েইনকে অভিহিত করা হতো তার সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ রম্য-রচনাকার হিসেবে,”।এবং উইলিয়াম ফকনার টোয়েইনকে আখ্যায়িত করেছিলেন তাঁকে – “আমেরিকান সাহিত্যের জনক” হিসেবে।
তিনি ছিলেন কেন্টাকির অধিবাসিনী জেন এবং জন্মসূত্রে ভার্জিনিয়ান জন মার্শাল ক্লেমেন্স এর সন্তান। তাঁর বাবা মিসৌরীতে বসবাস শুরু করার সময়ে তাঁর বাবা-মা’র পরিচয় ঘটে এবং পরবর্তীতে ১৮২৩ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন সাত ভাইবোনের মাঝে ষষ্ঠ, কিন্তু তাদের মধ্য থেকে শৈশব অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন মাত্র তিনজন। তাঁর ভাই ওরিয়ন ক্লেমেন্স (১৮২৫-১৮৯৭), হেনরি, পরবর্তীতে যিনি নৌকা বিস্ফোরণে মারা যান (১৮৩৮-১৮৫৮) এবং পামেলা (১৮২৭-১৯০৪)। টোয়েইনের বয়স যখন তিন বছর তখন তাঁর বোন মার্গারেট(১৮৩৩-১৮৩৯) মারা যান, তারও তিনবছর পর মারা যান তার ভাই বেঞ্জামিন (১৮৩২-১৮৪২)। অন্য ভাই প্লেজেন্ট (১৮২৮-১৮২৯) মারা যান মাত্র ছয় মাস বয়সে।
টোয়েইনের বয়স যখন চার বছর, তখন তার বাবা হ্যানিবাল, মিসৌরীতে বসবাস করার জন্য চলে আসেন। হ্যানিবাল মিসৌরী নদীর তীরে গড়ে ওঠা একটি ছোট্ট বন্দরনগরী যেটা পরবর্তীতে টোয়েইনের দুই বিখ্যাত অভিযান গল্প “দ্য এডভেঞ্চার অফ হাকলবেরী ফিন” এবং “দ্য এডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার” এ উল্লিখিত কাল্পনিক শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ সৃস্টির পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো। মিসৌরী ছিলো একটি দাস শহর এবং ছোট্ট টোয়েইন আমেরিকার দাস প্রথার ইতিহাসের সাথে এখান থেকেই পরিচিত হন। পরবর্তীতে এ অভিজ্ঞতা তিনি তার লেখাতেও নানা ভাবে টেনে এনেছেন। টোয়েইনের বাবা একজন এটর্নী এবং বিচারক ছিলেন।
১৮৪৭ সালে, টোয়েইনের বয়স যখন এগারো, তখন তার বাবা নিউমোনিয়াতে মারা যান। এর পরের বছর টোয়েইন একজন প্রকাশকের অধীনে শিক্ষানবীশ হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৫১ সালে তিনি একজন মুদ্রণ সন্নিবেশক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং “হ্যানিবাল জার্নালে” একজন প্রদায়ক(Provider) হিসেবে নানা প্রবন্ধ ও রম্য স্কেচ আঁকা শুরু করেন। জার্নালটির মালিক ও পরিচালক ছিলেন তার ভাই ওরিয়ন। ১৮ বছর বয়সে টোয়েইন হ্যানিবাল ত্যাগ করেন এবং নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া, সেন্ট লুইস,মিসৌরী এবং সিনসিনাট্টি,ওহিওতে প্রকাশক হিসেবে কাজ করেন।
একবার মিসিসিপি নদী ধরে নিউ অর্লিন্স, লুইজিয়ানা অভিমুখে গমনকালে এক বাষ্পনৌকার নাবিক টোয়েইনকেও নাবিক হবার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। টোয়েইন তার “Life on the Mississipi” বইতে একজন নাবিককে বাষ্পনৌকার ক্যাপ্টেনের চেয়ে অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ এবং কর্তৃত্ববান বলে বর্ণনা করেছেন। সে সময়ে একজন নাবিকের চাকরি যথেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ ছিল যাতে মাসিক