উপেক্ষার ভাষা
আমি সাবিনা খাতুন,থাকি ঢাকার এক অভিজাত পল্লীতে। আমার স্বামী সৌধি- আরবে, একটা তেলের কোম্পানীতে চাকরী করে। নব্বুই হাজার টাকা বেতন পায়।বছরে একবার দেশে আসে,মাস খানেক থেকে আবার সে চলে যায়। যখন থাকে তখন আমি আনন্দ জোয়ারে ভাসি। চলে গেলেই আমার জীবনে ভাটার টান আসে।তখন কাটে বিষণ্ণতায়,দিন আর কাটতে চায় না যেন।জীবনটা আলুনি মনে হয় একেবারে।
প্রথম দু’বছর এভাবে কাটাবার পর, সন্ধ্যায় আমি নামী এক ক্লাবে যাওয়া শুরু করি। সেখানে পরিচয় হয় রমণীমোহন চৌধুরী নামে একজন কবির সঙ্গে। মানুষটিকে বেশ ভদ্র ও অমায়িক বলে মনে হয় আমার। সুরসিক,সুন্দর কথা বলে। বেশ কিছুদিন আলাপ পরিচয় ও হৃদ্যতার পর তাকে আমি একদিন আমার বাড়িতে আসার জন্য বলি।
সেদিন সকাল থেকেই টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়,বেলা যত বাড়তে থাকে বৃষ্টির প্রকোপ তত বাড়ে।সন্ধ্যায় তার আসার কথা, সারা শহর তখন জলে জলমগ্ন। আমি ভাবি সে বুঝি আর আসবে না। বৃষ্টির উপর আমার খুব রাগ হয়। হাতের কাছে তাকে পেলে হয়তো চড় চাপড় মেরে বসতাম। এতো রাগ হয় আমার।তার আসার প্রত্যাশা যখন ছেড়ে দিয়েছি,ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেল বেজে উঠল। দরোজা খুলে আমি তাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। এসো এসো বলে আমি তাকে ঘরে এনে বসাই।দেখি তার জামা প্যান্ট সব জলে ভিজে গেছে। আলমারি খুলে আমার স্বামীর একসেট জামা কাপড় পরার জন্য তাকে বের করে দিই। বাথরুম থেকে শুকনো জামা কাপড় পরে সে যখন বেরিয়ে আসে আমি তাকে দেখে অবাক হয়ে যাই। দেখে মনেহয় ঠিক যেন আমার স্বামীই। পোষাক মানুষকে কতটা বদলে দেয়।সেদিন বুঝেছিলাম। আমরা কিছু খাবার আর ড্রিংস নিয়ে বসি। দু’পেগ খাবার পরই কবি বলে, চলো আজ ছাদে গিয়ে আমরা দু’জনে একসঙ্গে ভিজবো। আমার সর্দির ধাত বলে, আমি না না করি, রাজী হই না। কবি তবু আমার বারণ উপেক্ষা করে, একরকম প্রায় জোর করেই সে আমাকে ছাদে নিয়ে যায়। সে আবেগে গান ধরে,
‘ আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে,
জানিনে, আমি জানিনে
সাবিনা ছাড়া আর কিছু জানিনে
আজি ঝর ঝর মুখরও বাদল দিনে…….’
তারপর হঠাৎ সে আচমকা সে আমাকে কাছে টেনে নেয়। আমিও একান্ত ভাবে নিজেকে সঁপে দিই বৃষ্টি মুখর সন্ধ্যার কাছে। তারপর কখন সে আমাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছে আমি টের পাইনি।সকালে তার ফোন পেয়ে আমার ঘুম ভাঙতেই দেখি টেবিলের উপর আমার স্বামীর জামা প্যান্টটা পড়ে আছে, যেটা আমি কাল তাকে পরতে দিয়েছিলাম।
সে বলে, কি ডারলিং কেমন আছো? কোথা থেকে একরাশ লজ্জা এসে আমার মুখ চেপে ধরে। আমি কোন উত্তর দিতে পারি না। ফোনটা আলতো আঙুলের চাপে
কেটে দিই। এরপর আরও কয়েকবার সে ফোন করেছিল, তার নাম দেখে, আমি আর ফোনটা ধরিনি।