একটু ভালো লাগা
আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে বলেই কোন মতবিরোধ নেই। ছেলে মেয়েরা বোঝে। অর্ক আজকে একটু আউটিং এ বেরোবো। আগে হঠাৎ করে কেমন আমরা চলে যেতাম বলো। চারচাকা টা নিয়ে, তুমি ড্রাইভ করতে, আর আমি কত গল্প করতাম তোমার পাশে বসে। মাঝেমধ্যে উচ্ছ্বাসটা অনেক বেশি হয়ে যেত। কয়েকবার শান্তিনিকেতনে যাওয়ার সময় গাড়ির মধ্যে বাউলের সুর। কাচের মধ্য দিয়ে দেখতাম গাছেদের হাসিমুখ। হলুদ সাদা গোলাপি বোগেনভেলিয়ায় ভরা বাড়ির পাঁচিল। অপূর্ব রাস্তা, কুচকুচে কালো। দুপাশে সারিবদ্ধ গাছ, নির্জন পরিবেশে আমাদের নিয়ে গাড়ি ছুটত। মাঝেমধ্যে তোমার হাসিটা বেশ জোরালো হত। অর্ক মনে আছে? আমাদের স্করপিও টা ছিল প্রিয়। কোন সময় দূরে যেতে কষ্ট হতো না। হূ হূকরে গাড়ি চলত। তুমি মজা করে বলতে, আজ বোলপুরে সেই হোটেলটাতে ঢুকবো যেখানে কচি পাঁঠার ঝোল পাওয়া যায় । লাঞ্চ সেরে ঢুকতাম শান্তিনিকেতনে। দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যেতাম মিউজিয়াম। কত স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এ এক ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান।
– দেখেছ কত বেলা হয়ে গেল। গল্প করতে গিয়ে খেয়ালই নেই ভাত বসাবো। রান্না সেরে আমরা আজ তাড়াতাড়ি বের হব। ছেলে-মেয়ের ফিরতে অনেক রাত হবে। আজ খুব কাছাকাছি হলেও যাব। ইচ্ছে করছে একটু পানিহাটির গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসতে। বেশ সুন্দর জায়গাটা বলো। পূণ্যভূমিতাইতো জলের দিকে তাকিয়ে কত সময় চলে যায়। শ্রীচৈতন্যদেব, রবীন্দ্রনাথ, সকলের প্রিয় জায়গা পুণ্যভূমি পানিহাটি। সন্ধ্যাবেলায় ওখান থেকে আমার ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না। ঠাকুর মন্দিরের আরতি, ঘণ্টাধ্বনি অপরদিকে নৌকা চলাচল, একপার থেকে আরেক পারে আসাঅপূর্ব জায়গা। আজ তাড়াতাড়ি উঠে আসবে না। কিছুক্ষণ ফিরে পাব আমাদের সেই প্রথম জীবন। অর্ক আজকে চা খাব দুজনে। আমার কয়েকটা কবিতা আজকে শুনবে কিন্তু। যখনই পড়তে যাই তোমার কাজ থাকে। ওখানে নিশ্চয়ই কাজ থাকবে না। আমার নতুন বইটা একটু পড়ে দেখো।
– অর্ক তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, অনেক বেলা হলো।
– একসাথে নেব, তুমিও আজকে একসাথে বসো কথা। তোমাকে একটু মাছের ঝোল দেবো?না থাক। কেন গো? তুমি তো ভালোবাসো।
– বয়স বেড়েছে কথা। এখন যতটা কম পরিমাণে খাওয়া যায়। তুমি বরং আর একটা মাছ নাও। সারাদিন পরিশ্রম করো। কি খাও জানতেও পারিনা। সবাইকে দিয়ে তোমার খেতে অনেক বেলা হয়। কথা আমি একটু ঘরে গেলাম তোমার হয়ে গেলে বলবে। হ্যাঁ যাও। একটু বিশ্রাম করো। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বো।
– এই শুনছো। বেলা হয়ে গেছে ওঠো। সন্ধ্যা নেমে আসবে। আমরা তো আজ আউটিং এ যাব। কিগো শুনছো। হুম।
– কি হুম। উঠে পড়ো। কথা একটু ঘুমাতে দাও সন্ধ্যার সময় তোমাকে ভালো কিছু খাওয়াব। একটু ঘুমিয়ে নিই। তুমি তো আগে এরকম ছিলে না অর্ক। কেমন কুঁড়ে হয়ে গেছ। আজ আমাকে নিয়ে যেতেই হবে।
– উফ বড্ড জ্বালাতন করো কথা।
– আমি আজ শুনবো না অর্ক।
– অগত্যা অর্ক কে বের হতে হল আমাকে নিয়ে। দেখো কেমন লাগছে পরিবেশটা অর্ক। আমি না এলে কথা সত্যি এত সুন্দর পরিবেশ টা মিস করতাম। চলো চা খাবে তো?