বেতন ছিল ২৫০ডলার। বাস্পনৌকার একজন নাবিককে নিয়ত পরিবর্তনশীল নদী সম্পর্কে প্রচুর অধ্যয়ন করতে হতো, যাতে এর তীরে গড়ে ওঠা শতশত বন্দর এবং কেঠো জমিতে সফলভাবে নোঙর করতে পারে। ১৮৫৯ সালে নাবিক লাইসেন্স পাবার পূর্বে টোয়েইনকে মিসিসিপি নদীর প্রায় ২০০০মাইল (৩২০০ কিমি) দৈর্ঘ্য পর্যন্ত অধ্যয়ন করতে হয়েছিল। এই চাকরির কল্যাণেই তিনি “মার্ক টোয়েইন” কলম নামটি বেঁছে নেন। তার চাকরির পরিভাষায় “মার্ক টোয়েইন” মানে হচ্ছে “দুই ফ্যাদম গভীরতার নদীর জন্য কান্না”। এই চাকরির জন্য প্রশিক্ষণকালীন সময়ে স্যামুয়েল তার ছোট ভাই হেনরিকেও একই চাকরিতে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ২১জুন,১৮৫৮ সালে হেনরি তার কর্মস্থল বাস্পনৌকাতে কাজ করার সময় বিস্ফোরণে মারা যান। টোয়েইন তার ছোট ভাইয়ের এই মৃত্যুঘটনাটিকে বিস্ফোরণ ঘটার একমাস আগে স্বপ্নে দেখেছিলেন বলে তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করে গেছেন। এর সূত্র ধরে তিনি পরবর্তীতে প্যারাসাইকোলজিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি প্যারাসাইকোলজি সোসাইটির একজন শুরুর দিকের সদস্য ছিলেন। টোয়েন তার ছোট ভাইয়ের এই হৃদয়বিদারক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্থানের জন্য সারাজীবন অপরাধবোধে ভুগেছেন এবং তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষী ভাবতেন। ১৮৬১ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শুরু হবার পর মিসিসিপি নদী দিয়ে সব ধরণের যোগাযোগ স্থগিত হয়ে যায়। এর আগ পর্যন্ত টোয়েইন তার চাকরিতে বহাল ছিলেন।
গৃহযুদ্ধের প্রারম্ভে টোয়েইন কিছুদিনের জন্য স্থানীয় মৈত্রী ইউনিটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলেন। তারপর তিনি তার ভাইয়ের সাথে কাজ করার উদ্দেশ্যে নেভাডা অভিমুখে গমন করেন। তার ভাই তখন কেন্দ্রীয় সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে টোয়েইন একটি স্কেচ আঁকেন যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে তিনি ও তার বন্ধু কোম্পানি ছেড়ে আসার পূর্বে দুই সপ্তাহের জন্য মৈত্রী সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন।
১৮৬১ সালে টোয়েইন ও তার ভাই ওরিয়ন একসাথে পশ্চিমে রওনা দেন। ওরিয়ন তখন নেভাডা অঞ্চলের তৎকালীন গভর্নর জেমস ডাব্লিউ নেই এর সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই ভাই মিলে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে একটি স্টেজকোচে চেপে বৃহৎ ভূমি এবং রকি পর্বতের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেন। এসময় সল্টলেক সিটির মর্মন সম্প্রদায়ও তাদের দেখা হয়ে যায়। টোয়েইনের ভ্রমণ ভার্জিনিয়া সিটি, নেভাডার রৌপ্য খনির শহরে এসে শেষ হয়। টোয়েইন সেখানে “কমস্টক লোড” এ খনি শ্রমিক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু টোয়েইন খনি শ্রমিক হিসেবে ব্যর্থ হন এবং ভার্জিনিয়া সিটির পত্রিকা “দ্য টেরিটরিয়াল এন্টারপ্রাইজ” এ কাজ শুরু করেন। লেখক এবং