স্কুলের স্পোর্টস
কয়েকদিন আগে থেকেই শীতের আমেজে স্কুলের স্পোর্টসের দিন নির্ধারিত হতো। নতুন ক্লাস, মেয়েদের স্কুলে সরস্বতী পুজো ও স্পোর্টসের দিনগুলো অতিক্রম না হলে সেভাবে পড়া শুরু হতো না। ফাঁকি দেওয়াতে খুব আনন্দ আছে। সারাদিন ক্লাসের বাইরে ছুটোছুটি করত নানান অজুহাতে। তারমধ্যে টয়লেটে যাওয়া প্রাধান্য পেত। শম্পাদিকে স্কুলের রাউন্ডে একটু হুমকার দিতে হতো। নইলে আমরা সবাই রাজা হত। স্টাফ রুমে বসে দিদিমনিরা এসবের আনন্দ উপভোগ করত, অথচ বাইরে বেরিয়ে শাসন করা ছাড়া উপায় থাকতো না। বৈশাখী দিকে ওরা খুব ভয় পেত, কিন্তু বৈশাখী দি ওদের কাছে খুব ভালো দিদি ছিল। যাইহোক, স্পোর্টসের কয়েকদিন আগে স্পোর্টস টিচার ঝর্নাদি সবাইকে নিয়ে সুখচর শিশু উদ্যান মাঠে চলে আসতেন। শৃংখলা রক্ষার জন্য আরও কয়েকজন দিতে আসতেন। ওদের প্র্যাকটিস করানো হতো। বস্তা রেস আর হাঁড়ি রেসে বারবার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তার মধ্যে আবার ওরা ছুটছে। মহাপুরুষদের নামে কয়েকটি গ্রুপে সবাইকে ভাগ করে দেওয়া হতো। প্রত্যেক গ্রুপে একজন করে ক্যাপ্টেন থাকতো। সে তাদের পরিচালনা করতো। নায়কত্ব পেয়ে তারা কঠোরভাবে শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করত। মাঝেমধ্যে নালিশ চলত। পরের দিন সকালে স্পোর্টস। আয়রন করা ড্রেসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় লাইনে দাঁড়াত সবাই। স্কুলের কাছাকাছি থাকায় আমাদের কয়েকজন কে সকালে আসতে হতো। মার্চপাস্ট, ব্যান্ড বাঁশি সহযোগে পতাকা উত্তোলন হতো, শপথ গ্রহণ। এই শপথগ্রহণের কাজটা করতো বেশি টাই বুলু অর্থাৎ অনিতা। পরের দিকে বুলু করত। বড়দির বক্তব্য শোনার পর ওরা মাঠময় ছুটোছুটি করত। শুরু হতো সমস্ত প্রতিযোগিতার প্রথম পর্বের কাজ। দুই প্রান্তে ভলান্টিয়াররা থাকতো। সেদিন ছিল ভলান্টিয়ারদের আনন্দের দিন। ঝর্নাদি ফাইল নিয়ে ছুটোছুটি করতেন। শিশু উদ্যান এর কর্মকর্তারা নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। ভাস্করদা অনেকটা দায়িত্ব নিতেন। প্রথম পর্বে কিছু হতে না পারা মেয়েগুলোর মুখ শুকিয়ে যেত। যেন ওদের ভবিষ্যৎ এখানে স্তব্ধ। কখনো কখনো রাগ অভিমান চলত। এরমধ্যে বড়দের চা-বিস্কুট এসে যেত। ছোটদের জন্য লজেন্স। বেলা গড়িয়ে যেত। দিদিমণিদের মাথায় সাদা টুপি। লাল পাড় সাদা শাড়িতে বড় ব্যাচ পরানো। তাদেরও চলছে ছুটো ছুটি। দুপুরের লাঞ্চের সময় হয়ে যেত। সবাই তখন স্কুল মুখী। ওদের জন্য রাখা থাকতো পাউরুটি -কলা- ডিম আলুর দম -মিষ্টি। ওরা ছোটাছুটি করে খাবারগুলো খেত। তারপর বিশ্বনাথ দার চানা আর আচারের গাড়ি। স্টাফ রুমে তখন টিচারদের হাত ধোয়ার পালা। তাদের খাদ্য তালিকা ছিল একই। পুরনো সব টিচারদের নিমন্ত্রণ করা হতো। অনেকে আসতেন। তাই সকলকে নিয়ে একসাথে টেবিলে বসে খাওয়ার আনন্দটাই অনেক ছিল। কত গল্প, দমফাটা হাসি স্টাফ রুম টাকে ঘিরে থাকতো। সকলের মধ্যে একটা সুন্দর বন্ধন ছিল। আজও ছোটরা বড়দের সম্মান করে। এটা এই স্কুলের বড় বৈশিষ্ট্য । আবার ফিরে আসা হতো মাঠে। দ্বিতীয় পর্যায়ের খেলা শুরু হতো। চূড়ান্ত ফলাফল এর লিস্ট রাখা হতো। পুরনো ছাত্রীদের নিয়ে চেয়ার খেলা হতো। পরে টিচারদের জন্য থাকতো পাসিং দা ক্যাপ। শেষ সময় উত্তেজনায় মাঠ ফেটে পড়ত। পছন্দের দিদিদের জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠতো। তারপর পুরস্কার বিতরণ হত। অবশ্য তার আগে বহুরূপী সাজ ছিল। কত কি ওরা সাজত। চিনতে পারতাম না। শীতের বেলা শেষ হতো। মাঠের লাইট জ্বলে উঠত। সকলের ফেরার তাড়া। একে একে তাদের ছাড়া হত। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকজন টিচার অনেক রাতে বাড়ি ফিরতেন। প্রথমে ক্ষমা দি, পরে তার মেয়ে, আরো পরে সুস্মিতা ,অনিল দা দিদিদের ছায়াসঙ্গী ছিল। যদিও পর দিনটা ছুটি ঘোষিত হত। শিশু উদ্যান মাঠ আবার এক বছরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকতো। শুধু কিছু পোঁতা বাঁশ মন খারাপের দিন নিয়ে আসতো। আবার একটা বছর। তোমরা এসো সবাই আমার কাছে। অপেক্ষায় থাকবো আমি। প্রিয় শিশু উদ্যান মাঠ আর সুখচর শতদল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিদায় জানাতো সকলকে।