বিসর্জন
বিজয় দশমীর ঢাক বাজছে। পাড়ার বাচ্চারা তালে তালে নেচে চলেছে। সারা পাড়া আজ মুখরিত। বিষাদের সুর রয়েছে মানুষের মনে। সিঁদুর খেলা চলছে একদিকে। একে অপরকে সিঁদুর দেওয়ার পরম্পরা বর্তমান। দীপ খুব সুন্দর নাচে। আজও নাচছে, ঘেমে স্লান হয়ে গেলেও বন্ধুরা সব নেচে চলেছে। কয়েকটা ঠাকুর আমাদের ঘাটে বিসর্জন হয়। সবুজ সংঘ আর ফায়ার ব্রিগেড। ঘোষপাড়ার ঠাকুর বহু পুরাতন। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো। বাঁশের মাচা করে পাড়ার ছেলেরা কাঁধে করে নিয়ে ঘোরাতে। প্রচুর ছেলে ওইভাবে নিয়ে আসতো। সবুজ সংঘের ঠাকুর বেরিয়েছে। আরেকটু পরে ব্যান্ড এবং বাঁশির সহযোগে ঠাকুর নিরঞ্জনের পথে এগিয়ে যাবে। আমাদের ঠাকুর সোজাসুজি গঙ্গায় ফেলা হয়। বিসর্জনের দিন গঙ্গার ঘাটে বসে অনেক ঠাকুর আমরা বিসর্জন দেখতাম। কালিতলার ঠাকুর নৌকোয় গঙ্গায় বিসর্জন হয়। সেদিন আমরা অপেক্ষা করছি গঙ্গার ঘাটে ঠাকুর বিসর্জন দেখতে যাব। হঠাৎ শুনলাম, লালটু মারা গেছে। আমাদের পাড়ার ছেলে, আমাদের বন্ধু। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ছিল। হঠাৎ সারা পাড়া নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মায়ের আর্তনাদ শুধু কানে এসে পৌঁছালো। মা দুর্গা বোধহয় সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। কি প্রবল মায়ের আর্তনাদ, সমস্ত আকাশ বাতাস অতিক্রম করে স্বর্গে সেই আর্তনাদ পৌঁছেছিল। ঠাকুর বিসর্জন করার ইচ্ছা করছিল না। সকলে শোকে স্তব্ধ। ওর মুখ ওর কথাগুলো সকলের মনে দাগ কাটছিল। সেদিন দেখেছিলাম ভয়ঙ্কর বিসর্জন। একই সময় মা তার সন্তানকে নিয়ে চলেছে। গঙ্গার ওপারে আকাশের মধ্যে সব কিছু বিলীন হয়ে গিয়েছিল।