বন্ধু ড্যান ডিক্যুইলের অধীনে কাজ করার সময়েই তিনি সর্বপ্রথম “মার্ক টোয়েইন” নামটি ব্যবহার করেন। ৩রা ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৩ সালে তিনি “Letter From Carson – re: Joe Goodman; party at Gov. Johnson’s; music” নামের এক রম্য ভ্রমণ কাহিনিতে নিজের নাম “মার্ক টোয়েইন” হিসেবে স্বাক্ষর করেন। পশ্চিমে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তাকে “Roughing It” লিখতে অণুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো। “The Celebrated Jumping Frog of Calaveras County” লেখার জন্য নানা উপাদানও তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন তার এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে। ১৮৬৪ সালে টোয়েইন সানফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসেন। তখনো তিনি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। সেখানে তিনি ‘ব্রেট হার্ট’ এবং ‘আর্তিমাস ওয়ার্ড’ এর মত লেখকের সাথে পরিচিত হন। এ সময়ে তরুণ কবি ‘ইনা কুলব্রিথ’ এর সাথে তাঁর সম্ভবত প্রেম হয়েছিল।
লেখক হিসেবে টোয়েইন সর্বপ্রথম সফলতার দেখা পান যখন নিউইয়র্কের “দ্য স্যাটারডে প্রেস” নামের একটা সাপ্তাহিক পত্রিকায় ১৮ই নভেম্বর,১৮৬৫ সালে তার রম্য বড় গল্প “The Celebrated Jumping Frog of Calaveras County” প্রকাশিত হয়। তার এই লেখা তাকে জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি এনে দেয়। এক বছর পর তিনি স্যান্ডউইচ দ্বীপে (বর্তমান হাওয়াই) “স্যাক্রামেন্টো ইউনিয়ন” এর রিপোর্টার হিসেবে ভ্রমণ করেন। এ ভ্রমণকে উপজীব্য করে তার লেখা ভ্রমণলিপি দারুণ পাঠিকপ্রিয়তা লাভ করে এবং তার জীবনের প্রথম বক্তৃতার ভিত্তিও রচিত হয় এ ভ্রমণকে ঘিরেই। ১৮৬৭ সালে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা তাকে মেডিটেরিনিয়ান সাগর ভ্রমণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তার ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণকালীন সময়ে তিনি জনপ্রিয় অনেকগুলো ভ্রমণচিঠি রচনা করেন। পরবর্তীতে ১৮৬৯ সালে সেসব চিঠি একত্রে ‘The Innocents Abroad’ নামে প্রকাশিত হয়। এই ভ্রমণকালীন সময়েই তার হবু শ্যালক চার্লস ল্যাঙডন এর সাথে পরিচয় ঘটে। পবিত্রভূমি যাওয়ার পথে তারা দু’জনেই “কোয়েকার সিটি” নামের একই জাহাজে সহযাত্রী ছিলেন। এসময় ল্যাঙডন তার বোন অলিভিয়া ল্যাঙডন ক্লেমেন্সের একটি ছবি টোয়েইনকে দেখান। ছবি দেখে টোয়েইন অলিভিয়ার প্রেমে পড়ে যান। পরবর্তীতে টোয়েইন এ ঘটনাকে “প্রথম দর্শনেই প্রেম” হিসেবে অভিহিত করেন।
আমেরিকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১৮৬৮ সালে টোয়েইনকে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন সংঘ “স্ক্রুল এন্ড কী”তে সদস্যপদ গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সঙ্ঘের “বন্ধুত্ব, নৈতিক ও সাহিত্যিক আত্ম-উন্নয়ন, এবং সদয়তার” প্রতি নিষ্ঠা তাঁর সাথে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে গিয়েছিলো।
