ঠিকানা
কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে যাব খুব বায়না করেছিল মেয়েটা। থাকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে। মাধ্যমিকে সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। প্রচুর পড়াশোনা করে। বাবাকে জানালো, বাবা একটা টেস্ট পেপার দরকার তুমি আমাকে কলেজ স্ট্রিটে নিয়ে যেও আমি কিনে নেব। বাবা রিক্সা চালায়। মেয়েকে সময় দেওয়ার মতো অবকাশ নেই। মা পরের বাড়ির বাসন মাজে। ছোট ভাইটা একেবারে ছোট। এত ব্যস্ততার মাঝে কিভাবে ওকে নিয়ে যাবে। গরীব হলেও অদের বাড়িটা ছিল সুখের নীড়। একটা শৃংখলাবদ্ধ জীবনে প্রত্যেকে হাসিমুখে বেঁচে থাকতো। সেদিন মেয়েটা বাবাকে বায়না করলে বাবা পাশের বাড়ির কাকুকে জানালো মেয়েটাকে একটু কলেজস্ট্রিট নিয়ে যেতে হবে। ওর কি যেন একটা বইয়ের দরকার। কাকু পরদিন টুম্পাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজস্ট্রিট এসেছিল। কয়েকটা দোকান ঘুরে টেস্ট পেপার এবং আরো কয়েকটা বই খাতা কিনেছিল। কাকুর সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে যায় এক পরিচিত আত্মীয়ের। দুজনের কথোপকথনে কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হল। টুম্পার মুখ শুকিয়ে গেছে খিদে তে। কাকু বলল কিরে চল কিছু খেয়ে নিবি। আত্মীয়টি জানালো সামনে ওর চেনাজানা দোকান আছে। ওদের একটা ঘর আছে। ওইখানে বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে খেয়ে নিতে পারে। ওরা তাই করল। টুম্পার জন্য খাবার এনে দিয়ে কাকু ওই আত্মীয়র সঙ্গে বেরিয়ে গেল, কিছু খাওয়ার জন্য। ঘরে মেয়েটি একা। উৎকণ্ঠা রয়েছে কাকু এখনো ফিরল না কেন। কে একজন ওকে একটা কোলড্রিংকস দিয়ে বলল এটা তোমার কাকু পাঠিয়েছে খেয়ে নাও। ওটা খাওয়ার পর ওর মাথাটা ঝিম হয়ে আসছিল। কখন জ্ঞান হারিয়েছে জানে না। এরপর যখন জ্ঞান ফিরল জীবনের সমস্ত কিছু হারিয়ে ফেলেছে। দুজন অপরিচিত ছেলে তাকে নিয়ে নোংরা খেলায় মত্ত। টুম্পার সুন্দর দেহটা আজ ক্ষতবিক্ষত। কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। কাকুকে খুঁজে পায়নি। কাকুকে সরিয়ে দিয়েছিল ওরা কোনো মদের ঠেকে। টুম্পা ওদের হাত থেকে বেরিয়ে মেট্রোয় নিজের প্রাণ বলি দিল। এভাবে কত টুম্পা ঝরে পড়ছে। কেউ কেউ মাসিদের হাতে চলে যাচ্ছে। নিজেদের বাড়ির ঠিকানা বদলে নতুন ঠিকানায় নিজেকে মানিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।