প্রণয় কথা
প্রিয়া সুন্দরী বললে কিছুই বুঝিয়ে বলা হবে না,অসম্ভব রূপসী সে। পদ্মকলি চোখ, উন্নত ললাট, ধারালো নাসিকা, মরালী গ্রীবা, সুগঠিত বুক, ভারী পশ্চাদ্দেশ, রাজহংসী চলন। একবার দেখলে তার প্রেমে পড়বে না, এমন পুরুষ মানুষ বিরল, তা আঠারো থেকে আটষট্টি পর্যন্ত যে কোন বয়সের এমন কেউ, যার কোন কামনা বাসনা বজায় আছে, হৃদয়ে এখনও।
প্রণয় মিত্র প্রিয়া-প্রেমে পাগল। প্রিয়ার রূপ সমুদ্রে হাবুডু্বু খাচ্ছে। সে তার জন্য সব কিছুই করতে পারে, এমন কি খুন পর্যন্ত। প্রিয়ার কোন অপরাধ তার কাছে অপরাধ বলে গন্য হয় না। প্রিয়ার সব গুন আছে।দুর্বলতার মধ্যে একটি। সে বেশিদিন একজন কাউকে ভালবাসে থাকতে পারে না। কিছুদিন পর পরই নতুন প্রেমে পড়ে। প্রণয় তা নিয়ে কিছু মনে করে না, কারণ প্রিয়ার স্বভাব তার জানা। হঠাৎ প্রিয়া আবার কার প্রেমে পড়ল। প্রণয় জানতে চাইল,” প্রিয়ে এবার কে সে?” লজ্জার ভান করে, প্রিয়া বলল, ও তোমাকে বলা হয়নি, সে একজন কবি।” প্রণয় ভাবল, এ তো সামান্য ব্যাপার। সে নিয়মিত কবিতা চর্চা শুরু করল, নাওয়া খাওয়া ভুলে। কিছুদিনের মধ্যেই কবি হিসাবে
তার নাম ডাক হল। কয়েকটি পুরুস্কারও জুটে গেল, তদারকী করে।
প্রিয়া অবাক, প্রণয় এত বড় কবি! সে প্রণয়ের বুকে মাথা রেখে বলল, তুমি তার চেয়েও বড় কবি, আমি তোমারই। জয়ের আনন্দে প্রণয় সজোরে তাকে বুকে চেপে ধরল।
কিছুদিন সুখেই কাটল।
প্রিয়া আবার প্রেমে পড়ল কার। প্রণয় রাগ করল না, দুঃখ পেলো না মোটেও। সে জানে প্রিয়ার স্বভাব এমনই। প্রণয় বলল, প্রেয়সী এবার কে সে? প্রিয়া গর্ব করে বলল, সে একজন শিল্পি। সেদিন থেকে, প্রণয় একজন বড় শিল্পির কাছে, নিয়মিত যাতায়াত শুরু করল। শিল্প চর্চা শুরু হল তার। অনেক টাকা খরচ করে, রঙ তুলি কাগজ আরও কি কি সব কিনলো। নাওয়া খাওয়া ভুলে শিল্প চর্চা শুরু করল। তারপর একদিন একাডেমিতে প্রদর্শনী করে, সোনার মেডেল পেয়ে,প্রিয়াকে দেখাতে নিয়েএলো। প্রিয়া দেখে, তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আর ভুল হবে না আমার। তুমি আমারই। প্রণয় খুশি হয়ে মেডেলটি তার হাতে তুলে দিল। প্রিয়া একগাল হেসে মেডেলটি নিলো। বলল, তুমি ছাড়া আর কাউকে কোনদিন ভালবাসব না আমি।
– মনে থাকবে? প্রণয় প্রিয়ার কপালে একটা চুমু দিল।
– হুমমমম্ এরপরও দফায় দফায় প্রণয়কে হতে হয়েছে, গায়ক ,নায়ক, ঘোষক আরও কি কি সব।
এরপরও প্রিয়া প্রেমে পড়ল কার যেন, মমনে সুখ নেই, সব সময় গম্ভীর থাকে। তা লক্ষ্য করে প্রণয় তাকে বলল, এবার কে সখি? প্রিয়ার চোখ ছলছল করে উঠল,যেন মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামবে এক্ষুনি। প্রিয়ার কষ্ট প্রণয়কে অস্থির করে তুলল। প্রিয়াকে কন্ঠলগ্ন করে সে বলল, এবার কে সে রূপসী? প্রিয়ার চোখে ব্যথার ভার।সে প্রণয়ের বুকে মাথা রেখে বলল, সে একজন ভাড়াটে খুনি।
– ওহ্, খুনি। এই কথা। হাসতে হাসতে প্রণয় সজোরে প্রিয়ার গলা টিপে ধরল।