জাতিস্মর
-তোমার নাম কী খোকা?
-এ জন্মের নাম বলব, না আগের জন্মের নাম?
-গত জন্মের বাড়ির কথা মনে পড়ে?
-হ্যাঁ, মনে পড়ে। হাঠোরি গ্রামে ছোট্ট একটি দুর্গ। তার ভেতর কিছু বাড়ি। সেই বাড়িগুলির পাশে ছিল আমাদের হাভেলি। প্প্রশ্ন করছিলেন রাজস্থানের ভরতপুরের মহারাজা কিষণ সিংহ। উত্তর দিচ্ছিল প্রভু। হাভেলির সামনে মাটিতে পূর্বজন্মে পুঁতে রাখা পাঁচটি পুরনো মুদ্রার কথা প্রভুই বলেছিল মহারাজাকে। মাটি খুঁড়ে সেই মুদ্রাগুলি উদ্ধারও করেছিল। প্রভু ছিল জাতিস্মর। জাতিস্মর তারা যারা পূর্বজন্মের কথা নিখুঁত ভাবে বলতে পারে। সাত বছর বয়স পর্যন্ত পূর্বজন্মের কথা এদের মনে থাকে।
রাজস্থানের প্রভুই সোনার কেল্লার ‘মুকুল’। হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিস্মর বালক প্রভুকে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাঁর উৎসাহেই কলকাতার লালমোহন ভট্টাচার্য রোডে ষাটের দশকে তৈরি হয় প্যারাসাইকোলজি সোসাইটি। যার আজীবন সদস্য ছিলেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ উপন্যাসে, মুকুল নামের আড়ালে প্রভু নামের সেই রাজস্থানি ছেলেটি। আর হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছিলেন ডক্টর হেমাঙ্গ হাজরা। দু’জনে পাড়ি দেন রাজস্থানে। মুকুলের গতজন্মের সন্ধানে। শুরু হয়ে গিয়েছিল জমজমাট ‘সোনার কেল্লা’ রহস্য। ইজরায়েল অধিকৃত গোলান হাইটস লাগোয়া, সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলের গ্রামের দিকে এগিয়ে চলেছিলেন ডঃ এলি ল্যাসচ। সঙ্গে তাঁর গবেষক দলের সদস্যরা। ডঃ ল্যাসচের হাত ধরে আছে তিন বছরের ছোট্ট একটি শিশু। তাঁদের পিছনে চলেছেন গ্রামের বহু লোক। শিশুটির বাড়ি গোলান হাইটসে। ড্রুজ (Druze) আদিবাসী সমাজের শিশুটি গতজন্মে সিরিয়ার গ্রামে জন্মেছিল। গতজন্মে প্রতিবেশী তার মাথায় কুঠারাঘাত করে মেরেছিল। পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ড্রুজেরাও হতবাক শিশুটির কথায়। তারা খুনের তত্ত্বে বিশ্বাসী কারণ, শিশুপুত্রটির মাথায় জন্মদাগ আগের জন্মের প্রতীক এবং দাগটি পূর্বজন্মে মাথায় আঘাত লাগার সংকেত। পূর্বজন্মের খুনিকে চিনিয়ে দিয়েছিল তিন বছরের জাতিস্মর শিশু! জাতিস্মর ও জন্মান্তরবাদ ব্যাপারটার মধ্যে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।