১৮৬৮সালের পুরোটা সময়জুড়ে টোয়েইন এবং অলিভিয়া একসাথে ছিলেন কিন্তু অলিভিয়া টোয়েইনের প্রথমবার করা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অবশ্য এর দুই মাস পর তারা পরস্পরের সম্মতিতে বাগদান করেন। অলিভিয়ার বাবা তাদের বিয়ের ব্যপারে প্রথমে গড়রাজি থাকলেও টোয়েইন একসময় তা’ দূর করতে সক্ষম হন এবং ১৮৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এলমিরা, নিউইয়র্কে অলিভিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অলিভিয়া ছিলেন ধনী এবং প্রগতিশীল পরিবারের মেয়ে। অলিভিয়ার মাধ্যমে সমাজের প্রগতিশীল শ্রেণীর নানা প্রথিতযশা সমাজকর্মী ও ব্যক্তিত্বের সাথে টোয়েইনের পরিচয় ঘটে। টোয়েইন দম্পতি ১৮৬৯ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত বাফেলো, নিউইয়র্কে বসবাস করেন। টোয়েইন “বাফেলো এক্সপ্রেস” পত্রিকার একাংশের স্বত্বাধিকারী ছিলেন এবং সেখানে তিনি সম্পাদক এবং লেখক হিসেবে দায়িত্ব ভার বহন করেছিলেন। বাফেলোতে থাকাকালীন সময়ে তাদের সন্তান ল্যাংডন মাত্র উনিশ মাস বয়সে ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। টোয়েইন দম্পতি তিন কন্যার জনক-জননী ছিলেন। সুসি ক্লেমেন্স(১৮৭২-১৮৯৬), ক্লারা ক্লেমেন্স(১৮৭৪-১৯৬২) এবং জীন ক্লেমেন্স(১৮৮০-১৯০৯)। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর একসাথে কাটানোর পর ১৯০৪ সালে অলিভিয়া মারা যান। ক্লেমেন্স পরিবারের সকল সদস্য এলমিরা, নিউইয়র্কের উডলন সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
টোয়েইন তার পরিবার নিয়ে হার্টফোর্ড, কানেক্টিকাটে চলে আসেন এবং ১৮৭৩ সালে সেখানে একটি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। (পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে টোয়েইনের স্থানীয় গুণগ্রাহীরা একে ভেঙে ফেলার হাত থেকে রক্ষা করেন এবং টোয়েন সংক্রান্ত বিষয়াদির জাদুঘরে পরিণত করে)। ১৮৭০ এবং ১৮৮০’র দশকে টোয়েইন এবং তার পরিবার অলিভিয়ার বোন, সুসান ক্রেনের বাসা “কোয়ারি ফার্ম”এ তাঁদের গ্রীষ্ম অতিবাহিত করেন। ১৮৭৪ সালে সুসান টোয়েইনের জন্য মূল বাড়ি থেকে আলাদা একটি অধ্যয়ন কক্ষ তৈরি করে দেন যাতে তার বোনজামাই নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে পারেন। টোয়েইন নিয়মিত পাইপ সহযোগে ধূমপান করতেন যেটি সুসানের পছন্দ ছিলো না। টোয়েইনকে আলাদা কক্ষ করে দেয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ ছিলো। হার্টফোর্ডে দীর্ঘ সতেরো বছর (১৮৭৪-১৮৯১) এবং “কোয়েরি ফার্ম”এ বিশটিরও বেশি গ্রীষ্ম অতিবাহিত করার সময়ে টোয়েইনের অনেকগুলো কালজয়ী সাহিত্যকর্ম রচিত হয় । এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হচ্ছে-
১). The Adventures of Tom Sawyer (১৮৭৬),
২). The Prince and the Pauper (১৮৮১),
৩). Life on the Mississippi (১৮৮৩),
৪). Adventures of Huckleberry Finn (১৮৮৫)
৫). A Connecticut Yankee in King Arthur’s Court (১৮৮৯).
