চেনা ছবি
ও….ও… দাদা একটু,উ
– হাত দেখিয়ে ট্রেনের গার্ড কে থামতে বললেন জনৈক ভদ্রলোক।
– ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন ছোট বড়ো কয়েকজন।
– স্টেশন গুলো দীর্ঘ হওয়ায় ট্রেন থামে অনেকটা দূরে।
– একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে ওঠানামা। অফিস টাইম বলে কথা।
– যত দিন আনা কাজের মানুষ সকলে স্টেশন চত্বরে ভিড় করেন।অন্য সময় দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন শুনসান।বেলা বারোটার সময় ভাবি জনমানবশূন্য কেন?
– সবাই কাজে ব্যস্ত।
– ও দাদা আজ যাবেন না?- বলল পথচারী, সঙ্গে সঙ্গে হুশ করে এলো দু’নম্বরে ট্রেন। বনগাঁ র উদ্দেশ্যে রওনা।
– চেনা দুটো ডগি আদর সঙ্গে খাবারের জন্য কয়েকজনের পা ঘেঁষে দাঁড়াল। বেশ বড়ো লোম ডগিটার।আরেকটি পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কা খেয়ে পিছনের পা কোমর থেকে ভাঙা।ঘসটে ঘসটে এখনো পারাপার করে।
– কিরে পায়ের ব্যান্ডেজটা খুলেছিস কেন – বলেই তিনি তাকে আদর করতে লাগলেন।
– ডগি তো আদরে গড়িয়ে পড়ল তার পায়ের কাছে।
– এক মাঝ বয়সী লোক দৌড়ে হাঁফিয়ে ট্রেন ধরলেন। বাড়িতে হয়ত তার কষ্ট ছেলে মেয়ে বুঝবে না।কিম্বা পুরুষত্বের অধিকারী তিনি কাউকে বললেন না।
– একজন যুবক পাথরের ওপর দিয়ে দৌড়ে এসে এতটাই হাঁফিয়েছে,ট্রেনটা ধরার ক্ষমতা হারিয়েছে।রোজ নামচা শুনতে পাই যাত্রাপথে।
– নাগেরবাজারের অটোরিকশায় ছুটে আসে বহু যাত্রী,ক্যান্টনমেন্টে ট্রেন ধরার অপেক্ষায়। কতদূর থেকে ভোরের ট্রেনে আসা।অ,,অ মাসি যাবে নি?আস,,অ আস,,,অ- এভাবে হাঁকডাক।
– সকাল ৮টা কিম্বা নয় টায় ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে প্রচুর ঠিকাদার,মজুর জমায়েত হয়ে কাজের বরাত পায়।ব্যারাকপুর স্টেশনে ঘরে ফেরা শালিক পাখির মতো চিৎকার।কখনো কখনো ঠিকাদার দের মধ্যে হাতাহাতি।
ফেরার পথে লাইনের দুপাশে মাছ সব্জীর ক্রেতা বিক্রেতার দরকষাকষি।
– ঢং ঢং মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি।তারামায়ের উজ্জ্বল মুখ। ধুপ ধুনা গন্ধে অটো স্ট্যান্ড ভরপুর থাকে। দাঁড়িয়ে প্রণাম করার মধ্যে একটা তৃপ্তি।
– ছুটে গিয়ে ট্রেন ধরা, হাঁপাতে হাঁপাতে দমদম স্টেশনে পৌছানো। একটা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মানুষ ছুটছে নানা প্রয়োজনে। অটো স্ট্যান্ডে বিশাল লাইনে সারিবদ্ধ ভিড়। অনেক কষ্টে অটো পাওয়া। সবাই চেষ্টা করেন কে কত আগে পৌঁছাতে পারবেন। নিজের বাড়ির কাছাকাছি শরীরটা অবসন্ন হয়ে পড়ে।
– প্রতিটা বাড়িতে এরপর নানা কাজে লিপ্ত হতে হয়। তারই মাঝে ঝগড়া, অপমান ,মনকষাকষি চলতে থাকে। প্রত্যেকের নানা আবদার, দাবি মেনে নিতে হয়। আবার ভোরে উঠে নিত্যপথযাত্রী হতে হবে।