দাদুর চোখে আমি
দাদু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অনেক লড়াই করে জেলেও গেছেন। মেদিনীপুর তখন বিপ্লবীদের ঘাঁটি। শরদিন্দু শেখর চৌধুরী – যেমন তার নাম, সে রকমই গাম্ভীর্য। পড়াশোনায় প্রবল জ্ঞান। আধুনিক ছেলে মেয়েরা নিঃসন্দেহে তার কাছে পরাজিত হত। বাংলা ভাষায় অপূর্ব চিঠি লিখতেন। ইংরেজি ভাষাতে ও ছিল অসামান্য দখল। আমার যখন বিয়ে হয়, দাদু তখন অনেকটাই বৃদ্ধ। নাতবৌটাকে খুব ভালোবাসতেন। দেশের বাড়ি গেলে আসতে দিতে চাইতেন না। কত গল্প বলতেন সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প। আমি বিভোর হয়ে শুনতাম। বয়সের সাথে সাথে দাদু অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুদিন দুর্গাপুরে আসেন। আমিও তখন দুর্গাপুরে ছিলাম সন্তানসম্ভবা হয়ে। যখন আমরা ছোট থাকি বড়দের কথা মেনে চলি। যখন বড় হয়ে যাই বয়স্কদের শাসন করি। ওষুধ খাওয়া নিয়ে দাদুকে খুব বকা দিতে হতো। প্রায় শাসন করে ওষুধ খাওয়াতে হতো। দাদু খুব হাসতো। বলতো লাঠির চেয়ে কঞ্চি দড়। কারণ বাড়িতে সকলের ছোট আমি। দাদু কে বলতাম। কিন্তু তাকে সুস্থ রাখতে গেলে জোর করে ওষুধ খাওয়াতে হবে। যাই হোক খুব মিষ্টি সম্পর্ক ছিল আমাদের। কত ইংরেজি শব্দ শিখেছি দাদুর কাছে বসে । এত সুন্দর তার ডাক ছিল এত আদর হয়তো কেউ করেননি। একজন প্রতিভাবান স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষের পাশে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।