‘অ্যাডভেঞ্চারস অফ হাকলবেরি ফিন’ উপন্যাস লেখার মাঝেই টোয়েন ইংল্যাণ্ডের শিশু-কিশোরদের উপযোগী একটি বুদ্ধির পাজ্ল বোর্ড গেম আবিষ্কার করেন, তৈরি করেন একটি স্ক্র্যাপ বুক ও একটি মোজা আটকানোর ফিতে। ১৮৮৫ সালে মার্ক টোয়েন নিজের একটি প্রকাশনা সংস্থা খোলেন।
টোয়েইন পরবর্তীকালে দ্বিতীয়বারের মত ইউরোপ ভ্রমণ করেন। ১৮৮০ সালে প্রকাশিত তাঁর বই “A Tramp Abroad” এ সে ভ্রমণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই ভ্রমণকালীন সময়ে তিনি ৬মে থেকে ২৩নভেম্বর,১৮৭৮ পর্যন্ত হাইডেলবার্গে অবস্থান করেন এবং লন্ডন শহরও ভ্রমণ করেছিলেন।
বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা টোয়েইনকে বরাবরই আকৃষ্ট করত। বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার সাথে টোয়েইনের অত্যন্ত নিকটবর্তী এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব ছিল। টেসলা’র গবেষণাগারে দু’জন একসাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন। টোয়েইন তিনটি মৌলিক আবিষ্কারের স্বত্বাধিকারী ছিলেন যাদের মধ্যে “কাপড়চোপড়ের জন্য মানানসই এবং বিচ্ছেদযোগ্য বন্ধনী” ( স্কন্ধবন্ধনী প্রতিস্থাপন করার জন্য) এবং “ট্রিভিয়া গেমের ইতিহাস” অন্তর্ভুক্ত। বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল ছিল তার আবিষ্কৃত একটি স্ব-লেপনযোগ্য স্ক্র্যাপবুক যেটার পৃষ্ঠাগুলোতে শুকনো আঠা যুক্ত থাকত যা শুধুমাত্র ব্যবহারের পূর্বে আর্দ্র করে নেয়ার প্রয়োজন হতো।
তাঁর বই A Connecticut Yankee in King Arthur’s Court এ তিনি সমসাময়িক আমেরিকান প্রেক্ষাপটে একটি সময় পরিভ্রমণকারী চরিত্রের অবতারণা করেছিলেন। চরিত্রটি নিজস্ব বিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডের কিং আর্থারের সাথে আধুনিক প্রযুক্তির পরিচয় করিয়ে দেন। পরবর্তীতে একই ধরণের কাল্পনিক চরিত্রের ব্যবহার একসময় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিগুলোতে অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
১৯০৯ সালে টমাস আলভা এডিসন টোয়েইনের সাথে তার রেডিং,কানেকটিকাট এর বাড়িতে দেখা করেন এবং টোয়েইনের গতিচিত্র(ভিডও) ধারণ করেন। সেই গতিচিত্রের কিছু অংশ ১৯০৯ সালে তৈরি হওয়া ‘The Prince and the Pauper চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল।
টোয়েইন তার লেখালেখি থেকে প্রচুর অর্থ আয় করেছিলেন। কিন্তু সে অর্থের একটি বড় অংশ তিনি নতুন আবিষ্কার এবং প্রযুক্তিতে, বিশেষ করে “পেইগ মুদ্রণসন্নিবেশকারী যন্ত্রের” ওপর বিনিয়োগ করার মাধ্যমে খুইয়েছিলেন। যন্ত্রটি ছিলো অতি নিপুণ প্রকৌশলের ফসল যার কাজ দর্শকদেরকে মুগ্ধ করতো, কিন্তু এটি ছিল ভঙ্গুরপ্রবণ। ১৮৮০ থেকে ১৮৯৪ সালের মধ্যে টোয়েইন এই যন্ত্রের পেছনে ৩,০০,০০০ ডলার ব্যয় করেছিলেন (যা ২০১২ সালের ডলার অনুযায়ী ($৮৯০০০০০ এর সমপরিমাণ) কিন্তু এটি পুরোপুরি উপয়ুক্ত হবার পূর্বেই লাইনোটাইপ যন্ত্রের কারণে অযোগ্য হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে টোয়েইন তার বই থেকে উপার্জিত অর্থ হারানোর পাশাপাশি তার স্ত্রী অলিভিয়ার সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য অংশও হারিয়ে ফেলেন।
