বৈশাখী প্রেম
বাসর ঘরে ঢুকেই লোকটি বলল,
ঘোমটাটা সরাও তো মুখটা দেখি। চুপ করে রইলাম। কি হল শুনতে পাওনি? মুখ দেখে কি হবে?অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমান। কেন? বৈশাখ মাস, ভ্যাপসা গরম, ঘেমেনেয়ে গেছি। একটা এসিও লাগাতে পারেন নি। বলে ঠোঁট উলটালাম। ঘড়িটা তাকিয়ে দেখল কয়টা বাজে। আমার এমন কথায় বিচলিত হয়েছে বুঝলাম। আস্তে করে বললাম শুনুন , আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই ছিল না।
তবে কি অন্য কোথাও? না না সেরকম কিছু না। কারো সাথে কোন স’ম্পর্ক নেই। আমি বিয়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। এখন ঘুমান কাল বাকি কথা হবে।বলেই আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আমার কথাটা শুনে বিব্রত হয়ে হেসে বালিশ নিয়ে শোফায় শুয়ে পড়ল। কিছু পরে বলল বিয়ে করার ইচ্ছে নেই, আগে জানালেই পারতে। তাতে কি হতো? বিয়ে ভেঙে দিতাম। অতো সহজ নাকি?
বলে তো আমি খাটে চোখবন্ধ করে শুয়ে আছি। এদিকে গুমোট আবহাওয়া ।কিছুতেই ঘুম আসছিল না। হঠাৎ শুরু হলো কালবৈশাখী, সঙ্গে শিলাবৃষ্টি আর মেঘের গর্জন। ঝড় বৃষ্টিতে কারেন্টটাও চলে গেল। জানলা খুলে দেখি নীচে উঠোনটা শিলে ভরে গেছে।আমি দরজা খুলে ছুটে নীচে নামতে গেলাম আর তখনই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। নীচে আর নামা হলো না। বৃষ্টিতে যেন স্বস্তি পেলাম। কখন যে তার বুকের মধ্যে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। পরের দিন ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলল টেবিলে চা রেখে গেলাম।
চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে ফোন ঘাঁটছি দেখে বললো…..—-
বৈশাখী খাবার নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে আর তুমি ঘরে বসে আছ? নিচে চলো। বলেই কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো…খাবারটা কি রুমে নিয়ে আসবো?আমি তো হার্ট এ্যাটাক হতে হতে বেচেঁ গেছি। বললাম এনে দিলে ভালোই হয়। তবে কি লোকটা আমার প্রেমে পড়ে গেল? দেখলাম লোকটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে । যেন চোখ আঁটকে গেছে। এইবার যেন সত্যি আমিও লোকটার প্রেমে পড়ে গেলাম। হঠাৎ পড়ে গেল পড়ে গেল শব্দে নীচে হৈচৈ । সামনে সিড়িতে গিয়ে দেখি খাবারের প্লেটটা সিড়িতে আর লোকটা পরে গেছে খাবারগুলো গড়াচ্ছে । বুঝতে পারলাম, খুবই ব্যথা পেয়েছে। দৌড়ে কাছে গেলাম আর অমনি বাড়ি সবাই সরে গেল। আস্তে করে বলল….কেমন দিলাম ?? আমি তো একটু ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে গেলাম। সে বলল….আমি পরে আছি কোথায় কোলে করে বিছানায় শোয়াবে তা না করে আমার হাত ধরে টানছ? বলেই আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল….ইচ্ছে করে এইভাবে ই ধরে রাখি সারাটা জীবন। কিন্তু আমি তাকে আর অপছন্দ করতে পারলাম না। আমারও বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল। খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল তখন, পাগলী তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে গো। কপালে একটা চুমো একেঁ দিতে গেলাম কিন্তু পারলাম না। কোথায় জানি একটা বাধা পাচ্ছিলাম। নিজেই উঠে দৌড়ে পালালো। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম । খেয়াল হল, ও কি তবে ব্যথা পায়নি? কারণটা বুঝতে আর বাকি রইলো না, এইবারও আমাকে বোকা বানিয়েছে। লোকটার সাথে খুনসুটি প্রেম করতে করতেই কেটে গেল বছর। আমি এখন গর্ভবতী। খুব যত্ন নেই আমার। লোকটা অফিসে ছিল ,একদিকে মুশলধারায় বৃষ্টি আর আমার প্রসব বেদনা। ফোন পেয়ে ফিরে হসপিটাল নিয়ে গেল। কোল আলো করে এলো এক ছোট্ট রাজকন্যা। আমিও সেদিন মরার মতো মটকা মেরে পড়েছিলাম। আমার কোনো সাড়া না পেয়ে ভয়ে আৎকে উঠল। নিঃশ্বাস পড়ছে কি, না দেখেই আমাকে জড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো। সাথে সাথেই আমি আস্তে করে তার কানে কামড় দিয়ে বললাম….কি ভাবছিলে তোমাকে একা রেখে চলে যাবো?