অন্তরের ফল্গু ধারা
হ্যালো হ্যালো,
ফোনটা কেটে গেল।
সপ্তর্ষি ফোনটা ধরল না।
– ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি সপ্তর্ষি।
– তোমার কাছে হয়তো কিছুই নয়।
– আমি যে দগ্ধ হতে থাকি সপ্তর্ষি।
– একটা বছর আগেও তুমি কত কথা বলতে, আমাকে ভালবাসতে। আমার মনে হতো আমি পৃথিবীতে সব পেয়েছির দেশে এসে পৌঁছেছি। এমন সুন্দর পৃথিবী আমার জন্য অপেক্ষা করছে জানতে পারিনি। আনন্দে মুখের চেহারাটা আমার বদলে গিয়েছিল। তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম। তোমার চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে আমার যেন সব বলা হয়ে যেত।
– আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হয়ত তোমার কিছুই মনে হয়নি। প্রতি সেকেন্ড প্রতি মুহূর্ত তোমাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতাম। এক পলক তোমাকে দেখলেই আমি ভালো থাকতাম সপ্তর্ষি।
– আজ আর তুমি উত্তর দাও না। ফোন করলে ফোন ধরো না। আমিও একজন মানুষ। আমার মধ্যেও ইগোর লড়াই হয়, তবুও সব কিছুকে বিসর্জন দিয়ে দিই। সেসব কথা তোমার মনে দাগ কাটে না সপ্তর্ষি।
– তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে বাঁচতে শেখায়। হাসি মুখে দুঃখ কে সরিয়ে দেবার সাহস যোগায়। আবার কখনো তোমার নিরুত্তাপ আমাকে দগ্ধ করে। চিৎকার করে ওঠে মন। আমরা যে মানুষ চিৎকার করার সাহস আমাদের মানায় না।
– তুমি উপলব্ধি করতে পারোনা সপ্তর্ষি? আমার ভেতরটা প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। কত বন্যা বয়ে যাচ্ছে সে খবর তুমি রাখো না। অশ্রু শুধু চোখের পাতায় নয় সপ্তর্ষি। মনের মধ্যেও অশ্রু ধারা বয়।
– আমার মনে হয় তুমি আমাকে করুণা করছ। আমি যে ভালোবাসার কাঙাল সপ্তর্ষি। কোন অর্থ নয় ,যশ নয় শুধুমাত্র এক বিন্দু ভালোবাসা।একটা প্রাণী আমি। তাই সমস্ত চাহিদাটাই আমার মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
– আজকাল তোমাকে ফোন করতে গেলে ডায়াল করবার আগে আমার বুকটা কাঁপে। অথচ এই ফোনটা আমি কত সহজে করে ফেলতাম। তুমি যদি ফোনটা না ধরো আমি যে অপমানিত হই সেটা তুমি যদি বুঝতে । তার থেকে ফোনটা না করাই শ্রেয় মনে করি।
– মনে হয় দূরে কোন জঙ্গলে প্রবেশ করি। যার খোঁজ এ পৃথিবীর কেউ রাখবে না। মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিজের জগৎ গড়ে তুলি। খুব ইচ্ছে করে জানো সপ্তর্ষি- পৃথিবীর ঐ প্রান্ত রেখায় মাটির ঢিবি হয়ে মরে যেতে চাই।
– জীবনটা বড়ই জটিল। তুমি যাকে বেশি ভালবাসবে ,তার থেকে সবচেয়ে বেশি আঘাত পাবে।
– কতদিন হয়ে গেল, তোমার সাথে কথা বলা হয়নি। গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি পাখিরাও তাদের সঙ্গী পায়। মনের কত কথা বলে। দৈহিক মিলন ঘটে। সেখানে প্রকৃতি খিলখিল করে হাসে। নতুন সংসারে নতুন অতিথি আসে।
– সপ্তর্ষি তোমার কি মনে পড়ে তুমি কি দেখতে পাও প্রকৃতিকে?
– আমার এ কান্না তোমার মনের মধ্যে প্রবেশ করবে না আমি জানি।
– তোমাকে স্পর্শ করতে ইচ্ছা করে সপ্তর্ষি
– একটিবার তোমার হাত দুটো ধরতে ইচ্ছে করে।
– পৃথিবীটাকে আমার সরল করে নিতে ইচ্ছা করে। কেউ কোনো প্রশ্ন করবেনা। শুধুমাত্র আমার একটা পৃথিবী গড়ে উঠবে।
– তুমি যখন এম বি এ পাশ করলে, আমার মনে সব থেকে বেশি উচ্ছ্বাস হয়েছিল। আমার গর্ব তুমি, আমার অহংকার তুমি।
– তোমার পোশাক, তোমার গায়ের প্রতিটি গন্ধ আজও আমাকে নাড়া দেয়। তবুও যেন কত দূরে চলে যাচ্ছ তুমি। ফিরে এসো সপ্তর্ষি। আমার দুই বাহুর মধ্যে তুমি ফিরে এসো।