টোয়েইন তার প্রকাশন সংস্থার কারণেও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ইউলিসিস এস গ্রান্টের স্মৃতিস্মারক বিক্রির মাধ্যমে লাভের মুখ দেখলেও তার ঠিক পরপরই ত্রয়োদশ পোপ লিও’র আত্মজীবনী বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানের সম্মুখীন হয়। বইটি সর্বসাকুল্যে দুইশো কপিরও কম বিক্রি হয়।
টোয়েইনের লেখা এবং বক্তৃতা, সাথে এক নতুন বন্ধুর নি:স্বার্থ সহযোগিতা, তাকে আবার আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিলো। ১৮৯৩ সালে হেনরি এইচ রজার্সের সাথে তার দীর্ঘ পনেরো বছরের বন্ধুতার সূচনা হয়। রজার্স প্রথমে টোয়েইনকে দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আবেদন করতে বলেন। অত:পর টোয়েইনের সকল লিখিতকর্মের স্বত্বাধিকারস টোয়েইনের স্ত্রী অলিভিয়ার কাছে হস্তান্তর করান যাতে টোয়েইনের পাওনাদাররা সেসবের দখল নিতে না পারে। সবশেষে যতদিন পর্যন্ত সকল পাওনাদার তাদের প্রাপ্য পাওনা বুঝে পাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত রজার্স টোয়েইনের সকল আর্থিক বিষয়াদির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। টোয়েইন রবার্ট এ্যরো স্মিথের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ একবছর মেয়াদের জন্য বিশ্বব্যাপী বক্তৃতা প্রদাণের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। এটি ১৯৮৫ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। তার পাওনাদারদের সকল পাওনা শোধ করার উদ্দেশ্যেই তার এই যাত্রার সূচনা, যদিও পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে তার ওপর আইনগতভাবে কোন বাধ্যবাধকতা ছিলোনা। এটি ছিলো একটি দীর্ঘ এবং পরিশ্রমসাধ্য যাত্রা যার অধিকাংশ সময় তিনি ঠান্ডার কারণে অসুস্থতায় ভুগেছেন। এ যাত্রার অংশ হিসেবে তিনি হাওয়াই, ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মৌরিতানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। টোয়েইনের ভারত ভ্রমণের তিনমাস তার ৭১২ পৃষ্ঠার বই Following the Equator এর মূল উপজীব্য ছিলো। ১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে “ডলস হিল হাউস”এর মালিক হিউ জিলিয়ান রিডের আমন্ত্রণে তিনি উত্তর লন্ডনে গমণ করেন। পাওনা শোধ করার মত যথেষ্ট অর্থ উপার্জনে শেষে ১৯০০ সালে টোয়েইন আমেরিকায় ফিরে আসেন।
