Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সংক্রামিত || Suchandra Bose

সংক্রামিত || Suchandra Bose

সংক্রামিত

প্রীতি বললে আচ্ছা তোমার মনে পড়ে অমর, সেই সেদিনের কথা? দুটো সিনেমার টিকিট কেটে এনেছিলে কোনকিছু না ভেবেই। এসেই আমাকে বললে, কলেজ ছুটি হয়ে গেল তাই ভাবলাম সিনেমায় যাই। আমি বললাম বন্ধুদের সাথেই যেতে পারতে। কথাটা শুনে আমার মুখের দিকে তুমি কেমন অপরাধীর ভঙ্গিতে তাকালে। আমার মনটা নরম হয়ে গেল। বললে, চারটে সাতটার শো। সৌমিত্র আর শতাব্দী আছে, এ তো কোন খারাপ ছবি নয়। তা নয় ঠিক আছে কিন্ত তোমার সাথে আমি একা যাব কি করে? কেন, যেতে পার না? ঘরে তুমি তো একাই আমার কাছে পড় ঘন্টা দু’য়েক। তখন কেউ তো আপত্তি করে না। সবাই জানে তুমি ভাল স্কলার। তাই তোমার কাছে আমার বিজ্ঞান চর্চার জন্য তোমাকে রেখেছে। তাতে কি? না হয় একদিন পাশে বসে দুজনে সিনেমা দেখলাম। তাতে, লোকের সন্দেহ বাড়ে। লোকে ভাববে আমরা আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। বাহঃ, কি ধারণা। ঘরে যে অতক্ষণ থাক তখন ঘনিষ্ঠ হতে পারি না? যাক আমি হলের দিকে এগোলাম। তুমি বাড়িতে কিছু একটা বলে বেরোও। এই বলে তুমি চলে গেলে।বললে হলের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকবে। বেশ মনে আছে সেই আনন্দময় মূহুর্তের কথা। তার সঙ্গে চোখেমুখে ভয়।কি বলে বের হব বাড়ি থেকে। বন্ধুদের বাড়ি যাওয়ারও অনুমতি ছিল না। বন্ধু শুভ্রা না এলে হয়তো সিনেমায় যাওয়াই হতো না। শুভ্রাই তো ওর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করল। আমিও তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বন্ধু চলে গেল তার বাড়ি আর আমিও হলের দিকে এগোলাম। দেখলাম তুমি বাসস্টপেই দাঁড়িয়ে আছ। আমাকে দেখেই বললে, তাহলে বাড়ি থেকে বেরতে পারলে? হ্যাঁ গো হাঁদারাম। দূত এসে আমার এই উপকারটুকু করে গেল। উপকার মানে, আমার বন্ধু না এলে বেরতেই পারতাম না। বললে,বেশ ওকে একদিন খাওয়াতে হবে। চলো এখন ভেতরে গিয়ে দেখি কিসের আতঙ্ক। ঢুকেই দেখলাম একটা খুন। কয়েক জন ছেলে ছুটে পালাচ্ছে। আর বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে দেখছে ওদেরই মাস্টারমশাই। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। নিজের প্রাণের ভয়ে কোন প্রতিবাদই করতে পারলেন না। মুখটা তার কাঁচুমাচু।তাই দেখে একজন বলে উঠল, মাস্টার মশাই আপনি কিছুই দেখেননি। মনে থাকে যেন। প্রতি মূহুর্তে ওই একই কথা কানে বাজছে। খাওয়া ঘুম সব হারালেন ওই বৃদ্ধ মাস্টার মশাই। ওই দৃশ্য দেখে আমি শিউরে উঠি। হাত ঠাণ্ডা হয়ে আসে। অতর্কিতে তোমার হাতটা নিজের হাতে নিলাম আর অনুভব করলাম বিদ্যুৎ চমক। সঙ্গে সঙ্গে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম। কিন্ত তুমি চেপে ধরে রাখলে। সেই প্রথম অনুভূতি আজও ভুলতে পারি না। বেশ খুশি খুশি মনে বাড়ি ফিরতেই সদরে পা দিয়েই শুনতে পেলাম ভয়ঙ্কর গর্জন। তোমায় যদি শোনাতে পারতাম আরও খুশি হতাম। বোধ হয় নিজের নামটাই ভুলে যেতে। দুঃখ হয় ফোন ছিল শুধু মুঠোয় ছিল না। যা হোক আমি ঘরে ঢুকতে যাব ওমনি হুঙ্কারে বলে উঠল কোথায় গিয়েছিলে ওই ছোকরার সাথে ? আমি একেবারে হাঁ। বাবা কি করে জানল। আর বাবা তো রাত ন’টার আগে বাড়ি ফেরে না কোন দিন। দুর্ভাগ্য একেই বলে। আমিও বাড়ির বাইরে আর বাবাও ফিরল ঘরে তাড়াতাড়ি। বাবার মনে আতঙ্ক অমর ভাইরাসে। তাই বাবা জারি করে দিলেন লকডাউন। বিশ্ব লকডাউন মনে করিয়ে দিল আমিও ছিলাম বাবার নির্দেশ মত কোয়ারেন্টাইনে। কিন্তু সেই অমর ভাইরাসে তো আমি আক্রান্ত অনেকদিন আগেই হয়ে গেছি সে তো আমার হৃদয় জুড়ে। ভাইরাসের প্রকোপ যাতে আর না বাড়ে তার জন্যই তো লকডাউন জারি করা। আগে থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে অনেকখানি। আমাকে ভাইরাস মুক্ত করতে হলে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে হয়। কিন্ত সে তো অসম্ভব। বিশ্ব হয়তো করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে কিন্তু অমর ভাইরাসের অস্তিত্ব আমার হৃদয় জুড়ে আজও। দিনগুলো তখন বকাঝকা নানাবাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে কী ভীষণ মধুর ছিল দিন গুলো। আমাকেই তো বেরতে হত আবহাওয়ার গতি দেখে। ভাবতাম শক্ত আবরণ খুঁটে পাখিও তো পারে খেতে। তবে আমি কেন পারবো না তোমার কাছে যেতে? আমি যেন ছিলাম তোমার মরশুমি ফুল। প্রেমরস ঢেলে তনু মন হিয়া ভরে পুলকিত হতাম আনন্দে। তুমি বলতে রাতভর খুঁজি আমি তোমায়। তুমিই আছ আমার হিয়ার অতলে। তুমি এক, রঙ অনেক–আর লুকিয়ে নয় প্রিয়া। তুমি যে আমার একমাত্র প্রেম তোমায় বাদ দিয়ে অপূর্ণ আমার হিয়া। এসো তুমি আমি হই বসন্ত মুখী, এসো বাধা বিঘ্ন ছাড়িয়ে, একে অন‍্যে যাই মিলে, মনে মনে হই সুখী।মাখাব রঙ যে তোমায় রঙমনে জাগাব প্রাণে রঙিন ভালবাসা, তোমার সাথে কাটাব বসন্ত, তোমায় ছোঁব মনের আশা। আমার মন নিলে তুমি কেড়ে তাই বুঝি বসেছিলাম প্রতীক্ষায়, তোমায় মনে ধরি করেছিলাম প্রতিজ্ঞা। যাব না আমি হেরে। প্রেমের আঙিনায় তুমি আমি পড়েছিলাম বাঁধা। সেই তখন থেকেই তো কন্টকময় পথে বিচরণ করা সেই হাত ধরেই। সেই হাত আজও ধরে আছি আরও দৃঢ় ভাবে, কেউ আর বাধা দেওয়ার নেই এখন। প্রীতি অমর ভাইরাসে সংক্রামিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *