মনের গহীনে শুধুই তুমি
সুতপা,আজ তোমার জন্মদিন ,দেখো কেমন বেয়াক্কেল আমি। এখনো মালাটা আনতে যাইনি। সূর্য জানলে কষ্ট পাবে । আজ ৫৪ তম জন্মদিন তোমার। কুড়ি বছরের সদ্যযৌবনা হয়ে আমার বুকে মাথা রেখে ছিলে। তারপর সূর্য আসে। তোমার আঁচলে শুধু সূর্য নয়, আমিও চেনা গন্ধ খুঁজে পেতাম।
– বাপি, তুমি কি বাজারে যাচ্ছ?
– – হ্যাঁ বেটা যাব।কেন, কিছু আনতে হবে?
– – না,সেরকম কিছু নয়।একটা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক আনতে বলতাম। মা আর আমার প্রিয় ছিল।
– ঠিকই বেটা। তোর মায়ের মুখটা আজও আমার সামনে জ্বলজ্বল করে। আমার হাতটা ধরে কী যেন বলতে গিয়েছিল।- বলা হলো না। আজও সেই মুহূর্তটা আমার বুকে তিরের ফলার মতো বিদ্ধ করে।
– হ্যাঁ বাপি,আমার স্কুলে পরীক্ষা থাকলে পড়া মুখস্ত করাতে থাকতো রিক্সায় বসে। মাম্মাকে বড়ো মিস করি।
– মাম্মা,একবার ফিরে এসো।একবার বাবি বলে ডাকো।তোমায় ছেড়ে থাকতে পারছি না মাম্মা।
– – বেটা,অমন করে না। শক্ত হতে হবে। আমাদের পাপের ফল। সুতপার কত গুণ ছিল।জানিস বেটা, তুই কিছু গুণ পেয়েছিস। সবাই বলে তোর মুখের আদলটা মায়ের মতো।
– – বাপি, আমি জানি তুমি বেশি কষ্ট পাও । একটা কথা বলবো তুমি রেগে যাবে না তো?
– – কী কথা বেটা। তোর ওপর কখনো রাগতে পারি? বল বেটা, আমি সব কথাই শুনব।
– তুমি কোনো বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক করো। তোমার মুখের হাসি আমাকে খুব আনন্দ দেবে। চেষ্টা করো ঠিক পারবে। অন্ততঃ তুমি ভালো থাকবে।সিঞ্চিতাকে নিয়ে আমার অনেক সময় কাটে। কিন্তু তুমি যে একা।
– – দূর পাগল।এসব বলতে নেই। সুতপার অবদান কোনদিন ভুলতে পারবোনা। ও আমার ধ্যান জ্ঞান।ওকে অনুভব করে আমি ভালো থাকি।
বাপি ,যে মানুষটা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে তারার দেশে, কখনো তোমার কাছে আসতেপারবে না দেখো না মলি আন্টি তোমাকে খুব ভালোবাসে।যদি,,,,
– – বেটা তুই পাগলামি করিস না।কেউ তোকে ভালোবাসবে না।আমি সেটা সহ্য করি কী করে।
– – বাপি, মলি আন্টি তোমায় খুব ভালোবাসে।
– টিং টং টিং টং।যাই,,ই।ওও আপনি! গৌতম আপনি কেমন আছেন?
– – ভালো আছি ত্রিদিব। অফিস যাওয়ার পথে ভাবলাম সুতপা দিকে একটু শ্রদ্ধা জানিয়ে যাব। তাই এলাম। অনেক দিনের সহকর্মী ছিলেন তো!
– – ভালো করেছেন গৌতম। বসুন, একটু কফি খেয়ে যান।
– – না ত্রিদিব।অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে।
– টিং টং।- আবার কে?বাবি দেখ তো।
– – ওয়াও। মলি আন্টি।এসো এসো।বাপি রুমে আছে।
– – সূ্র্য কেমন আছো ?,তোমাকে উচ্চ পদের জন্য উপযুক্ত হতে হবে।
– হ্যাঁ আন্টি।আমি বিদেশে কিছুদিন প্রয়োজনে যেতে চাই।বাপির জন্য ডিসিসন নিতে পারছি না।
– – চমৎকার ভাবনা। অনেক বড় হও।
– – বাপি তুমি তাড়াতাড়ি যাও ,বাজার উঠে যাবে।
– – হ্যাঁ যাচ্ছি বেটা ।তুমি স্নান করে নাও আমি এসে রান্না বসিয়ে দেবো।
মলি আন্টি বলে উঠলো, সূর্য আজ ভাবছি যে আজ অফিস যাব না । তোমাদের সাথে দুপুরটা থাকবো।
– – সত্যি!খুব মজা হবে মলি আন্টি। তবে সিঞ্চিতা কেও ডেকে নেবে।
ত্রিদিবএকটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল। একটু জোরের সাথে বলল ,না না।কোনো প্রয়োজন নেই ,তুমি অফিস যাও। আমি আর বেটা একটু সুতপাদের বাড়ি যাব। শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। ওদের শোক তো কম নয়! একটু ঘুরে আসব।
– ও! ঠিক আছে তবে আমি চলি। সূর্য অন্যদিন আসবএকথা বলে মলি আন্টি অফিসের পথে রওনা হল।
– – তুমি এভাবে মলি আন্টিকে অপমান করলে কেন বাপি?
– – অপমান! কোথায় অপমান। অফিস যেতে বললাম তো। তোমার দাদু দিদার কাছে যাব তাই।
– – বাপি আমি সব বুঝি ,ওটাকে অপমান করাই বলে। তুমি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এমন আচরণ করলে।
– – সূর্য, মলি আন্টির ছেলে রয়েছে ,আমাদের সংসারে মিলিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় ।আর এও জানি ও তোমাকে সহ্য করতে পারে না।
– – বাপি,তোমার সাথে আর কথা বলবো না। অবশ্য এও জানি অর্ণব খুব হিংসুটে।
– – বেটা আমি তোমাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে চাই। আমি বুঝি তোমার একজন মা সম কাউকে দরকার ।কিন্তু তোমার আমার মধ্যে দূরত্ব আমাকে খুব কষ্ট দেবে, বরং সিঞ্চিতার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলব।আর আমিও পৃথিবী থেকে চলে গেলে তুমি থাকবে কি করে ?
– – ঠিকই বলেছ বাপি। তবে তোমার কষ্টের কথা ভেবে আমি এরকম চিন্তা ভাবনা করেছিলাম। ঠিক আছে তুমি যেটা বলেছো সেটাও সঠিক ।
– তোর জন্য বেঁচে থাকা বেটা ।শুধুমাত্র তোর কথা ভাবতে ভালো লাগে ।মলি আন্টিকে আমি খুব ভালোবাসি ।কিন্তু এমন সম্পর্ক বিরাট ক্ষত তৈরি করবে, যা আমি মেনে নিতে পারব না ।- তবে এ কথা বলতে পারি মলি আন্টিকে আজীবন ভালোবাসবো ,বিপদে থাকবো- আমি তোকে কথা দিলাম।