নির্বাচিত রম্য বক্তা হিসেবে টোয়েইনের দারুণ নামডাক হয়েছিলো। তিনি নানা জায়গায় গিয়ে একক রম্য বক্তৃতা প্রদান করতেন যেটাকে বর্তমান সময়ের স্ট্যান্ডআপ কমেডির সাথে তুলনা করা যায়। তিনি পেশাদার বক্তা হিসেবে নানা পুরুষ সংঘে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছেন। এসব সংঘের মধ্যে অথরস’ ক্লাব, বীফস্টিক ক্লাব, ভ্যাগাবন্ডস, হোয়াইট ফ্রায়ারস এবং হ্যার্টফোর্ডের সোমবারের সান্ধ্যকালীন সংঘ উল্লেখযোগ্য। তাকে স্যান ফ্রান্সিসকো শহরের বোহেমিয়ান ক্লাবের সম্মানসূচক সদস্যপদ প্রদান করা হয়। ১৮৯০ সালের শেষভাগে টোয়েইন লন্ডনের স্যাভেজ ক্লাবে বক্তৃতা দেন এবং সে ক্লাবের নির্বাচিত সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। যখন তাঁকে জানানো হয় যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অফ ওয়েলস ষষ্ঠ এডওয়ার্ড সহ মাত্র তিনজনকে এখন পর্যন্ত এ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন – “এ খবর শুনে প্রিন্স নিশ্চয়ই খুব ভালো অনুভব করবেন।” ১৮৯৭সালে টোয়েইন ভিয়েনার কনকর্ডিয়া প্রেস ক্লাবে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা প্রদান করেন। জার্মান ভাষায় তিনি যখন তার ” Die Schrecken der deutschen Sprache” (“The Horrors of the German Language”) শীর্ষক বক্তৃতা শুরু করেন উপস্থিত শ্রোতাগণ তা’ শুনে মুগ্ধ হয়ে যান। ১৯০১ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের “সাইলোসোফিক সাহিত্য সংঘ”তে বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রিত হন। পরবর্তীতে তাকে উক্ত সংঘের সম্মানসূচক সদস্যও করে নেয়া হয়।
পরবর্তী জীবন এবং মৃত্যু
১৮৯৬ সালে টোয়েইনের মেয়ে সুসি মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সেসময় থেকে টোয়েইন তার ব্যক্তিগত জীবনে গভীর বিষণ্নতাবোধে আক্রান্ত হন। সেটা ছিলো কেবল শুরু মাত্র। তাঁর স্ত্রী অলিভিয়া মারা যান ১৯০৪ সালে, আরেক মেয়ে জীনকেও হারান তারও কয়েক বছর পরে, ১৯০৯সালে। এতগুলো কাছের মানুষের বিয়োগবেদনার সাক্ষী হয়ে টোয়েইনের বিষণ্নতা কেবল গভীরতর হয়। এখানেই শেষ নয়। ২০মে, ১৯০৯ সালে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিপদে পাশে দাঁড়ানো অকৃত্রিম বন্ধু রজার্সও হুট করে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯০৬ সালে টোয়েইন “নর্থ আমেরিকান রিভিউ”তে তাঁর আত্মজীবনী লেখা শুরু করেন। এপ্রিলে টোয়েইন খবর পান তাঁর বান্ধবী ইনা কুলবার্থ ১৯০৬ সালের স্যানফ্রান্সিসকো ভূমিকম্পে তার সহায় সম্পত্তির প্রায় সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছেন। বান্ধবীর এ দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে টোয়েইন তাঁর স্বাক্ষরসংবলিত কিছু পোট্রেইট ছবি বিক্রির জন্য তুলে দেন। কুলবার্থকে আরও বড় পরিসরে সাহায্য করার জন্য জর্জ হোয়ার্টন জেমস নিউইয়র্কে টোয়েইনের সাথে দেখা করেন এবং একটি নতুন পোট্রেইট সেশন করার ব্যবস্থা করেন। প্রথমে গড়িমসি করলেও টোয়েইন শেষমেষ স্বীকার করেন যে উক্ত ব্যবস্থাপনায় তোলা তাঁর চারটি পোট্রেইট ছবিই ছিলো তাঁর তোলা সকল ছবিগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
