ক্ষণস্থায়ী জীবন
কয়েকদিন হলো মিঃ চ্যাটার্জি কে ফোনে পাচ্ছিলাম না। এরপর বেশ কয়েকদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। মিঃ চ্যাটার্জি খুব সুন্দর গান গাইতেন। খালি গলায়। মাঝেমধ্যে একটা-দুটো গাইতে গাইতে কটা যে গান গাইতেন তার মনে থাকত না। আমিও বেশ আনন্দে শুনতাম। যদিও তিনি বহু দিনের পুরাতন একজন রাজনীতিবিদ। রাজনীতি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। নানা তর্ক-বিতর্ক যুক্তিতে তিনি এগিয়ে যেতেন। তবে একেবারে সৎ। এক ছেলে বউ নিয়ে একেবারে সাদামাটা জীবন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে জল উঠে যেত। খাটের ওপরে বসে রান্না হতো। সে ছবি মাঝেমধ্যে ফোনে পোস্ট করতেন। দেখে কষ্ট লাগতো বৈকি। তবে সুখের জীবন। স্ত্রী ভীষণ ভালো মানুষ। এই সেদিনও ছেলের জন্মদিনের ছবি পোস্ট করেছিলেন। বাবা পাশে বসে ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন। কত রকম পদ। মাঝে মাঝে আমি রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলতাম। উনি আমাকে খুব সম্মান করতেন। ভোরবেলা হোয়াটসঅ্যাপ খুললেই ওনার গুড মর্নিং ভাসত। মাঝে মাঝে খুব ভালো ভালো খাবার পোস্ট করতেন। একদিন হয়েছে কি, লুচি তরকারি মিষ্টি একটা প্লেটে সাজিয়ে ছবিটা আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি লিখলাম শুধু ভালো ভালো খাবারের ছবি দেখান খাওয়াতে পারেন না। তিনি হাসির রিয়াক্ট দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হল আজকে আমি ওরকম লুচি তরকারি খাব। আমিও তৈরি করে ওনাকে ছবি পাঠালাম। এরকম একটা বন্ধুর সম্পর্ক। উনি লিখলেনজানতাম দিদি আপনি আজকে এ রান্নাটা করে খাবেন। বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ মনে হল ওনার সাথে কথা বলা হয়নি। আজকে একবার ফোন করবো। সেদিন ছিল ১ লা সেপ্টেম্বর। ভোরবেলা শুভ সকাল এসে পৌঁছেছে। আমার উত্তর দিতে দেরি হয়েছিল। তাই দু তারিখ সকালে ফোন করলাম। ও প্রান্ত থেকে হ্যাঁ বলুন দিদি কেমন আছেন।- আমি ভালো আছি আপনি কেমন আছেন দাদা।
– দিদি আমি হসপিটালে ভর্তি আছি কালকে শরীরটা একটু খারাপ ছিল।
– সে কি একবারও তো বলেননি। এভাবে কয়েকটা কথোপকথনের পর আমাকে বললেন এক্ষুনি কার্ডিওলজিস্ট আসবেন আমার সব টেস্ট হবে।আমি ওনাকে সহজ করার জন্য হাসতে হাসতে বললাম দাদা এত সহজে তো ভেঙে পড়ার মানুষ নয়। ঠিক হয়ে যাবেন উঠে পড়ুন। একেবারে চাঙ্গা হয়ে যান আমার দাদাএই বলে আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে হাসতে থাকলাম।
– উনিও বললেন হ্যাঁ দিদি কয়েকটা দিন সময় দিন আবার আগের মত হয়ে যাব। হঠাৎ করে ফোনটা কেটে গেল। ভাবলাম ডাক্তার বাবু এসে গেছে তাই কেটে দিয়েছেন কিছুক্ষণ পর বা কয়েকদিন বাদে আবার ফোন পাব। সেদিন মনটা খুব খারাপ ছিল। হঠাৎ ৩ তারিখে ফেসবুকে ভেসে উঠলো সকলের প্রিয় গোপাল দা আর নেই। একেবারেই মেনে নিতে পারছিলাম না। যে মানুষটার সাথে এতক্ষণ কথা হলো এর মধ্যে এটা কি করে সম্ভব। বিধাতার বিচার আমাদের মেনে নিতে হয়। কখন দুচোখ আমার জলে ভরে গেছে। এত ক্ষণস্থায়ী জীবন। স্ত্রীর পুত্র সব পড়ে রইল দাদা চলে গেলেন। বড্ড কষ্ট হয় যখন মনে পড়ে শেষ কথাগুলো। এ প্রান্ত থেকে আমি হাসছিলাম ওনাকে সহজ করার জন্য। ঈশ্বর ওই সময়টুকু ওনার জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমাদের কত সুখ দুঃখ সংগ্রাম করে নিতে হয়। এভাবে একে একে হয়তো সকলে বিদায় নেব।