টোয়েইন যেসব ছোট ছোট মেয়েদেরকে নিজের নাতনি হিসেবে মনে করতেন তাদের জন্য ১৯০৬ সালে “দ্য এঞ্জেল ফিশ এন্ড এক্যুয়ারিয়াম ক্লাব” নামে একটি সংঘ তৈরি করেন। এ সংঘের এক ডজনের মত সদস্যদের সবার বয়সসীমা ছিলো দশ থেকে ষোল বছরের মধ্যে। টোয়েইন এসব ছোট ছোট “এঞ্জেল ফিশ”দের সাথে নিয়মিত চিঠি আদানপ্রদাণ করতেন এবং তাদেরকে কনসার্ট, থিয়েটার কিংবা খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। ১৯০৮ সালে টোয়েইন তাঁর লেখায় এ সংঘটিকে উল্লেখ করেন নিজের “জীবনের পরম আনন্দ” হিসেবে। ১৯০৭সালে টোয়েইন এগারো বছর বয়েসী ডরোথি কুইকের সাথে পরিচিত হন এবং তাদের এ বন্ধুত্ব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিলো।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০৭ সালে টোয়েইনকে সম্মানসূচকস ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।
মার্ক টোয়েইনের সমাধিস্তম্ভ উডলন সমাধি. ১৯০৯ সালে টোয়েইন মন্তব্য করেন।
“১৮৩৫ সালে হ্যালির ধূমকেতুর সাথেই আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম। আগামী বছর এটি আবার আসছে, এবং আমি আশা করি এর সাথেই আমি আবার চলে যাবো। হ্যালির ধূমকেতুর সাথে সাথেই যদি আমার প্রস্থাণ না ঘটে তাহলে এটি হবে আমার জীবনের সবচে বড় হতাশাপূর্ণ ঘটনা। কোন সন্দেহ নেই যে স্রষ্টা বলেছিলেন: ‘এই হলো দুই দায়িত্বজ্ঞানহীন উন্মাদ; এরা এসেছিলো একসাথে, এদের যেতেও হবে একসাথে”।
তার সেই ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিলো। টোয়েইন ২১শে এপ্রিল ১৯১০সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রীডিং,কানেকটিকাট শহরে মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ছিলো হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীর সাথে সবচেয়ে কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান করার ঠিক পরের দিন। টোয়েইনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফ্ট বলেছিলেন –
“মার্ক টোয়েইন অজস্র মানুষকে বুদ্ধিদীপ্ত আনন্দ দান করে গেছেন এবং তাঁর সৃষ্টিকর্ম অনাগত অসংখ্য মানুষকেও ভবিষ্যতে আনন্দ দান করে যেতে থাকবে.. তিনি আমেরিকানদের সূক্ষ রম্যতা দান করতেন, কিন্তু ইংরেজরা সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষজনও তাঁর নিজ দেশের মানুষের মতই তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন। তিনি আমেরিকান সাহিত্যের একটি চিরস্থায়ী অংশ” নিউইয়র্কের “ওল্ড ব্রীক” প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চে টোয়েইনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এলমিরা, নিউইয়র্ক শহরে তাদের পারিবারিক “উডলন সমাধি”তে টোয়েইনকে সমাহিত করা হয়। ল্যাঙডন পরিবারের যে জায়গাটিতে তিনি সমাহিত আছেন সেখানে ১২ফুট দৈর্ঘ্যের একটি স্তম্ভ স্থাপণ করেন তার জীবিত মেয়ে, ক্লারা। তার মাথার কাছে ছোট একটি সমাধিস্তম্ভও স্থাপন করা আছে। জীবদ্দশায় টোয়েইন চাইতেন যেন মৃত্যুর পর তাঁর দেহভস্ম করা হয়। (যেমন: “Life on the Mississipi” বইতে তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন।)। তবে তিনি এও জানিয়ে গিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।